ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বৃন্দাবনের জন্মদিনে খুশির আবেগঘন স্ট্যাটাস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১০:০৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

নাট্যকার ও অভিনেতা বৃন্দাবন দাসের জন্মদিন আজ। জনপ্রিয় এই তারকার জন্মদিনে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার স্ত্রী অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। প্রিয় মানুষটির জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া ওই স্ট্যাটাসে খুশি দুজনের পথ চলার ফেলে আসা স্মৃতিচারণ করেছেন।

তিনি লিখেছেন- ‘শুভ জন্মদিন বৃন্দাবন।

তোমাকে কিছু বলবার জন্য থামলেই রাজ্যের স্মৃতি কথা ভীড় করে, কিছু বলাই হয় না যে। তোমার সাথ ধরেছিলাম বলেই, সব নিঃস্বতার সাজা হয়েছিল। অমাবস্যার এত ঘনঘটা ছিল যে, কবে পূর্ণিমা চলে যেতো আমরা জানতাম না। অথচ হাত ধরে পূর্ণিমা দেখবো বলেই সাথ ধরেছিলাম। আপনজনদের নিষ্ঠুরতা দেখতে দেখতে নিজেদের উচ্ছ্বলতা ভুলে গিয়েছিলাম আমরা, মনে আছে তোমার! ছেলেমানুষীর কোন সময় ছিল না।

দীর্ঘদিন আমাদের চর্তুরমুখী যুদ্ধকাল গেছে। অনেক অনেক কষ্টের গল্প ছিল রোজকার। আমরা অনেক বছর উৎসব-পালা-পার্বনে কোন নতুন কাপড় চোপড় কিনতে পারতাম না। আমরা যে বাসায় থাকতাম, সে বাসায় সব পরিবারই কিছু কিনলে সবাইকে ডেকে দেখাতো, আনন্দ ভাগ করবার জন্য। উৎসব হলে তো কথায় নাই। আমাদের নিত্যকার জীবন যাপনের পর, উৎসব পালন করবার বাড়তি টাকা তখন থাকতো না। তাই কিছু কেনারও প্রশ্ন আসে না। এ অপারগতা নিয়ে আমাদের কোন খারাপ লাগা ছিল না, কিন্তু সমস্যা হল প্রতিবেশীরা। মনে আছে, সে ঈদের সময়, প্রায় সাতদিন আমরা স্বেচ্ছা গৃহবন্দী ছিলাম, সন্ধ্যায় সারা বাসার লাইট নিভিয়ে, শুধু শোবার ঘরের অল্প আলোটা অন রাখতাম। ঈদের ২/৩দিন পার হলে বাসায় স্বাভাবিক নিয়মে এসেছিলাম। প্রতিবেশীদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম, আমরা হঠাৎ ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলাম। কয়েক দিন বাসায় ছিলাম না।

নিষ্ঠুরতা/আত্মীয়দের বৈরীতা, কত প্রকার এবং কি কি সব দু হাতে কুড়াতে কুড়াতে আমরা প্রায় জীবনের দ্বী-প্রহরে দাঁড়িয়েছি। দর্শক হয়তো আজও জানে না, সার্ভিস হোল্ডার নাটকের ঐ সংলাপটা ছিল আমাদের জীবনের নিজস্ব কথা, ‘তখন অল্প বয়স ছিল, কিছু মনে করি নেই, কিন্তু এখন সে সব কষ্টের কথা মনে হলি, দম বন্ধ হয়্যা আসে, আজ আমার এত কষ্টের ভাত....!’

যে ভালবাসার জন্য জীবনে এত চড়া মূল্য দিতে হল, সেই ‘ভালবাসি’ কথাটাই কোনদিন বলা হয়নি তোমাকে। তবে এই দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রতিবার চুল কাটার সময় সেলুনে যেয়ে দাঁডিয়ে থেকে, চুল কাটার নির্দেশনা দিতে আমার একবারও ভুল হয়নি/লজ্জা হয়নি/ভয় করেনি। কোনদিন মনে হয়নি সেলুনের লোকেরা কি ভাববে!

এটাকে ভালবাসা বলে কিনা আমি জানিনা, যদি না বলে, তাহলে এ জনমে আর তোমাকে ভালবাসি কথাটা আমার আর বলা হল না!

যে মানুষ, একটা লাল চায়ে একটা টোস্ট বিস্কুট পেলেই খুশি হয়ে যায়, দেশের গানে অঝোরে কেঁদে ফেলে, শরীরের সুস্থতা ছাড়া কোন ভবিষ্যত চিন্তা করে না, কখনো কারো অমংগল চিন্তা করে না, তার অনেক অনেক কাল বেঁচে থাকে উচিত। তোমার শতায়ু হোক। তুমি নাই কিন্তু তোমার জন্ম তারিখ আছে, এমন দিন যেন আমার দেখতে না হয়।

শুভ জন্মদিন।’

 

উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নাট্যাভিনেতা, নাট্যরচয়িতা, নাট্যপরিচালক এবং পাবনার কৃতীসন্তান বৃন্দাবন দাস। এক সময়ের কৃতী ফুটবল খেলোয়াড় (১৯৮৫-৯৩) বৃন্দাবন দাস ১৯৬৩ সালের আজকের এই দিনে (৭ ডিসেম্বর) পাবনা জেলার চাটমোহর উপজলার সাঁরোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

মির্জা ওয়াহেদ হোসেন প্রতিষ্ঠিত শালিখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃন্দাবন দাস প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু সম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ (বর্তমানে চাটমোহর সরকারি ডিগ্রি কলেজ) থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা থেকে বিএসএস (সম্মান) ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন।

বৃন্দাবন দাসের শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো অতিবাহিত হয় চাটমোহরে। জীবনে কোনো সময় চিন্তা করেননি যে, তিনি লেখালেখি এবং নাটকের সঙ্গে জড়িত হবেন। ইচ্ছে ছিল তার দেশের একজন নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় হবেন এবং জাতীয় দল তথা ‘আবাহনী’র হয়ে আকাশী-নীল রঙের জার্সি গায়ে খেলবেন- দেশে ও বিদেশে। ১৯৮১ সালে এই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসেন অচেনা ঢাকা শহরে। হাজির হন তার স্বপ্নের আবাহনী ক্লাবে। কিংবদন্তিতূল্য ফুটবলার অমলেশ সেনের কাছে হাজির হয়ে জানালেন তার মনোবাসনার কথা। সেখান থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন চাটমোহরে। সেখানে তিনি যে খেলার মাঠে ফুটবল খেলতেন, তার পাশেই ছিল ‘চাটমোহর সাংস্কৃতিক পরিষদ’। সেখানে নিয়মিত নাটকের রিহার্সেল এবং সংগীতচর্চা হোত। সেটা ১৯৮৫ সালের কথা। একদিন হঠাৎ করেই হাজির হলেন চাটমোহর সাংস্কৃতিক পরিষদের ঘরে। সাংস্কৃতিক পরিষদের পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ফারুককে ঠাট্টা করে বললেন, তাকে (বৃন্দাবন দাস) অভিনয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে। গোলাম ফারুক তাকে সালাম সাকলায়েন রচিত ‘চোর’ নাটকে ছোটো একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দিলেন। সেখান থেকেই শুরু। এরপর সেখানেই বাংলাদেশ মুক্ত-নাটক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং সেই সুবাদে ‘আরণ্যক নাট্যদল’-এর কর্ণধার মামুনুর রশীদের সঙ্গে পরিচয় ও ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলের সদস্যপদ লাভ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় নাট্যকার মামুনুর রশীদের সহকারী হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৯৪ সালে অবশ্য কিছুদিন কাজ করেন ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে জুনিয়র অফিসার পদে। ১৯৯৭ সালে আরণ্যক ছেড়ে ‘প্রাচ্যনাট’ গঠন করেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘কেয়ার বাংলাদেশে’ কাজ করেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত।

১৯৯৭ সালে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ‘প্রাচ্যনাট’ গঠন করেন এবং দলের প্রয়োজনে ছোটো একটি মঞ্চনাটক ‘কাঁদতে মানা’ লেখেন। মূলত এই নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে প্রাচ্যনাটের শুভযাত্রা শুরু হয়। এরপর কয়েক বন্ধু মিলে একটি টেলিভিশন-নাটক প্রযোজনার পরিকল্পনা এবং তার লেখা পাণ্ডুলিপি নিয়ে প্রখ্যাত নাট্য-পরিচালক সাইদুল আনাম টুটুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সাইদুল আনাম টুটুলের পরিচালনায় নির্মিত হলো তার লেখা প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিক-নাটক ‘বন্ধুবরেষু’। নাটকটি ১৯৯৯ সালে একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত ও দর্শকনন্দিত হয়। সাধারণ মানুষ, তাদের আবেগ, হাসি-কান্না বৃন্দাবন দাসের লেখার উপজীব্য। বিশেষ করে পাবনার আঞ্চলিক ভাষাকে তিনি তার নাটকে স্থান করে দিয়ে পাবনার সর্বশ্রেণির মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন।

১৯৯৪ সালে চাটমোহরের মেয়ে শাহনাজ ফেরদৌস খুশির সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন বৃন্দাবন। শাহনাজ ফেরদৌস খুশিও একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী। তাদের যমজ পুত্র সন্তান- দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি অধ্যয়নরত ও উভয়েই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত।
এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি