বিবাহবার্ষিকীতে শাওনের ‘অশুভ ১৩’
প্রকাশিত : ১৪:০১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৪:০২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭
২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। এই দিনে বিয়ে হয় কুসুম (শাওন) ও হুমায়ূনের। এখন ২০১৭ সাল। আজ ১২ ডিসেম্বর। স্মৃতির ক্যালেন্ডারে তারিখটি ঘুরে এলেও নেই প্রিয় মানুষ, ভালোবাসার মানুষ হুমায়ূন। কিন্তু হৃদয়ের গভীরে রয়ে গেছে মধুর সব স্মৃতি। ১৩ বছর পরে স্মৃতির পাতায় কুসুমের চোখে, মুখে, অনুভুতিতে শূণ্যতা। সেই শূণ্যতার মাঝেও ভালোবাসার কমতি নেই পছন্দের হুমায়ূনের জন্য। তাইতো স্মৃতির পাতা থেকে শাওন ভালোবাসার মধুর অনুভুতিগুলো শেয়ার করলেন সবার সঙ্গে। আজ শাওন-হুমায়ূনের বিবাহবার্ষিকী। দিনটিকে উদ্দেশ্য করে হুমায়ূনপত্নী মেহের আফরোজ শাওন তার ফেসবুকে লিখেছেন দীর্ঘ এ অভিব্যাক্তি।
শাওন তার ফেসবুকে লিখেছেন :
‘অশুভ ১৩...
এই ১৩ সংখ্যাটাই আমার জন্য সবচেয়ে শুভ ... আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির জন্ম ১৩ তারিখ ... আমাদের বিয়ের দিন তারিখও ১৩ হবার কথা ছিল... কিন্তু হঠাৎ করেই হুমায়ূন ভাবলেন একদিন আগেই বিয়ে করবেন... ঠিক করলেন ২০১২ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ (১২/১২/১২) ধুমধাম করে উদযাপন করবেন (বছরে ১৩তম মাস থাকলে হয়তো ১৩/১৩/১৩ উদযাপনের কথা ভাবতেন তিনি) ...
এতোক্ষণে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে যে নানান গল্প ফেঁদে, ইনিয়ে বিনিয়ে আমি বলতে চাচ্ছি ডিসেম্বর ১২ আমাদের বিবাহের তারিখ ... হুম তাই ...
খুব সাদামাটা ভাবেই হওয়ার কথা ছিল আমার বিয়েটা... ভেবেছিলাম কোনরকম একটা শাড়ি পড়ে তিন বার কবুল বলা আর একটা নীল রঙের কাগজে কয়েকটা সাইন...
হুমায়ূন এর বন্ধুরা আছেন তাঁর পাশে.., আর আছেন তাঁর মা... প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের মা (আমার শাশুড়ী মা’র প্রিয় বান্ধবী) যখন তাঁর কাছে বিয়ের খবর জানিয়ে আমাদের জন্য দোয়া চাইতে গেলেন তখন তিনি স্পষ্টভাবে বললেন তাঁর বড়পুত্রের বুদ্ধি এবং দূরদর্শিতার প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে... বড়পুত্র যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন নিশ্চয়ই নিজের ভালো বুঝেশুনেই নিয়েছে... নিজে উপস্থিত না হলেও প্রিয়পুত্রের সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর শুভকামনা সবসময়ই থাকবে...
আমার পরিবারের কেউ আমার সাথে নেই.., এমনকি নেই কোনও বন্ধুও... সবাই ত্যাগ করেছে আমাকে...
ডিসেম্বরের ১১ তারিখ হুমায়ূন আমাকে জোড় করে পাঠালেন নিউমার্কেটে... উদ্দেশ্য একখানা হলুদ শাড়ি কিনে আনা, যেন সন্ধ্যায় আমি হলুদ শাড়ি পড়ে নিজের গায়ে একটু হলুদ মাখি... বললেন- “তোমার নিশ্চয়ই বিয়ে নিয়ে, গায়ে হলুদ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল... আমাকে বিয়ে করার কারনে কোনোটাই পূরণ হচ্ছে না... আমি খুবই লজ্জিত... তারপরও আমি চাই আজ সন্ধ্যায় তুমি হলুদ শাড়ি পড়ে ফুল দিয়ে সাজবে... নিজের জন্য.., তোমার ভবিষ্যত সন্তানের জন্য.., আমার জন্য... আমরা দু’জনে মিলে আজ গায়ে হলুদ করবো...”
আমি একা একা শাড়ি কিনলাম... গাঁদা ফুলের মালা কিনলাম... কি মনে করে একটা লাল পান্জাবীও কিনে ফেললাম...
সন্ধ্যায় নিজে নিজে সাজলাম... বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখে আমার চোখ ফেটে পানি চলে আসলো... চোখ মুছে খোঁপায় কানে গাঁদাফুলের মালা গুঁজলাম... হঠাৎ শুনি বাথরুমের দরজায় ধুমধাম শব্দ... দরজা খুলে বেরিয়ে দেখি ডালা কুলো হাতে মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবী, পাশে ৩ বছরের ছোট্ট অমিয়... একটু দূরে লাল পান্জাবী পড়া হুমায়ূন ঠোঁট টিপে হাসছেন... হই হই করে ঘরে ঢুকলো হুমায়ূনের আরো বন্ধু আর তাদের স্ত্রীরা... তারা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল পাশের রুমে...
চার-পাঁচটা প্রদীপ দিয়ে সাজানো ছোট্ট একটি পাশ... সেখানে হলুদের কি স্নিগ্ধ ছিমছাম আয়োজন..! লেখক মইনুল আহসান সাবের ভাইয়ের স্ত্রী কেয়া ভাবী আর মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবী আমার আর হুমায়ূনের হাতে ‘রাখি’ও পড়িয়ে দিলো... সেকি খুনসুটি..! সে-কি আল্লাদ..! সে এক অন্যরকম গায়ে হলুদ... আরেক ভাবী নামিরা স-ব মেয়েদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিলো... আমার আর হুমায়ূনের দুই গাল কাঁচা হলুদে রাঙা...
আহা... ২০০৪ সালের সেই রাত... আহা ২০১৭ সালের এই রাত...
আজ ১২ ডিসেম্বর... ২০০৪ এর এই দিনে কুসুম আর হুমায়ূন নতুন জীবন শুরু করেছিলো... কুসুম তার জীবনের সবচাইতে শুভ ১৩ বছর পার করে ফেলল... কুসুমকে শুভেচ্ছা... কুসুমের হুমায়ূনকে শুভেচ্ছা ...
এসএ/