ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল: ডেমি মুর

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত : ১৮:২৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৯:২৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

‘১৫ বছর বয়সে নিজের মায়ের পরিচিত একজনের কাছে ধর্ষিতা হয়েছিলেন। আবার যে লোক ধর্ষণ করেছিল সেই লোকের কাছেই ৫০০ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিল সেই মা।’ নিজের সম্পর্কে এই কথাগুলো বলেছেন এক সময়ের সারা জাগানো মার্কিন অভিনেত্রী ডেমি মুর।

৫৬ বছর বয়সে এসে নিজের অপ্রকাশিত স্মৃতিকথা নিয়ে ‘ইনসাইড আউট’ গ্রন্থে এমনই বিস্ফোরক বক্তব্য তুলে ধরেছেন ডেমি। শুধু তাই নয়, স্মৃতিকথার বইয়ে তার জীবনের হতাশা, আনন্দ, বিচ্ছেদ, হারিয়ে যাওয়া- প্রায় সবই খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন ডেমি মুর। স্মৃতিকথা প্রকাশের আগে এবিসি টেলিভিশন শো ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’য় এসে সে কথা শুনিয়েছেনও দর্শকদের।

এই শোয়ের উপস্থাপিকা ডায়ান সয়ারের কাছে ডেমি জানিয়েছেন, মা যে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল সেই কথাটি বলেছিল অভিযুক্ত ওই ধর্ষক নিজেই। ধর্ষণের পর ডেমিকে প্রশ্নও করেছিল, ৫০০ ডলারের বিনিময়ে নিজের মায়ের জন্য যৌনকর্মী হয়ে কেমন লাগছে? 

এ নিয়ে স্মৃতিকথায় ডেমি লিখেছেন, ‘সেটা যেমন ধর্ষণ ছিল, তেমন বিধ্বস্ত করে দেওয়া বিশ্বাসঘাতকতাও ছিল। আর ওই লোকটার নিষ্ঠুর প্রশ্নে তা ধরা পড়েছিল।’

ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে ডেমি জানিয়েছেন, তাঁর মা-বাবা দু’জনেই মদ্যপ ছিলেন। সেই সঙ্গে মানসিক সমস্যাতেও ভুগছিলেন তাঁরা। ডেমির দাবি, কিশোরী অবস্থাতেই মা তাঁকে বিভিন্ন পানশালায় নিয়ে যেতেন, যাতে পুরুষের নেকনজরে পড়েন। 

নিজের পাশাপাশি মায়ের জীবনের অজানা দিকও তুলে ধরেছেন ডেমি। তাঁর যখন ১২ বছর বয়স, তখন প্রথম বার তাঁর মা ভার্জিনিয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে ডেমির চেষ্টাতেই নাকি বেঁচে যান তিনি। ‘ইনসাইড আউট’-এ সে কথাও শুনিয়েছেন ডেমি। 

৫৬ বছরের অভিনেত্রী লিখেছেন, আমার মনে পড়ে, নিজের ছোট্ট আঙুলগুলো মায়ের গলায় ঢুকিয়ে দিয়ে ট্যাবলেটগুলো বার করে এনেছিলাম, যেগুলো মা গিলে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এমনটা সেই প্রথম বার নয়, এর পরেও ঘটেছিল। নিজেকে বার বার শেষ করে দিতে চেয়েছেন ভার্জিনিয়া। ডেমি বলেন, “আমার ছোটবেলাটা সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।”

ছোটবেলার ভয়ঙ্কর দিনগুলো কোন ছায়া ফেলেনি ডেমি মুরের অভিনয় জীবনে। নিজের কেরিয়ারে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন। যার শুরুটা হয়েছিল গত শতকের আশির দশক থেকে। সে সময় থেকেই নাম ছড়াতে থাকে ডেমির। ‘ব্লেম ইট অন রিও’, ‘সেন্ট এলমোস ফায়ার’ বা ‘অ্যাবাউট লাস্ট নাইট... ’-এর মতো ফিল্মে নজর কাড়েন তিনি। 

নব্বই দশকে তো হলিউডের সবচেয়ে বেশি সেরা অভিনেত্রীর তকমাও জোটে। প্যাট্রিক সোয়েজির বিপরীতে রোম্যান্টিক থ্রিলার ‘গোস্ট’ ডেমিকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয়। এর পরের কয়েক বছরে তাঁকে দেখা যায় ‘ফিউ গুড মেন’, ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’, ‘ডিসক্লোজার’-এর মতো একের এক ব্লকবাস্টার ফিল্মে।

ডেমি জানিয়েছেন, কিশোরী বয়সেই মা-বাবার মতো মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনিও। সে বয়সেই এক সময় জানতে পারেন, যাকে এত দিন বাবা বলে জানতেন, সেই ড্যান গাইনেস আসলে তাঁর জন্মদাতা নন। হাইস্কুলের পড়া ছেড়ে, নিজের বাড়ি ছেড়ে এর পর কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন ডেমি। ফিল্মে অডিশন দিতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে মডেলিংয়ের পাশাপাশি ড্রামা স্কুলে অভিনয়ও শিখতে শুরু করেন।

ডেমির নামের পাশে যে মুর শব্দটি যোগ হয়েছে, তা আসলে স্বামীর থেকে পাওয়া। ১৭তম জন্মদিনের তিন দিন আগে দেখা হয় ফ্রেডি মুরের সঙ্গে। পরে যাকে জীবনসঙ্গী হিসাবে নিয়েছিলেন। তবে সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। এর পর ডেমির জীবনে এসেছেন ব্রুস উইলিসের মতো তারকা। 

এই তারকার সঙ্গে তেরো বছরের সম্পর্কের ছেদ পড়ে ২০০০ সালে। পাঁচ বছর পর বিয়ে করেন নিজের থেকে ১৫ বছরের ছোট অ্যাশটন কুচারকে। কিন্তু তাও ভেঙে গিয়েছে ২০১৩-তে। ডেমি স্মৃতিকথায় লিখেছেন, অ্যাশটন কুচারের সঙ্গে ডেটিং করার সময় এক বার গর্ভপাতও হয় তাঁর। কুচার অন্য নারীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াতেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।

এ সময় মাদকাকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। ওজনও বেড়ে যায়। অন্যদিকে মেয়েরা তাঁর সঙ্গে কথাবার্তাও বন্ধ করে দেয়। মানসিক অবস্থাও একেবারে তলানিতে এসে যায়। যার ফলে অতিরিক্ত মাদক সেবনে দিকে ধাবিত হতে থাকেন। এ অবস্থায় একটি পার্টিতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শেষে রিহ্যাবে থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে।

স্মৃতিকথায় নিজের জীবনের এই অজানা কথাগুলো প্রকাশ করার কারণও বলে দিয়েছেন ডেমি মুর। তিনি বইতে লিখেছেন, দুটি কারণে এ কথাগুলো বলতে চেয়েছি। প্রথমত, এটা আমার কাহিনী। দ্বিতীয়ত, এটা আমার কাহিনী হলেও এর কিছুটা অংশ বোধহয় আপনাদেরও গল্প।

এএইচ/এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি