ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

তারকালাপে চয়নিকা চৌধুরী

নারীকে বুদ্ধি, মেধা, ইচ্ছা শক্তি দিয়ে জয় করতে হবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৩, ৮ মার্চ ২০১৮

একজন সৃষ্টিশীল নির্মাতা ও মানুষ তখনই সফল হন যখন পর্দায় তার নামটি না দেখে নির্মাণশৈলী, সংলাপ, রুচিশীল সেট, পাত্রপাত্রীর বাচনভঙ্গি দেখেই দর্শক বলে দিতে পারেন এটি সম্ভবত ওই নির্মাতা বা রচয়িতার নাটক। এসব ক্ষেত্রে বলা যায় তিনি পুরোপুরি সফল। মিডিয়ায় তার সুনাম রয়েছে যে, তিনি একজন স্মার্ট ও রুচিশীল নাট্যনির্মাতা। শুধু নাটক নির্মাণই নয়, নাটক রচনাতেও তিনি সমান পারদর্শী। বলছি দেশের খ্যাতিমান নারী নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর কথা।

নাট্য নির্মাতা হিসেবে মিডিয়াতে তার যাত্রা শুরু ২০০১ সালে। এরপর গত ১৭ বছরে ৩৬০টির মত নাটক নির্মাণ করেছেন এই নারী নাট্য সৈনিক। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য মনকাড়া নাটক। যা মানুষকে কাঁদিয়েছে, বিনোদিত করেছে, ভবিয়েছে। যদিও তার অধিকাংশ নাটকের কাহিনী প্রেম ও ভালোবাসা কেন্দ্রীক। তবে এই রোমান্টিকতাকে তিনি দেখিয়েছেন নানা আঙ্গিকে, নানা মাত্রায়। একজন সফল নারী নাট্যসৈনিক কিভাবে এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন, কতটুকু পরিচ্ছন্ন ও গুছানো হলে একজন নারী সফলতার শীর্ষে অবস্থান করতে পারেন সেই সব কথা জানিয়েছেন তিনি।

একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার নাটক নির্মাণের গল্প, ভাবনা ও ১৭ বছরে নিজের সফলতার নানা বিষয়। চয়নিকা চৌধুরীর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ

ইটিভি অনলাইন : শুরুতেই নারী দিবসের শুভেচ্ছা রইলো। দিদি কেমন আছেন?

চয়নিকা চৌধুরী : ধন্যবাদ। অনেক ভালো আছি। দেশের ও বিশ্বের সকল নারীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।

ইটিভি অনলাইন : দিদি আপনি একজন নারী নাট্যসৈনিক। একজন নারী হয়ে ৩৫০টির অধিক নাটক নির্মাণ করেছেন। কিভাবে সম্ভব হলো? এই অনুপ্রেরণা পেলেন কিভাবে?

চয়নিকা চৌধুরী : অনুপ্রেরণাটা আসলে নিজের থেকেই আসে। নিজের ভেতরের তাগিদ থেকে আসে। নিজের ভালোলাগা থেকে আসে। আমি যদি মনে করি যে, আমি এই কাজটি করব, তাহলে আমি সেটা করি। যত্ন এবং ভালোবাসা যদি মনের মধ্যে থাকে, আন্তরিকতা যদি থাকে তাহলে কোন কিছুই আটকে থাকে না। হয়তো অনেক ঝড় আসে, বিপদ আসে কিন্তু ইচ্ছা শক্তিটা যদি প্রখর হয় তাহলে একটা মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধ্য।

ইটিভি অনলাইন : ২০১৮ সালের মধ্যে কি ৪০০ নাটকের মাইল ফলকে পদার্পণ করতে পারবেন?

চয়নিকা চৌধুরী : না না। এতো তো সহজ না। আসলে মার্কিনটা আমার কাছে বড় কিছু না। এটা আসলে হয়ে এসেছে। আমি অনেক ডিসিপ্লিন। গুছিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। তবে আমার মার্ক থাকে যে কবে কোথায় কোন কাজটি করলাম। এটা থাকা ভালো। ৪০০ আসলে অনেক বড় ব্যাপার। এখন আমার ৩৬০টি নাটক হলো। আরও ৪০টি নাটক মনে হচ্ছে না এ বছর করতে পারবো।

ইটিভি অনলাইন : আমরা আপনার নাটকে প্রেম, ভালোবাসা, রোমান্টিকতাই বেশি দেখি। আপনার নির্মাণের মধ্যে ঘুরে ফিরে কেন এগুলোই বেশি আসে?

চয়নিকা চৌধুরী : আসলে দুনিয়াতে ভালোবাসা ছাড়া কোন কিছুই হয় না। ভালোবাসাটা আসলে অনেক বেশি প্রয়োজন। তবে আমি যে শুধু রোমান্টিক নাটক বানিয়েছি তা কিন্তু নয়, এই নারী দিবসেও আমার দুটি নাটক যাচ্ছে। আমি বিজয় দিবস, ২৬শে মার্চ, বাবা দিবস, মা দিবসেও নাটক করেছি। হয়তো রোমান্টিক নাটকটা আমার ক্ষেত্রে একটু বেশি ভালো হয়। একই সঙ্গে দর্শকও হয়তো আমাকে রোমান্টিক নাটকের নির্মাতা হিসেবে বেশি পছন্দ করে। আর ভালোবাসাটা আমার কাছে সব থেকে বড়। এটা ছাড়া আসলে কোন কিছুই সম্ভব না।

ইটিভি অনলাইন : অনেকেই নাটক নির্মাণ করছেন। বিশেষ করে আমাদের দেশে অনেক পুরুষ নির্মাতা রয়েছেন। কিন্তু দেখা গেছে একজন নারী হয়েও আপনার কাজের মান অনেক পুরুষ নির্মাতার চেয়েও ভালো হচ্ছে। দর্শকই এটি মূল্যায়ন করছেন? আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

চয়নিকা চৌধুরী : ওই যে বললাম, ইচ্ছা। মনের ইচ্ছা, যত্ন, ভালোবাসা এগুলো আসলে অনেক প্রয়োজন। হয়তো আমি মেয়ে তাই আমার মধ্যে গোছানো জিনিসটা বেশি থাকে। অথবা ম্যাচিং, কেয়ারিং এবং অ্যাকটিং সবই গুরুত্ব পায়। হয়তো পুরুষ নির্মাতারা ভাবেন যে কখন কাজটি শেষ করবেন। সে তার নির্মাণটাই শুধু দেখছেন, শিল্পীর অভিনয়টাই শুধু দেখছে। অন্যকিছু হয়তো তার কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে দর্শক এখন অনেক বেশি বুদ্ধিমান। তাদের সব কিছুই দরকার। এটাই হচ্ছে কারণ।

ইটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন নারী শিক্ষিত হয়েও ঘরে মধ্যে বন্দি থাকতে বাধ্য হয়। তবে সেই চিন্তা ধারায় এখন অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। সংসার সামলানোর পরেও নারী এখন বাইরে অনেক সফল হচ্ছে। নারী কিভাবে নিজেকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে পারে বলে আপনার কাছে মনে হয়?

চয়নিকা চৌধুরী : এটাও আসলে মনের ইচ্ছা। অনেকে আছেন যারা ৯টা ৫টা কাজ করেন কিন্তু এর বাইরে অন্য কিছুই করেন না। আমি কিন্তু এখনও এই ১৭ বছরের ক্যারিয়ার জীবনে সকালে রান্না করেই বের হই। যখন দেশে থাকি না তখনকার কথা ভিন্ন। কিন্তু রান্নাটা আমি নিজ হাতেই করি। বাসায় যারা আছে তারা হয়তো সব গুছিয়ে দেয় কিন্তু নিজ হাতে রান্না করতেই আমি পছন্দ করি। কে কখন খাচ্ছে, কি করছে সব কিছুই কিন্তু আমাকে দেখতে হয়। এটা দেখাটাও দরকার। এটাওতো আমার একটা কাজ। ভালোবেসে, আনন্দ নিয়ে দুইটাই যখন আমি সমান তালে করতে পারবো তখনই আসলে একটা মেয়ে সার্থক।

ইটিভি অনলাইন : নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করতে গেলে অনেক বাধা, প্রতিবন্ধকতা আসে। কিন্তু সব কিছু মোকাবেলা করে কিভাবে সে এগিয়ে যেতে পারবে। আমার ম্যাসেজ কি?

চয়নিকা চৌধুরী : কাজ করতে গেলে নারী-পুরুষ সবারই বাঁধা আসে। নারীদের ক্ষেত্রে হয়তো একটু বেশি আসে। যেহেতু সৃষ্টিকর্তা তাদের নারী করে বানিয়েছেন। ওটা নারীকে বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে, তাদের ইচ্ছা শক্তি দিয়ে একটাকে মোকাবেলা করতে হবে।

ইটিভি অনলাইন : আমরা তো আপনার নির্মাণে অনেক সুন্দর সুন্দর নাটক, টেলিফিল্ম দেখেছি। শুনেছি চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়েও ভাবছেন। সেই সু সংবাদটি কবে আসবে?

চয়নিকা চৌধুরী : ইচ্ছে আছে অনেক সুন্দর একটি সিনেমা নির্মাণ করবো। যে সিনেমা দেখে মানুষ মুগ্ধ হবে। চোখের জল ফেলবে খুশিতে বা আনন্দে অথবা কষ্টে। একই সঙ্গে বাসায় যেতে যোত ভাববে আবারও সিনেমাটি দেখবো। এমন একটি সিনেমা বানানোর খুব ইচ্ছে আছে। এখন দেখি কি হয়।

ইটিভি অনলাইন : আমরা কি ২০১৮ সালেই সেই সিনেমাটি দেখতে পারবো?

চয়নিকা চৌধুরী : মনে হচ্ছে। তবে আমার এই ইচ্ছেটার সঙ্গে তো আরও অনেক কিছু জড়িত।

ইটিভি অনলাইন : সব শেষ প্রশ্ন। আপনি এখন ক্যারিয়ারের যেখানে অবস্থান করছেন, আগামীতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

চয়নিকা চৌধুরী : আমি একজন সফল মা হিসেবে নিজেকে দেখতে ভালোবাসি। আমার দুই সন্তান। ওরা খুব ভালো কিছু করবে। যোগ্য মানুষ হবে। মানুষ হিসেবে ভালো হবে। এটাই আমার কাছে বড় চাওয়া। আমি দেখতে চাই আমি একজন ভালো নির্মাতা। আমার সিনেমাটি অনেক ভালো হয়েছে। সুপার-ডুপার হিট হয়েছে। আর পৃথিবীতে যত বাংলা ভাষাভাষি মানুষ রয়েছেন তারা চয়নিকা চৌধুরীর নামটি জানুক। এই জানাটি যেনো আরও বৃদ্ধি পায় সেটাই চাই।

ইটিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

চয়নিকা চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ।

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি