ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

তারকালাপে লাক্সতারকা শানু

কবিতার প্রেমে পড়েছি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২০:৩৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন লাক্সতারকা শানারেই দেবী শানু। মাস্টার্স পরীক্ষায় তিনি মেধা তালিকায় জাতীয় পর্যায়ে ৯ম স্থান অধিকার করেন। সাধারণ ভাবেই মেধাবী একজন মানুষের মত প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা অথবা কর্পোরেট তারকা হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু শানু হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। মেধাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে গেলেন শোবিজ তারকা।

ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির নানা শাখায় ছিলো তার অবাধ বিচরণ। নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক, অভিনয়—সবই ছিলো তার নখদর্পণে। তার বাবা এ কে শেয়াম আর মা চন্দ্রাদেবী দুজনই ছিলেন সংস্কৃতিমনা। তাদের উৎসাহেই শানু নিজেকে এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছেন। স্কুল-কলেজে পড়াকালীন সময়ে জাতীয় শিশু সপ্তাহ ও জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদকসহ অনেকগুলো পুরস্কার অর্জন করেন এই মেধাবী তারকা।

২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় পরেছিলেন শানারেই দেবী শানু। এরপর টিভি নাটকে এক যুগেরও অধিক পথ চলা। তবে বরাবরই দেখা গেছে মিডিয়াতে বেছে বেছে কাজ করেন শানু। পথিমধ্যে হুমায়ূন আহমেদের ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’ সিনেমাতে অভিনয়ের কথা থাকলেও সেটি আর হয়ে ওঠেনি। তবে অন্য একটি সিনেমায় অভিনয় করে বড় পর্দায় হাজির হচ্ছেন তিনি। আবু আকতার উল ইমানের পরিচালনায় শানু অভিনিত সিনেমাটির নাম ‘মিস্টার বাংলাদেশ’।

এরই মাঝে বিয়ে করে সংসারজীবনও শুরু করেছেন তিনি। শানু এখন সন্তানের মা। তবে ক্যারিয়ার, সংসার ও সন্তান সামলে নতুন করে ভক্ত ও অনুরাগীদের কাছে ভিন্ন পরিচয়ে উপস্থিত হয়েছেন এই গুণী তারকা। শানারেই দেবী শানু একজন কবি। গত বছর অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘নীল ফড়িং কাব্য’। চলতি বছরেও তার তিনটি কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে।

বর্তমান ব্যস্ততা ও আগামীর ভাবনা প্রসঙ্গে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন শানারেই দেবী শানু। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ


ইটিভি অনলাইন : শুভ সকাল। আপু কেমন আছেন?

শানারেই দেবী শানু : ধন্যবাদ। অনেক ভালো আছি।

ইটিভি অনলাইন : মডেল, অভিনেত্রী, নৃত্য শিল্পী হিসেবেই আমরা আপনাকে চিনি। কিন্তু গত বছর থেকে আপনি নতুন পরিচয়ে সবার সামনে উপস্থিত হয়েছেন। আপনি একজন কবি। কেমন লাগে?

শানারেই দেবী শানু : এই পরিচয়টা আসলে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগার। অনেক বেশি গর্বের। যখন আমি বিভিন্ন সময়ে অভিনেত্রী হিসেবে পরিচয় দেই বা দেওয়া হয় তার পাশাপাশি নতুন করে কবি হিসেবে পরিচিতিটাও পাই। ভিষণ ভালো লাগা কাজ করে।

ইটিভি অনলাইন : কবি হয়ে ওঠার গল্পটা আসলে কি?

শানারেই দেবী শানু : বিভিন্ন সময়ে আমি বলেছি- আমার বাবা একজন কবি। বাবাকে দেখেই তো বড় হয়েছি। এক ধরণের ভালো লাগা, প্রেরণার জায়গা আগে থেকেই ছিলো কবি সত্তার মধ্যে। তবে সেটাকে আমি কখনও চর্চা করিনি। কিন্তু গতবছর থেকে সেই জায়গাটা কেনো যেনো অনেক তীব্র হয়ে ওঠে। সেখান থেকেই একটা দু:সাহস করে ফেললাম। এ ক্ষেত্রে আমি অবশ্যই আমার প্রকাশককে ধন্যবাদ জানাবো। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড, ফলোয়ার, কাছের বন্ধু ও আত্মিয়-স্বজনদের অনুপ্রেরণা কাজে লেগছে। তারাই আমাকে আজকের এই অবস্থানে এনেদিয়েছে।

ইটিভি অনলাইন : কবি হওয়ার গল্পটাতো শুনলাম। বাবা যেহেতু একজন কবি। বাড়িতে সাহিত্য চর্চাটা কেমন হতো? কবিতা কি ছোটবেলা থেকেই লিখতেন?

শানারেই দেবী শানু : একেবারেই ছোট বেলা থেকে লেখালেখির চর্চাটা ছিলো। আমার ছোট ভাইও লেখে। পরিবারের অনেকেই লেখেন। ছোটবেলা থেকেই লেখা লেখির চর্চাটা ছিলো। আমাদের বাসায় সাপ্তাহিক একটা কবিতার বৈঠক হতো। ‘প্রথম দিনের সূর্য’ নামের একটা সংগঠন ছিলো। সেই সংগঠনের সুবাদে প্রায়েই আমাদের বাসায় কবিতার আসর বসতো। ওই সময় যারা নিয়মিত লিখতেন তাদের নিয়েই আড্ডাটা হতো। ঠিক তখন থেকে চেষ্টা করতাম।

একটা গল্প বলি- আগামীকাল আমাদের বাড়িতে কবিতা সন্ধ্যার আসর বসববে। সবার কাছ থেকে একধরণের অনুপ্রেরণা ছিলো যে লিখো, চেষ্টা করো। সেই জায়গা থেকে আমার ভেতরেও ইচ্ছা তৈরি হয় যে- কিছু একটা লিখে দেখি, পারি কিনা। আমার মনে আছে ওই রাতে আমি পরপর আটটি কবিতা লিখেছিলাম। যদিও ওগুলো কবিতা হয়েছে কিনা আমি জানিনা। কিন্তু লিখতে ইচ্ছে হয়েছিলো তাই লিখে ফেললাম। পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি হয়েছে।

আসলে আগে থেকেই চর্চা কম বেশি ছিলো। তবে ওই সময়গুলোর কবিগুলোকে ঠিক কবিতা মনে হতো না। আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি তখন তৈরি হয়নি। কিন্তু গতবছর থেকে ভাবনাগুলো মনে মধ্যে খেলা শুরু করে। পরে যখন ফেসবুকে শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে শুরু করি আমার আশপাশের মানুষগুলোর উৎসাহ, প্রেরণা, গ্রহণযোগ্যতা পাই। এভাবেই হয়ে গেছে। চেষ্টা করছি। দেখি কি হয়।

ইটিভি অনলাইন : এ পর্যন্ত আপনার কয়টি বই প্রকাশ হয়েছে?

শানারেই দেবী শানু : এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে তিনটি কাব্যগ্রন্থ। এর মধ্যে অনন্যা প্রকাশনী থেকে ‘লাল এপিটাফ’, তাম্রলিপি থেকে ‘ত্রিভুজ’ ও চৈতন্য থেকে এসেছে ‘অসময়ের চিরকুট’। গত বছর অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো ৫৮টি কবিতা নিয়ে সাজানো আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নীল ফড়িং কাব্য’।

মূলত আমি কবিতাই লিখি। শুরুর দিকে ফেসবুকে লিখতাম। সেখানে লিখতে লিখতে কবিতার প্রেমে পড়ে গেছি। তবে অনেকেই বলছেন-গল্প, উপন্যাস লিখতে। সামনে পরিকল্পনা আছে।

ইটিভি অনলাইন : আপনার জন্ম সিলেটে মণিপুর সম্প্রদায়ে। মণিপুরী সাহিত্য নিয়ে কোন ভাবনা আছে কি?

শানারেই দেবী শানু : আসলে মণিপুরী সাহিত্যের উপর খুব বেশি দখল আমার নেই। তাই লেখার যোগ্যতা এখনও তৈরি হয়নি। তবে আমার গোপন ও সুপ্ত ইচ্ছা আছে মণিপুরী সাহিত্য নিয়ে কিছু করার। খুব শীঘ্র চর্চাটা শুরু করব এবং এটা নিয়ে কিছু করার পরিকল্পনাও মাথা আছে। আমি চাই আমার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এটাকে সাবর সামনে তুলে ধরতে।

ইটিভি অনলাইন : সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে কি মিডিয়াতে কাজ কমিয়ে দিয়েছেন?

