ঢাকা, রবিবার   ০৯ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কোভিড-১৯ অভিনয় শিল্পের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

কোভিড-১৯ থমকে দিয়েছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। নাটক সিনেমার যে চরিত্রগুলো আমাদের হাসায়-কাঁদায়, যাদের নিপুণ অভিনয় কলায় আমরা চলে যাই অন্য কোন ভূবনে। করোনার নতুন বাস্তবতায়, এই কঠিন সময়ে তাদের জীবনের গল্পগুলো কেমন ছিল?

এই প্রসঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘কোভিড অভিনয় শিল্পীদের জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। একজন চিত্রগ্রাহক, পরিচালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পিপিই পরে কাজ করার সুযোগ আছে কিন্তু যিনি অভিনয় করেন তাঁর এই সুযোগটি নেই। তাই তাঁর ঝুঁকি অনেক বেশি।’

একটা অভিনয় শিল্পকে কেন্দ্র করে অন্য আরো পেশা গড়ে ওঠে যেমন লাইটম্যান, প্রোডাকশন বয়, কস্টিউম, সেট তাঁদের কাজের পরিধি বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাৎ বলেন, ‘এখন খুব সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে। খুব জরুরী কিছু যেগুলো আটকে ছিল অথবা জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনের কাজ এসব হচ্ছে। সেখানে যত কম সংখ্যক লোককে আনা যায় সেটি করা হচ্ছে। যেমন- আগে যেখানে আট জন লাইটম্যান থাকতেন এখন সেখানে চারজন থাকছেন। প্রোডাকশন বয় যেখানে দুই জন থাকতেন সেখানে একজন কাজ করছেন। এতে একটা বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পরছেন। যা আসলে শঙ্কাজনক।’

লোক সমাগম কমাতে গল্পের চরিত্র কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। প্রধান চরিত্রগুলোর বাইরে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বাদ দেয়া হচ্ছে। এতেও অনেকে কর্মহীন হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পৃথিবীর স্বাভাবিকতা ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই, বলেন শাহাদাৎ হোসেন।

অপরদিকে করোনাকালীন সময়ে অভিনয় সংক্রান্ত অনেক অনলাইন ক্লাস হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের অনেক সাড়া পাওয়া গেছে। ঐ ক্লাসগুলোতে শুধুমাত্র শারীরিক দুরত্ব ছিল কিন্তু মানসিক উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল বলে মনে করেন অভিনেতা মো. শাহাদাৎ হোসেন।

করোনাকালীন অভিনয় শিল্পীদের বিষয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ।’ এই সংগঠনের সভাপতি প্রথিতযশা অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘তাঁদের সংগঠনে প্রায় ১২০০ সদস্য আছে, যার মধ্যে ৪০০ সদস্য কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত সদস্যদের হাসপাতাল সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে। যাদের প্রয়োজন এমন শিল্পীদের এখন পর্যন্ত চার বার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই সহায়তা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি বিশেষ মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে একজন শিল্পী তাঁর সমস্যা জানাতে পারেন। পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে করা হয়েছে, যেন পীড়িত শিল্পী তাঁর প্রয়োজন প্রকাশ করতে কোন কুন্ঠা বোধ না করেন।’

এই সময়ে প্রয়োজনীয় তহবিল গঠনে সাহায্য করেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, স্বচ্ছল শিল্পীবৃন্দ, দেশের বাইরে থাকা শিল্পীবৃন্দ, মিনা বাজার, স্বপ্ন এবং একটি টিভি চ্যানেল তাদের একটি বড় স্পন্সর শীপ শিল্পীদের সহায়তায় দিয়েছেন, বলেন শহীদুজ্জামান সেলিম।

অভিনেতা ও ডাবিং ডিরেক্টর তাপস মৃধা বলেন, ‘অন্য সব পেশার মতো করোনাকালীন বেশ কিছুদিন টিভি চ্যানেলের কাজ বন্ধ ছিল। পরে বাসায় বসেই কাজ শুরু করি। ক্লায়েন্টকে অনলাইনে ভয়েস স্যাম্পল, ক্লোজড ভিডিও শট পাঠাই। এভাবেই ছোট পরিসরে কাজ করেছি। তবে, এখন সতর্কতার সাথে চ্যানেলগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে।

করোনাকালীন কাজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তাপস বলেন, ‘করোনার শুরুতে গ্রামে চলে যাই। সেই সময় বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে ফোর-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রামে থেকেই সবার সাথে অনলাইনে মিটিং, রিহার্সাল এবং অডিও/ভিডিও’র কিছু কাজ করলাম।’

যেহেতু, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে অভিনয় সম্ভব নয়, তাই, শ্যুটিং বন্ধ থাকাকালীন সেই সব শিল্পী ও কলাকুশলী, যাদের একমাত্র আয়ের মাধ্যম এই অভিনয় শিল্প তাঁরা খুবই কষ্টে ছিলেন। কারণ, এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য কেউ তৈরী ছিলেন না’, বলেন তাপস।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি