ঢাকা, শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্যাংককে আমজাদ হোসেনের চিকিৎসা শুরু হয়েছে   

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৭, ২৮ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২০:৫৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও লেখক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন। এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আছেন দুই ছেলে সোহেল আরমান ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল।     

আজ (বুধবার) সকাল থেকেই তাঁর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। হাসপাতালটির নিউরোসার্জন ডা. টিরা ট্যাংভিরিয়াপাইবুনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের।  

এর আগে ঢাকা থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয় আমজাদ হোসেনকে। রাত দুইটায় থাইল্যান্ড পৌঁছানোর পরই দ্রুত ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। আমজাদ হোসেন হাসপাতালটির পাঁচ তলার ৫৩০ নম্বর কেবিনে নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন।

আমাজাদ হোসেনের চিকিৎসার সম্পর্কে ডা. টিরা ট্যাংভিরিয়াপাইবুন জানিয়েছেন, ‘আমজাদ হোসেনের কিডনিতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে শুরুতেই কিডনির চিকিৎসা শুরু করেছেন তারা। ফুসফুসেও ইনফেকশন ধরা পড়েছে আমজাদ হোসেনের। এই জটিলতা কেটে গেলেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত চিকিৎসা শুরু হবে।’

এরইমধ্যে সিটি স্ক্যান করা হয়েছে আমজাদ হোসেনের।  

তাঁর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল বলেন, ‘হাসপাতালে পৌঁছানোর পরই ডাক্তাররা আমাদের বলেছেন, আরও আগে নিয়ে আসলে ভালো হতো। বাবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে কিছুতেই তারা হাল ছাড়ছেন না। তারা আশার বাণীও শোনালেন আমাদের।’

মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

আমজাদ হোসেনের আরেক ছেলে সোহেল আরমান গণমাধ্যমকে  জানান, ‘মঙ্গলবার সাড়ে ১১ টার দিকে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল আসেন। তাকে পর্যবেক্ষণ করেন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া যাবে কি না? এরপর ব্যাংককের ডাক্তাররা তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। তাকে সেখানকার বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, তিনি গত ১৮ নভেম্বর নিজ বাসভবনে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর তাকে রাজধানীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তে রাখা হয়েছিল। সেখানে তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার তাঁর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমজাদ হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, তিনি ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে তিনি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

তিনি কালজয়ী কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তাঁর মধ্যে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ও ‘গোলাপী এখন বিলেতে’।

১৯৮১ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বরেণ্য এই নির্মাতা। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকে ভূষিত হন। গুণী এই পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।  

এ ছাড়া শিশুসাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দু’বার অগ্রণী শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরেণ্য এই নির্মাতার অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পরলে তাঁর উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৪২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অনুদান  দেওয়া হয়।

কেআই/এসি  

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি