করণজিৎ কৌরই কি আসল সানি লিওন?
প্রকাশিত : ১০:২৩, ২৪ আগস্ট ২০১৮
সানি লিওনের জীবনীর ওপরে নির্ভর করে তৈরী ওয়েব-সিরিজ ‘করণজিৎ কৌর’-এর ট্রেলারে একটা দৃশ্য আছে, যেখানে এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করছেন, ‘একজন যৌনকর্মী এবং একজন পর্ণস্টারের মধ্যে ফারাকটা ঠিক কী?’
উত্তরে সানি লিওন বলছেন, ‘একটাই মিল দুজনের - গাটস।’
ট্রেলারের ওই দৃশ্যটা, যেখানে সাংবাদিক একজন পর্ণস্টারের সঙ্গে একজন যৌনকর্মীর ফারাক জানতে চেয়েছিলেন, সেই অংশটা শ্যুট করা বেশ কঠিন ছিল সানির পক্ষে।
তিনি বলছিলেন, ‘প্রশ্নটা খুব খারাপ। কিন্তু ওই অংশটা বাদ দিতে চাই নি আমি। কারণ এই প্রশ্নটা তো সাধারণ মানুষের মধ্যে আছেই! আমিও জবাবটা দিতে চেয়েছিলাম।’
সানি লিওনের নাম গত পাঁচ বছর ধরে ভারতে সবথেকে বেশী গুগল করা হয়েছে। মানুষ তাকে দেখতে চান, তার সম্বন্ধে জানতে চান। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই তার সম্বন্ধে আগে থেকেই একটা মতামত তৈরী করে রেখেছেন নিজের মনে।
সানিও মনে করেন যে তার সম্বন্ধে মানুষ যেটা মনে করে, সেটার কারণ তিনি নিজেই।
তিনি বলেন, ‘আমার চিন্তা-ভাবনা আর জীবন নিয়ে আমি নিজের কাছে একদম পরিষ্কার। কিন্তু মানুষ আমাকে সবসময়েই আমার ছেড়ে আসা জীবন, ছেড়ে আসা পেশার সঙ্গে এক করে দেখতে চায়। এটা তাদের ভুল নয়। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজেও বদলে গেছি। আশা করব এই বদলে যাওয়া মানুষটাকে সবাই বুঝতে পারবেন।
বলিউডের ‘আইটেম নাম্বার’ নামে পরিচিত যে নাচ-গানের চরিত্রগুলো থাকে, সেসবে বেশ কিছুদিন অভিনয় করার পরে এখন সানি সিনেমায় চরিত্রাভিনেতা হিসাবেও কাজ করছেন।
সানি লিওনের আসল নাম করণজিৎ কৌর। এই নামটা ব্যবহার করায় শিখ ধর্মের শীর্ষ সংগঠন শিরোমণি গুরুদোয়ারা প্রবন্ধক কমিটি আপত্তি তুলেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল ‘কৌর’ পদবীটা শিখ ধর্মে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সানির মতো একজন ব্যক্তি, যিনি পর্ণ ফিল্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তার জীবনী নিয়ে তৈরী ওয়েব সিরিজে ওই পদবী ব্যবহার করা অনুচিত।
সানির কাছে যখন এই প্রসঙ্গটা তোলা হয়, তখন তিনি বলেন, ‘এই নামটাই তো তার পাসপোর্টে রয়েছে! বাবা-মায়ের দেওয়া নাম এটা। ওটাই তো আমার আসল নাম। কাজের ক্ষেত্রে সানি লিওনি নামটা ব্যবহার করি।’
পর্ণ ফিল্মে কাজের জন্য কখনই লজ্জিত মনে করেন নি সানি।
ভারতে ব্যক্তি পরিসরে পর্ণ ফিল্ম দেখা বেআইনী নয়, তবে এধরণের ভিডিও বা ছবি তৈরী করা বা শেয়ার করা আইন বিরুদ্ধ। পৃথিবীর সবথেকে বড় পর্ণ ওয়েবসাইট ‘পর্ণহাব’ এর তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা, ব্রিটেন আর কানাডার পরেই ভারতেই সবথেকে বেশী পর্ণ দেখা হয়ে থাকে।
সানিকে প্রশ্ন করা হয়, ‘ভারতেও কি আইনসম্মতভাবে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠা উচিত?’
সানি জবাব দিলেন, ‘এটা তো আমি ঠিক করব না। ভারত সরকার আর এখানকার মানুষ যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই হবে!’
একটি মেয়েকে তিনি দত্তক নিয়েছেন, আর সারোগেসির মাধ্যমে তার দুই ছেলে হয়েছে। তিনি মনে করেন যে তার সন্তানরা অনেক উঁচুতে উঠুক, এমনকি মঙ্গলগ্রহে যাক তারা, এটাও চান। তবে নিজের ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত কখনই ছেলেমেয়েদের ওপরে চাপিয়ে দিতে চান না তিনি। যেরকমটা তার বাবা-মা-ও অখুশি ছিলেন পর্ণ ফিল্মে তার কাজ করা নিয়ে। কিন্তু কখনই তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ সানির ওপরে চাপিয়ে দেন নি।
যদিও তিনি নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিজেই নিয়েছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে যে ধারণাটা তৈরী হয়ে গেছে, সেটাকে নিয়ে জীবন কাটানো যে বেশ কঠিন!
তবে, প্রথমেই যে ‘গাটস্’ বা হিম্মতের কথা লিখেছিলাম, শেষ প্রশ্নের উত্তরটাও সেই হিম্মতের সঙ্গেই দিলেন তিনি।
বললেন, ‘ওই বিষয়টা নিয়ে এখনও ভাবি নি। মা হওয়ার একটা স্বপ্ন ছিল বহুদিন ধরে। এখন সেই মাতৃত্বের স্বাদ নিচ্ছি প্রাণভরে। যখন সময় আসবে তখন নিশ্চই নিজের ব্যাপারে সত্যটাই তুলে ধরব বাচ্চাদের কাছে।
সূত্র : বিবিসি
এসএ/