শানারেই দেবী শানু : কাজ আসলে কম করছি বিষয়টা এরকম না। শুরু থেকেই কেনো যেনো আমি অনেক বেশি বেশি কাজ করিনি। অনেকের মত অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে চাইনি কখনও। পরিবার, সংসার, মিডিয়া, লেখালেখি সব কিছু মিলিয়ে কাজের চাপটা আমি এভাবেই রাখার চেষ্টা করি। মিডিয়াতে এমুহুর্তে ব্যস্ততা আছে। বিভিন্ন ধারাবাহিকে কাজ করছি। দুটি ধারাবাহিক অনইয়ারে যাচ্ছে। আরও একটা ধারাবাহিকে কাজ করেছি। তবে অনইয়ারে আসেনি। বিশেষ ধারাবাহিক। বিশেষ এ কারণে বলছি যে অনেক বড় পরিসরের একটা কাজ হয়েছে। এটার নাম ‘সাত ভাই চম্পা’। এটাকে ধারাবাহিকও বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে মেগা টিভি সিরিজ। এটা বলতে পারি যে আমাদের টিভি মিডিয়াতে এখনও পর্যন্ত এত বড় পরিসরে কোন কাজ হয়নি।

তাছাড়া সম্প্রতি একটি সিনেমার কাজ শেষ করলাম। সেটা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম গত দুই তিন মাস। সিনেমাটির নাম ‘মিস্টার বাংলাদেশ’। এটি আমার প্রথম চলচ্চিত্র। লাক্সের পর ছোট ছোট শর্ট ফিল্ম করেছি কিন্তু বড় পর্দায় এবারই প্রথম।

ইটিভি অনলাইন : সিনেমাটি সম্পর্কে একটু জানতে চাই।

শানারেই দেবী শানু : কেএইচকে প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটির নির্দেশনা দিচ্ছেন আবু আকতারুল ইমান। মূল চরিত্রে থাকছেন ‘জাগো’ খ্যাত নির্মাতা খিজির হায়াত খান। কাহিনী ও চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন নির্মাতা খিজির হায়াৎ খান ও হাসনাত পিয়াস। জঙ্গিবিরোধী গল্প নিয়ে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ নির্মিত হয়েছে। দায়বদ্ধতা থেকে কাজটি করেছি। এটাকে বেশ সাহসী পদক্ষেপ বলতে পারেন।

ইটিভি অনলাইন : আপনার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু নাটকের নাম বলুন?

শানারেই দেবী শানু : ওইভাবে তো সবগুলো মনে নেই। তবে শাকুর মজিদের ‘বৈরাগী’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘পলাশ ফুলের গন্ধ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘কবি’, সালাউদ্দিন লাভলুর ‘সাকিন সারিসুরি’, রেজানুর রহমানের ‘আহ ফুটবল বাহ্ ফুটবল’, সাগর জাহানের ‘আরমান ভাই বিরাট টেনশনে’, শিমুল সরকারের ‘চোরকাব্য’, রিপন নবীর ‘আপনঘর’, অরণ্য আনোয়ারের ‘কবিরাজ গোলাপ শাহ’ ও ‘কর্তাকাহিনি’ প্রমুখ।

ইটিভি অনলাইন : মিডিয়ার তারকা হিসেবে অটোগ্রাফ দিতে ভালো লাগে নাকি লেখক-কবি হিসেবে?

শানারেই দেবী শানু : আসলে দুটিই আমার ভালো লাগার জায়গা। মিডিয়াতে আমার একটু পরিচিত ছিলো বলেই কবি হিসেবে সহজে জায়গা করতে পেরেছি। আমার যারা কাছের মানুষ তারা আমার প্রেরণা। অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকদের ভালো লাগাতো আছেই। তবে লেখক হিসেবে যখন কারও সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হই বেশ ভালো লাগে। বিশেষ করে যখন কেউ আমার লেখা দেখে পছন্দ করেন এবং বইটি কিনে নেয় তখন।

ইটিভি অনলাইন : অনেক ভালো লাগলো। শুভ কামনা।

শানারেই দেবী শানু : ধন্যবাদ।

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি