১২ বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ফারিয়া
প্রকাশিত : ১১:০৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮
মডেল-অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। যদিও তিনি ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী, তবে সম্প্রতি ‘দেবী’ সিনেমার মধ্য দিয়ে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন। সাফল্য যখন তার হাতের মুঠোয় ঠিক তখন ফারিয়া জানালেন এক ভয়াবহ ঘটনা। একবার-দুবার নয়, ১২ বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিজের ফেসবুকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
ফেসবুকে শবনম ফারিয়া লিখেছেন-
শুনতে খুব সহজ শোনালেও যে বিষয়টার মধ্য দিয়ে যায় সেই জানে এইটা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন কতটা কঠিন!
আমার প্রথম ডিপ্রেসন শুরু হয় ২০১৫ সালে একটা ‘সামান্য’ ব্রেক-আপ এর পর পর! যদিও এখন সামান্য বলছি, তখন বিষয়টা মোটেও সামান্য ছিল না!
সে সময় আমি কিংবা আমার পরিবার বুঝতে পারেনি যে, আমার সেই অস্বাভাবিক আচরণ, রুমের মধ্যে নিজেকে বন্ধ করে রাখা, সারাক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে শেয়ার না করে ফেসবুকে সংবেদনশীল কথাবার্তা লিখে ফেলা, রাতের পর রাত ঘুম না হওয়ায় শুটিংয়ের সেট এ খিটখিটে মেজাজে থাকা ডিপ্রেশনেরই একটা বহিঃপ্রকাশ! সেই ডিপ্রেশন প্রায় ছয় মাসের মতো ছিল, আমার বাবা-মার চেষ্টায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়!
দ্বিতীয়বার আত্মহত্যার কারণ হিসেবে তিনি আরও লিখেছেন-
দ্বিতীয়বার আবার বুঝি, বাবা চলে যাওয়ার পর! যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিল, আর আমার বাবাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন শুধু তারাই জানে আমার বাবা আর আমার বন্ধুত্বের পরিধি। বাবার মৃত্যুর পর আমার মনে হলো, আমার আসলে কেউ নেই, মার কিছু হলে আমার কি হবে! কিন্তু ততদিনের আমার মা এবং আমি দুজনই বুঝে গেছি যে আমি ডিপ্রেশনে। আমার মা অনেকটা জোড় করেই আমাকে বাবা চলে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই কাজে পাঠায়! তখন যেটা হলো, কাজে থাকলে আমি সব ভুলে যাই, যেহেতু আমার পেশাটাই অদ্ভুত একটা পেশা, যে সেট এ ঢুকলেই আমরা অন্য কেউ হয়ে যেতে পারি! কিন্তু বাসায় ফিরলে সেই একই অনুভুতি!
কিন্তু আমার মা কিন্তু আর সেই রিস্ক নেয়নি, আমাকে “ক্লিনিকেল সাইকোলজিস্ট” এর কাছে পাঠান এবং ২/৩ বার কথা বলার পরেই আমার ডিপ্রেশন সেবারের মতো চলে যায়।
তিনি আরও লেখেন-
এখন কথা হলো একথা কেন লেখা! কারণ ‘সেই প্রথমবারের’ ছয় মাস ডিপ্রেশড থাকা অবস্থায় কম করেও অন্তত ১২ বার আমি সুইসাইডের কথা ভেবেছি! ঘুমের ঔষধের পাতা হাতে নিয়ে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করেছি। সেসময় আমি যদি চলে যেতাম, তাহলে কি আজকে আমি শবনম ফারিয়া হতে পারতাম? আপনারা আমাকে চিনতেন? অজানা এতো মানুষের ভালবাসা পেতাম? একজন মানুষের ভালবাসা পাইনি বলে এত এত ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হতাম?
আর এখন যে মানুষটি আমার হাতটা ধরেছে, আমার সব স্বপ্নের সঙ্গী, তাকেই বা পেতাম কোথায়? অন্তত তার সাথে অকারণেই ঝগড়াগুলো কিভাবে করতাম? জীবনকে সুযোগ দিতে হয়, ভুল করতে হয়, ধাক্কা খেতে হয়। নয়তো তুমি যখন অনেক বড় কেউ হবে, তোমার বায়োপিকে কি লিখবা? এসব ঘটনা না থাকলে তো বোরিং হয়ে যাবে।
সঞ্জয় দত্ত এমন অঘটন না ঘটালে আমরা ‘সানজুর’ মত অস্বাধারণ সিনেমা কোথায় পেতাম! কিংবা বাবার চলে যাওয়ার পর যদি কিছু করতাম, তাহলে আমার মার কি হতো একবার ভাবতে পারেন। আমার মার পৃথিবী আমাকে ঘিরে, আমার কিছু হলে তার কি হতো!
প্রত্যেক বাবা-মার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তার সন্তান। তবে একেক জনের প্রকাশভঙ্গি একেক রকম। কেউ আদর করে কপালে চুমু দিয়ে বলে, ‘বাবা হোমওয়ার্ক টা করতে যাও’ আবার কেউ চিৎকার দিয়ে বলে ‘কুত্তার বাচ্চা, এখনো পড়তে বসলি না? কিন্তু দুজনের মোটিভ কিন্তু একই।
আমার মা যেমন নামাজ নিয়ে কিঞ্চিত যন্ত্রণা দেয়। যখন মুড ভাল থাকে ‘বাবা নামাজটা পরো, সব সমস্যার সমাধান এইটা, বাবার কথা মনে পড়লে নামাজে বলো, আল্লাহ্ বাবার কাছে তোমার মনের কথা পৌঁছে দিবে।’
আর মেজাজ খারাপ থাকলে ‘পশ্চিম দিকে তো আছাড়ও খাও না, তোমার সমস্যা হবে না কে তো কার হবে’। কিন্তু ভেবে দেখেন সে আমার ভাল চায় বলেই এমনটা বলে। এই অত্যাচারের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক ভালবাসা।
যাই হোক, যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালানো খুব সহজ। কিন্তু যুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন। কিন্তু যদি কষ্ট করে একবার তুমি জিতে যাও, সারা পৃথিবী তোমাকে মনে রাখবে। কিন্তু যদি পালাও, মানুষ ৪০ দিন মনে রাখবে তাও কাপুরুষ হিসেবে।
তুমি যদি মুসলিম হও, তোমার কোন জানাজা হবে না। তুমি ভাবতে পারো এটা তোমার পরিবারের জন্য কত অসম্মানের, কতটা কষ্টের?
রাজধানীর ভিকারুন নূন নেসা স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার বিষয়ে শবনম ফারিয়া লিখেছেন-
অরিত্রী নামের মেয়েটাকে যদি টিসি দেয়া হতো, তাহলে কি এমন হতো? বাবা-মা একটু বকা দিত! পাশের বাসার আন্টি দুই চারটা কথা বলতো। কিন্তু অরিত্রী যদি অন্য স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ভাল রেজাল্ট করতো, কেউ কোনদিন এই ঘটনা মনেও রাখতো না। এই যে ওর ক্লাস টিচারকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে, উনি কি কারো মেয়ে না? কারো মা না? তাদের অসম্মান হচ্ছে না? এই যে প্রিন্সিপাল কে খ/ম বর্গিও গালি দিচ্ছে, শাড়ি ধরে টানছে, সে কি কারো মেয়ে না? তার অসম্মান হচ্ছে না? তবে হ্যাঁ, কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এইটা একটা শিক্ষাও বটে!
লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়ে যায়। শিক্ষা জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু এইটাই সব না। সবার A+ পাওয়াটা ফরজ কিছু না। কিছু হলে বাবা-মা ডেকে এনে অপমান এই কালচার এই উপমহাদেশ ছাড়া আর কোথাও নেই। একটা ক্লাস নাইনের বাচ্চা যদি নকল করে (ধরে নিলাম করেছে) সেইটার দ্বায়ভার তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিতে হবে। তারা লাস্ট ১০ বছরে কি মোরাল শিক্ষা দিয়েছে? বরং বাবা-মা উলটো ক্লেইম করবে আপনাদের মতো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমার বাচ্চাকে কি শিখালো যে সে নকলের করার মতো একটা অন্যায় করতে পারলো।
তিনি আরও লেখেন-
আমি যখন কলেজে পড়তাম। আমি নিজেও মোবাইল ক্যারি করায় ক্লাস টিচার র জি এম স্যার এর কাছে ধরা পড়ি। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ যথেষ্ট কড়া থাকায়, ৭ দিন পর গার্জিয়ান কল করে, তাদের বুঝিয়ে বলেন, যেন আমাকে আর কলেজে ক্যারি করতে না দেয়। সেখানে কাউকে ছোট করার চেয়ে জরুরি ছিল, আমার জন্য কোনটা ভাল তা নিশ্চিত করা। আমার বাবা-মার মতো আমার শিক্ষকরাও যে আমাকে নিয়ে কনসার্ন তা বোঝানো।
আর বাবা মায়েরও সন্তানদের পরিবর্তনগুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত। মানসিক যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রেও শারিরীক সমস্যার মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। এটা কোনো লজ্জার কিংবা লুকানোর কিছু না। এবং শিক্ষা আপনার সন্তানদের ভবিষ্যৎ এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার মানসিক সুস্থতার চেয়ে বেশি নয়।
এসএ/