কখনো হার মানতে শিখিনি: ফারজানা বিথী
প্রকাশিত : ১১:৪১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৩৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
তরুণ প্রজন্মের কাছে পছন্দের উপস্থাপিকা ফারজানা বিথী। বর্তমানে একজন ফ্যাশন সচেতন উপস্থাপিকা হিসেবেও তার রয়েছে বেশ সুনাম।
মায়ের ইচ্ছেতে ২০০৪ সালে এটিএন বাংলার শিশুতোষ অনুষ্ঠান "শাপলা শালুক"-এর মাধ্যমে পথচলা শুরু তার। এরপর ২০১০ সালে একুশে টেলিভিশনে শিশু বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকা হিসেবে তার প্রথম কাজ শুরু।
একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং নিজের কর্মের মাধ্যমে স্বদেশকে বিশ্বের দরবারে মেলে ধরবার তার ইচ্ছা।
স্বাধীন কোনো পেশায় কাজ করার স্বপ্ন থাকলেও তাতে দাঁড়ি পড়েছে। সময়ে ‘ইউটিলাইজ’ আর মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে যোগ দিয়েছেন শোবিজ অঙ্গনে। স্বপ্ন দেখছেন ভিন্ন কিছু করার। হাঁটি হাঁটি পা পা করে শোবিজে শক্ত অবস্থান তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইনের মুখোমুখি হন তরুণ এ উপস্থাপিকা। ক্যারিয়ার ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
কেমন আছেন?
জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ।
শোবিজে কাজ করার স্বপ্ন কি ছোট বেলাতেই ছিল?
একদমই না।! আম্মুর খুব সখ ছিলো আমি মিডিয়াতে কাজ করি। সেই জন্য, নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন এসব আলটিমেটলি আমার কিছু ভালো লাগতো না। আম্মু তখন জোর করতেন, তাই বাধ্য হয়ে শেখা। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরা বলতো- আমি সবকিছুতেই পারদর্শী, আমি পারবো।
শোবিজে আসলেন কীভাবে?
আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলাম তখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশনের জন্য চেষ্টা করি। ওইসময় কলেজ যেতে হতো না। তখন বাসায় থাকতাম অ্যাডমিশনের পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু ফ্রি টাইম পেতাম। তখন সময় কাটানোর জন্য টেলিভিশন দেখতাম। একদিন হঠাৎ করে একটি বেসরকারি চ্যানেলের একজন উপস্থাপিকাকে দেখছিলাম একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। তখন আমার দেখে মনে হলো ওই জায়গায় আমি হলে হয়তো তার থেকেও ভাল কিছু দেখাতে পারতাম।
আমি অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হলাম। তখন আমার মনে হলো যে, হ্যাঁ আমি একজন উপস্থাপিকা হবো। কারণ- ওইদিন ওই অনুষ্ঠানটা দেখার পর একজন ভাল উপস্থাপিকা হবার প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো। আর আমি যখন স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করতাম তখন আমার শিক্ষকরা আমাকে দিয়ে স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলো উপস্থাপনা করাতেন। শিক্ষকরা বলতেন ফারজানা বিথি তুমি ভালো করতে পারবে। তোমাকে ছাড়া হবেই না!
এরপর হঠাৎ একদিন একুশে টেলিভিশনের একজন প্রোগ্রাম প্রোডিউসার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। একটি টেকনোলজি ভিত্তিক প্রোগ্রামের উপস্থাপনা করার জন্য। যেহেতু আমার ইচ্ছা ছিলো সমসাময়িক উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ কারার তাই সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। ওই অনুষ্ঠানটির ৩০টি পর্ব হয়েছিলো, সব পর্ব গুলোতেই উপস্থাপিকা হিসেবে আমি কাজ করেছি। এরপর যমুনা টেলিভিশনে ৩ বছর কাজ করেছি। বর্তমানে এখন বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন পার্টটাইম উপস্থাপনার কাজ করছি।
আর হ্যাঁ, আমি আসলে উপস্থাপিকা হাওয়ার জন্য কোথাও কোন ধরনের কোর্স বা ট্রেনিং কিছুই করিনি। আমার মনে হয় এটা একটা আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা এবং রহমত বলতে পারেন।
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
ব্যস্ততা বলতে আমি এখন তিনটি চ্যানেলে লাইভ প্রোগ্রামে উপস্থাপনা করছি। নিউজ টোয়েন্টিফোর, এসএটিভি, এনটিভি এরমধ্যে একটি হলো নিউজ টোয়েন্টিফোর -এর ‘শুভ সকাল বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠান। এনটিভিতে ‘মিউজিক অ্যান্ড রিদম’। এছাড়াও আরজে হিসেবে কাজ করছি ঢাকা এফএম ৯০.৪-তে।
উপস্থাপনা থেকে অনেকেই অভিনয় করছেন, এমন কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?
হ্যাঁ, অনেকেই এখন অন্য পেশার পাশাপাশি উপস্থাপনা করছেন। তবে উপস্থাপিকা হিসেবে ফারজানা বিথি নামটা শুনতে আমার বেশি ভালো লাগে। এখানে অভিনয় করবো না বা নায়িকা হব না এমনটাও না। আমি চাই শুধু উপস্থাপিকা হিসেবে দর্শক আমাকে চিনুক।
যদি আমার ব্যাটে-বলে মিলে যায়, খুব ভালো একটা গল্প বা আমার সঙ্গে যেটা যাবে এমন টাইপের গল্প পেলে অবশ্যই আমি অভিনয় করবো। কারণ আমার মতো একজন উপস্থাপিকার-উপস্থাপনা থেকে অভিনয় টাই বেশি করতে হয়। বিশেষ করে যখন আমার মন ভালো না, আমার পরিবার কেও অসুস্থ বা আমার নিজের শরীরটা খারাপ তার ১ঘন্টা পরে আমার একটা লাইভ প্রোগ্রাম, সেখানে গিয়ে কিন্তু আমি দর্শকদের বলতে পারিনা যে আমার মন ভালো নেই বা ‘আমি অসুস্থ’ আপনারা কিছু মনে করবেন না।
হাজারো বাঁধা থাকলেও অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় হাসি মুখেই কিন্তু সেটা শেষ করতে হয়। আমার জীবনে এটাও একটা অভিনয়। তাই আমি মনে করি- একজন উপস্থাপিকার অভিনয় করার গুণ অবশ্যই থাকা দরকার। তা না হলে সে ভালভাবে উপস্থাপনাই করতে পারবে না।
শোবিজ অঙ্গনে কখনও বিব্রতকর কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন?
আমার এখন পর্যন্ত কোন বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে আমার আজকের যতটুকু অবস্থান তৈরি হয়েছে মিডিয়াতে তার জন্য আমাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কঠিন সময় কে পিছনে ফেলে সামনে দিকে এগুতে হয়েছে। আমি কখনও জীবনের কাছে হার মানতে শিখিনি। জীবনে বাঁধা, ঝড় তো আসবেই। সেই ঝড়কে যে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে সেই তো জীবন যুদ্ধের প্রকৃত সৈনিক। হ্যাঁ, এটি সত্য ভালো-মন্দ সব পেশায় রয়েছে।
আপনার আইডল কে?
শোবিজে আসলে আমার কোন আইডল নেই। আমি মনে করি, একজন উপস্থাপকের নিজস্বতা থাকাটা খুবই জরুরি। সবাই নিজের জায়গায় ভালো করেন। তবে আমার পছন্দের উপস্থাপিকা নাবিলা আপু।
পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের দেশের উপস্থাপকরা কী শব্দ দূষণের চর্চা করেন বলে মনে করেন?
যে দেশের প্যাটার্ন যেরকম, তাই ওরা প্রমিত বাংলা চর্চা করে। আমি আমাদের দেশের অন্যান্য উপস্থাপকের কথা বলব না, আমি আমার প্রসঙ্গে যদি বলি-তাহলে আমি বলবো যে উপস্থাপনা এমন জিনিস যেখানে সহজ ভাষার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দর্শকের সামনে কোন কিছু মেলে ধরা উচিত। সেক্ষেত্রে যদি আমাকে বাংলা-ইংরেজি ভাষা মিশ্রণ করে দর্শককে বোঝাতে হয়, যেটা সহজে দর্শকের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পাবে তাহলে সেভাবেই একজন উপস্থাপকের উপস্থাপনা করা উচিৎ।
আমরা যারা এখন উপস্থাপনা করছি বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে যে বাংলা ভাষার অবহেলা করছি বা অবজ্ঞা করছি এইরকম না। জিনিসটা হলো, কীভাবে একটা জিনিসকে দর্শককের আছে সহজ ভাবে পৌঁছানো যায়। উপস্থাপনা হলো এক ধরনের ‘টিচিং আর্ট’ যেটা আপনি মানুষের কাছে খুবই সহজে পোঁছানোর একটা প্রক্রিয়া বলতে পারেন।
ক্যারিয়ার হিসেবে ‘উপস্থাপনা’ কতটা সময়োপযোগী?
আমি বলবো, বর্তমানে আমাদের প্রজন্মে ভালো উপস্থাপক-উপস্থাপিকার বেশ অভাব। কারণ, বেশিরভাগ সময় দেখা যাচ্ছে কেউ নাটকের দিকে ঝুঁকছেন, কেউ মডেল দিকে ঝুঁকছেন, কেউবা অন্য পেশায়। সেক্ষেত্রে উপস্থাপনায় খুবই কম। পুরোদস্তুর উপস্থাপনাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো মানুষ আমি খুবই কম দেখি।
যারা মনে করেন যে আমি একজন ভালো উপস্থাপক হতে পারবো। আমার মধ্যে সেই যোগ্যতা আছে, আমি বলবো অবশ্যই তাদের উপস্থাপনায় আসা উচিত। দেখা যাচ্ছে, অনেকে আসলে প্রতিযোগীতা বেশি হবে কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরা আরো ভালো কাজ পারবো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, কেউ গান করছেন, কেউ নাটক করছেন, কেউ অভিনয় করছেন, কেউ সিনেমায় স্টার হয়ে গেছেন তাদেরকে নিয়ে এসে উপস্থাপনায় বসিয়ে দেওয়া আমি কখনোই যৌক্তিক মনে করি না। এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে যারা আসলে সত্যিকার অর্থেই উপস্থাপক-উপস্থাপিকা হতে চান তাদেরকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
এমন তো নয় যারা উপস্থাপনা করতে আসেন তারা জ্ঞানহীন, তাদের মেধা নেই। সেজন্য স্টারদের দিয়ে করাতে হবে। তাদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত। তাদের প্রতিভা দেখানোর জন্য। যদি তারা কাজই না করতে পারে তাহলে তাদের প্রতিভা দেখাবে কীভাবে।
আগামীতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বাংলাদেশের একটা ব্র্যান্ড হয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করতে চাই। ফারজানা বিথী একজন উপস্থাপিকা। এই নামটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই নিজের কাজের যোগ্যতার মাধ্যমে।
এসি