ধর্মানুভূতিতে আঘাত, তিশার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ
প্রকাশিত : ১৮:৪৭, ১২ অক্টোবর ২০২০
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা
ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১২ অক্টোবর) জনৈক লিটন কৃষ্ণদাসের পক্ষে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন তার আইনজীবী সুমন কুমার রায়।
সম্প্রতি একটি নাটকের মাধ্যমে সনাতনী সম্প্রদায়কে কটাক্ষ এবং ধর্মান্তরকরণ ও সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয়ার অভিযোগ ওঠে অভিনেত্রী তিশা ও তার একটি নাটকের সহ-অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজকের বিরুদ্ধে। মূলত এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এই আইনি নোটিশ।
এ বিষয়ে আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন- দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্মিত ‘বিজয়া’ নামের নাটকে সনাতনী সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। সেজন্য এ নাটকের অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ, রচনাকারী সালেহ উদ্দীন সোয়েব চৌধুরী ও পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ ভূঁইয়াকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে আইনজীবী সুমন উল্লেখ করেছেন, ‘আমার মক্কেল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, আপনি শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ‘বিজয়া’ নামে একটি নাটক নির্মাণ করেছেন। ওই নাটকের ট্রায়াল ভার্সন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ সনাতনী সম্প্রদায় অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে নাটকটি দেখার জন্য ব্যাকুল হয়েছিল।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নাটকটি পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায় যে- এ নাটকটিতে সুক্ষ্ম ও তিক্ষ্মভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের চরিত্র হনন করা হয়েছে এবং সনাতন পুরুষদের মদ্যপ, নিষ্ঠুর আচরণকারী, অক্ষম ও উদাসীন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যার মাধ্যমে অত্যন্ত সুক্ষ্ম ও পরিকল্পিতভাবে পরকীয়া ও ধর্মান্তরকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্মিত ‘বিজয়া’ নাটকটির ট্রায়াল ভার্সন ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যা সারা বিশ্বের বিনোদনপ্রেমীদের নিকট থেকে সমালোচিত হয়েছে। ‘বিজয়া’ নাটকটির ট্রায়াল ভার্সন পর্যবেক্ষণ করে সারা বিশ্বের কোটি কোটি সনাতন ধর্মাবলম্বী চরমভাবে হতাশ, মারাত্মক মর্মাহত আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারই ব্যাপক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এ বিতর্কিত নাটকটি সনাতনী সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে সুপরিকল্পিতভাবে আঘাত করেছে। নাটকটিতে সম্প্রদায়িক মনোভাব স্পষ্ট। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে এ নাটকটি ট্রায়াল ভার্সন প্রত্যাহার ও নাটকটি সর্বমহলে বয়কটের দাবি উঠেছে।’
স্বজ্ঞানে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়ার মানসে ও সনাতন ধর্ম অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজসে পরিকল্পিতভাবে এ বিতর্কিত নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় নোটিশে।
আইনজীবী সুমন বলেন, ‘নাটকটির ট্রায়াল ভার্সন সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার মক্কেল ও লক্ষ লক্ষ সনাতন ধর্মাবলম্বীর মতো মর্মাহত ও হতভম্ব, হতবাক ও আহত হয়েছেন। নির্মিত এই নাটকটি সম্প্রদায়িকতা সৃষ্টিসহ অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নাটকটি বর্তমান আকারে ও প্রকারে যদি প্রচারিত হয়, তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমার মক্কেল লক্ষ লক্ষ সনাতন সম্প্রদায়ের পক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন।’
নোটিশটি প্রাপ্তির ৭ দিনের (১২ অক্টোবর থেকে শুরু) মধ্যে সনাতন সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ ও সনাতন ধর্ম অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিতর্কিত ‘বিজয়া’ নাটকটি প্রত্যাহার করতে নোটিশে উল্লেখিত অভিযুক্তদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে দেশে প্রচলিত যে কোনও দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
এদিকে এ বিষয়ে ‘বিজয়া’ নাটকের পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ জানান, তার খালু মারা গেছেন। সেজন্য তিনি আজ ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। কোনো রকম আইনি নোটিশ তিনি পাননি।
এদিকে, ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ টেলিভিশন নাটক ‘বিজয়া’ নির্মাণ করায় নির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদ, গল্পকার শোয়েব চৌধুরী ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে মন্দিরে নিয়ে বলি দেয়ার হুমকি দিয়েছে অরূপ বণিকসহ বেশ কজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। এছাড়াও নানা অশালীন মন্তব্য করে তাদেরকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে একটি চক্র।
এনএস/