ঢাকাই চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ
প্রকাশিত : ১২:৪৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৩:৪৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রামাণ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র কম নির্মাণ হয়নি। সিনেমার পাশাপাশি নির্মাণ হয়েছে টেলিভিশন এবং মঞ্চ নাটকও। এ কথা সত্য যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক যা কিছু নির্মাণ হয়েছে তা আমাদের ইতিহাসের সম্পদ হয়ে থাকবে। তবে এই অহংকারের পাশাপাশি দু:খের বিষয় হচ্ছে এ যাবৎ যতোগুলো নির্মাণ আমরা পেয়েছি তা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর অবশ্য বিভিন্ন কারণও রয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশ না থাকা, নির্মাতাদের আগ্রহের অভাব এবং সরকারি অনুদানের অভাবে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী নির্ভর সিনেমা বরাবরই থেকে গেছে অবহেলায়। এমনকি উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোও। যদিও বিগত দিনে নির্মাতারা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যা কিছু নির্মাণ করেছেন এবং দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তা দেশে এবং দেশের বাইরে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিজয়ের এই মাসে দেশিয় চলচ্চিত্রে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন-
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়ে আসছে। এ দেশের সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রগুলো।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এক বছরের মধ্যেই ১৯৭২ সালে মুক্তি পায় চারটি চলচ্চিত্র। এগুলো হলো— চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’ এবং আনন্দের ‘বাঘা বাঙ্গালী’।
১৯৭৪ সালে প্রয়াত পরিচালক নারায়ণ ঘোষমিতা ‘আলোর মিছিল’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। একই বছর চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘সংগ্রাম’ নামে একটি সিনেমা। ‘কার হাসি কে হাসে’ শিরোনামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেন আনন্দ। মোহাম্মদ আলীর পরিচালনায় নির্মিত হয় ‘বাংলার ২৪ বছর নামে’ একটি সিনেমা। ১৯৭৬ সালে হারুন-উর-রশীদ নির্মাণ করেন ‘মেঘের অনেক রঙ’ নামে একটি আলোচিত সিনেমা। ১৯৮১ সালে শহীদুল হক খান ‘কলমীলতা’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। ১৯৮১ সালের পর প্রায় ১২ বছর দেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোনো সিনেমা নির্মিত হয়নি। ১৯৯৩ সালে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শিরোনামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেন হারুন-উর-রশীদ। একই বছর নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্মাণ করেন ‘একাত্তরের যীশু’। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে কাজী হায়াত নির্মাণ করেন ‘সিপাহী’ নামে একটি নতুন সিনেমা। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন তার বহুল আলোচিত সিনেমা ‘আগুনের পরশমনি’। তানভীর মোকাম্মেল নির্মাণ করেন ‘নদীর নাম মধুমতি’। ১৯৯৭ সালে খান আতাউর রহমান ‘এখনো অনেক রাত’ শিরোনামে এবং চাষী নজরুল ইসলাম ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ নামে দুটি সিনেমা নির্মাণ করেন। ১৯৯৮ সালে নাজির উদ্দিন রিজভী ‘৭১ এর লাশ’, ২০০০ সালে শামীম আখতার ‘ইতিহাস কন্যা’, ২০০১ সালে এম সালাউদ্দিন ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা’ ২০০২ সালে শামীম আখতার ‘শিলালিপি’, প্রয়াত তারেক মাসুদ ‘মাটির ময়না’ ২০০৪ সালে তৌফির আহমেদ ‘জয়যাত্রা’ হুমায়ূন আহমেদ ‘শ্যামল ছায়া’ চাষী নজরুল ইসলাম ‘মেঘের পরে মেঘ’, ২০০৬ সালে চাষী নজরুল ইসলাম ‘ধ্রুবতারা’, মোরশেদুল ইসলাম ‘খেলাঘর’, ২০০৭ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘স্পার্টাকাস’, ২০০৮ সালে তানভীর মোকাম্মেল ‘রাবেয়া’, ২০১০ সালে মুশফিকুর রহমান গুলজার ‘নিঝুম অরণ্যে’, ২০১১ সালে মোরশেদুল ইসলাম ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ‘গেরিলা’, রুবাইয়াত হোসেন ‘মেহেরজান’, শাহজাহান চৌধুরী ‘আত্মদান’, আনোয়ার শাহাদাত ‘কারিগর’, ২০১২ সালে বদরুল আলম সৌদ ‘খন্ড গল্প ৭১’, মাসুদ আখন্দ ‘পিতা’, ২০১৩ সালে তানভীর মোকাম্মেল ‘জীবন ঢুলী’, মিজানুর রহমান শামীম ‘৭১ এর গেরিলা’, ২০১৪ সালে মনসুর আলী ‘৭১ এর সংগ্রাম’, জাহিদুর রহিম অঞ্চন ‘মেঘমল্লার’, গোলাম মোস্তফা শিমুল ‘অনুকোশ’, সাদেক সিদ্দিকী ‘হৃদয়ে ৭১’, শাহ আলম কিরণ ‘৭১ এর মা জননী’। একই সঙ্গে ২০১৪ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণ রচিত নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ কবিতা অবলম্বনে মাসুদ পথিক নির্মাণ করেন ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। এ চলচ্চিত্রটিতেও মুক্তিযুদ্ধের চিত্র ফুটে উঠেছে।
২০১৫ সালে মুক্তি পায় সোহেল আরমানের ‘এইতো প্রেম’, মানিক মানবিকের ‘শোভনের স্বাধীনতা’, মোরশেদুল ইসলামের ‘অনীল বাগচীর একদিন’, মান্নান হীরার সিনেমা ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ এবং রিয়াজুল রিজুর ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’।
২০১৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলো হলো- ‘লাল সবুজের সুর’ ও ‘ভূবন মাঝি’। তবে এর বাইরে কিছু সিনেমা নির্মাণ হয়েছে।
এসএ/