একা একা মার্কেটে গিয়ে বিয়ের শাড়ি কিনেছি : শাওন
প্রকাশিত : ১৮:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন জানান, হুমায়ূন আহমেদ অনেকটা জোর করেই তাকে বিয়ের কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে পাঠিয়েছিলেন। তিনি একা একাই মার্কেটে গিয়ে বিয়ের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও ফুল কিনেছেন।
১৩তম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিচারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এসব লিখেন শাওন।
আজ মঙ্গলবার তাদের বিবাহবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন শাওন। বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে পুরানো দিনের কিছু গল্প ফেসবুক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন শাওন। এসব গল্প অনেকেরই অজানা।
শাওন লিখেন, ‘১৩ সংখ্যাটা আমার জন্য সবচেয়ে শুভ। আমার জীবনের প্রিয় মানুষটির জন্ম ১৩ তারিখ। আমাদের বিয়ের তারিখও ১৩ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ হুমায়ূন ভাবলেন, এক দিন আগেই বিয়ে করবেন। আজ ১২ ডিসেম্বর, আমাদের বিয়ের তারিখ। খুব সাদামাটাভাবেই হওয়ার কথা ছিল আমার বিয়েটা। ১১ ডিসেম্বর হুমায়ূন আমাকে জোর করে পাঠালেন নিউমার্কেটে, উদ্দেশ্য একটা হলুদ শাড়ি কিনে আনা, যেন সন্ধ্যায় আমি হলুদ শাড়ি পড়ে নিজের গায়ে একটু হলুদ মাখি। বললেন, ‘তোমার নিশ্চয়ই বিয়ে নিয়ে, গায়ে হলুদ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আমাকে বিয়ে করার কারণে কোনোটাই পূরণ হচ্ছে না। আমি খুবই লজ্জিত। তারপরও আমি চাই, আজ সন্ধ্যায় তুমি হলুদ শাড়ি পরে ফুল দিয়ে সাজবে, নিজের জন্য, তোমার ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য, আমার জন্য। আমরা দুজন মিলে আজ গায়েহলুদ করব। আমি একা একাই শাড়ি কিনেছি। গাঁদা ফুলের মালা কিনেছি। কী মনে করে একটা লাল পাঞ্জাবিও কিনেছি।’
শাওন আরও লিখেছেন, ‘সন্ধ্যায় নিজে নিজে সেজেছি। বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখে আমার চোখ ফেটে পানি চলে আসে। চোখ মুছে খোঁপায়-কানে গাঁদা ফুলের মালা গুঁজেছি। হঠাৎ শুনি দরজায় ধুমধাম শব্দ। দরজা খুলে বেরিয়ে দেখি ডালা-কুলো হাতে মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবি, পাশে তিন বছরের ছোট্ট অমিয়, একটু দূরে লাল পাঞ্জাবি পরে হুমায়ূন ঠোঁট টিপে হাসছেন। হইহই করে ঘরে ঢুকলেন হুমায়ূনের আরও বন্ধু আর তাদের স্ত্রীরা। তারা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যান পাশের রুমে।’
শাওন আরও লিখেছেন, ‘চার-পাঁচটা প্রদীপ দিয়ে সাজানো ছোট্ট একটি রুমের পাশ। সেখানে হলুদের কী স্নিগ্ধ ছিমছাম আয়োজন! লেখক মইনুল আহসান সাবের ভাইয়ের স্ত্রী কেয়া ভাবি আর মাজহার (প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম) ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবি আমার আর হুমায়ূনের হাতে রাখি পরালেন। সে কী খুনসুঁটি! সে কী আহ্লাদ! সে এক অন্য রকম গায়েহলুদ। আরেক ভাবি নামিরা সব মেয়ের হাতে মেহেদি দিয়ে দেন। আমার আর হুমায়ূনের দুই গাল কাঁচা হলুদে রাঙা।’
/ডিডি/ এআর