ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘লালজমিন’ নাটকের ২০০তম মঞ্চায়ন

প্রকাশিত : ১৫:৩১, ১৮ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ২৩:০৩, ৩ মার্চ ২০২১

মোমেনা চৌধুরীর একক অভিনয়ের নাটক ‘লালজমিন’ পৌছে গেল ২০০তম মঞ্চায়নের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের উদ্যোগে রাজধানীর বিএটিসি অডিটরিয়ামে ১৯ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘লালজমিন’ নাটকটির ২০০তম মঞ্চায়ন হবে বলে জানিয়েছেন মোমেনা চৌধুরী।

শুন্যন রোপার্টরি থিয়েটারের প্রথম প্রযোজনা ‘লালজমিন’ নাটকটি রচনা করেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত নাট্যকার মান্নান হীরা। আর নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ প্রতিভাবান নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী। এই নাটকে অভিনয়গুণে বিশেষ খ্যাতি অর্জণ করেছেন মোমেনা চৌধুরী।

মোমেনা চৌধুরী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সে দীর্ঘ ২৫বছর কর্মরত ছিলেন। তাই মোমেনা চৌধুরীর এই বিশাল অর্জনকে সেলিব্রেট করতে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স ‘লালজমিন’ নাটকের ২০০তম মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

‘লালজমিন’ নাটকের ২০০তম মঞ্চায়নের অনুভূতিতে অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী বলেন, আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া ‘লালজমিন’। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার অভিনীত নাটক ‘লালজমিন’ ২০০তম প্রদর্শনী আমার কাছে অপার্থিব আনন্দের। এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই নাট্যকার মান্নান হীরা, নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী, মঞ্চায়ন সহযোগিতার জন্য জুলফিকার চঞ্চল, রাজু নভেরা, নীলা, আতিক, জয়, সাকিব, জুয়েল, সানি, মেহেদী, নিথর মাহবুব, মামুন, জিহাদ, সাজিদ, বাসার, মাহবুবকে। যাদের সহযোগিতায় ‘লালজমিন’ ২০০তম প্রদর্শনীর দ্বারপ্রান্তে তাদের প্রতি আমার অনেক অনেক ভালবাসা। ২০০তম মঞ্চায়নের এ আয়োজনে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন সবাইকে জানাই রক্তিম শুভেচ্ছা।

‘লালজমিন’ নাটকটির গল্প মুক্তিযুদ্ধের একটি খণ্ডচিত্রের বয়ান। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন কিশোরীর অংশগ্রহণ, গল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ভয়াবহতা, মেয়েটির ত্যাগ- সবশেষে স্বাধীনতা অর্জন দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় ‘লালজমিন’।

‘লালজমিন’ কিশোরীর রক্তরাঙা অভিজ্ঞতার মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর এক নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্য প্রকাশ। ‘লালজমিন’ নাটকের গল্প তেরো পেরিয়ে চৌদ্দ বছর ছুঁই ছুঁই এক কিশোরী কন্যার। কিশোরীর দু’চোখ জুড়ে মানিক বিলের আটক লাল পদ্মের জন্য প্রেম। সে কৈশোরেই শোনে বাবা-মায়ের মধ্যরাতের গুঞ্জন। শুধু দুটি শব্দ কিশোরীর মস্তকে আর মনে জেগে রয়, মুক্তি-স্বাধীনতা। ওই বয়সে কিশোরী এক ছায়ার কাছ থেকে প্রেম পায়। বাবা যুদ্ধে চলে যায়।

অগোচরে কিশোরী নানা কৌশলে যুদ্ধে যাওয়ার আয়োজন করে, সশস্ত্র যুদ্ধ। কিন্তু বয়স তাকে অনুমোদন দেয় না। এক পর্যায়ে কিশোরীর সেই ছায়া প্রেম সম্মুখে দাঁড়ায়। সে তার সেনাপতিকে চিনতে পারে। তারপর যুদ্ধযাত্রা। লক্ষ্যে পৌঁছবার আগেই পুরুষ যোদ্ধারা কেউ শহীদ হোন, কেউ নদীর জলে হারিয়ে যান। পাঁচ যুবতীসহ যুদ্ধযাত্রী এই কিশোরীর জীবনে ঘটে নানা অভিজ্ঞতা। চৌদ্দ বছরের কিশোরীর ধবধবে সাদাজমিন যুদ্ধকালীন নয় মাসে রক্তরাঙা হয়ে ওঠে।
‘লালজমিন’ কিশোরীর রক্তরাঙা অভিজ্ঞতার মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর এক নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্য প্রকাশ। দেশের বরেণ্য নাট্যাভিনেত্রী

মোমেনা চৌধুরীর প্রাণবন্ত অভিনয় নাটকটি নিমিষেই দর্শকদের আকৃষ্ট করে। চরিত্রানুযায়ী কণ্ঠের সূক্ষ্ম কাজ যেমন দেখিয়েছেন তেমনি নাচ এবং কোরিওগ্রাফিতে নিজেকে মিলিয়ে দিয়েছেন গল্পের বুনুনিতে। নাটকের পোশাক সেট আলো সবই যেন মোমেনা চৌধুরীকে নিয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ে। মঞ্চে মোমেনা চৌধুরী যেন হয়ে ওঠেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দলিল।

‘লালজমিন’ নাটকের পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ওয়াহিদা মল্লিক। সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন জুলফিকার চঞ্চল ও রামিজ রাজু। সঙ্গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বারী সিদ্দিকী, রামিজ রাজু ও নীলা সাহা। মঞ্চায়নের নেপথ্য কারিগররা হলেন আতিকুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, মীর্জা শাকিব, মোসাম্মৎ মমতাজ, জুয়েল মিজি, তানভীর সানি ও নিথর মাহবুব।

অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরীর অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালে ‘বগুড়া থিয়েটার’-এ যোগদানের মধ্য দিয়ে। দলের একটি নাটকের রিহার্সেল চলাকালীন সে বছরই তার চাকরী হয়ে যায় গাজীপুরের ‘টাঁকশাল’-এ। চাকরিকালীন সেখানে তিনি ‘অবশিষ্ট মঞ্চায়ন পরিষদ’র সাথে যুক্ত হন। সেই দলের হয়ে ‘প্রত্যাশিত প্রলাপ’ নাটকের তিনটি প্রদর্শনীতে অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। এর পরপরই তিনি ‘আরণ্যক’ নাট্যদলের সাথে যুক্ত হন ১৯৯০ সালে। ‘ইবলিশ’ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মোমেনার আরন্যক যাত্রা। এরপর থেকে আজ অবধি এই দলেরই হয়ে আছেন। ‘আরণ্যক’র হয়ে মোমেনা অভিনয় করেছেন ‘সংক্রান্তি’, ‘ময়ূর সিংহাসন’, ‘এবং বিদ্যাসাগর’, ‘প্রাকৃত জনকথা’ ইত্যাদি নাটকে। তবে তার অভিনয় জীবনের সেরা অর্জনের একটি ‘লালজমিন’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটম-লে ২০১১ সালের ১৯ মে শুন্যন রেপার্টরি থিয়েটারের প্রথম প্রযোজনা ‘লালজমিন’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয়।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি