ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

জীবন আলেখ্যে চলচ্চিত্রে ছবি আঁকতেন বুদ্ধদেব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৯, ১১ জুন ২০২১

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি ও সাহিত্যিক। বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল তার হৃদয়ের সম্পর্ক। তার মায়ের বাপের বাড়ি অর্থাৎ নানা বাড়ি ঢাকা শহরে। কিন্তু দেশভাগের পর সবাই কলকাতায় চলে যান। পুরুলিয়ার আনাড়াতে জন্ম হলেও তার শেকড় ঢাকার বিক্রমপুরে। যা তিনি কখনও ভুলতে পারেননি। তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে তৈরি করা হলো এই প্রতিবেদন।

বুদ্ধদেব সৃষ্টি কর্ম
বুদ্ধদেব অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি দিয়ে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। এরপর ১৯৭৮ সালে নির্মাণ করেন প্রথম সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম।

চলচ্চিত্রের কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে, দাশগুপ্ত সত্যজিৎ রায়ের বাস্তবসম্মত চলচ্চিত্রগুলির দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি অন্যান্য রূপে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বাঘ বাহাদুর, তাহাদের কথা, চারচার ও উত্তরা হল তার বেশিরভাগ প্রশংসিত চলচ্চিত্র।

তার ফিচার ফিল্মের মধ্যে রয়েছে- সময়ের কাছে (১৯৬৮), দুরত্ব (১৯৭৮), নিম অন্নপূর্ণা (১৯৭৯), গৃহযুদ্ধ (১৯৮২), অন্ধ গলি (১৯৮৪), ফেরা (১৯৮৮), বাঘ বাহাদুর (১৯৮৯), তাহাদের কথা (১৯৯২), চরাচর (১৯৯৩), লাল দরজা (১৯৯৭), উত্তরা (২০০০), মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২), স্বপ্নের দিন (২০০৪), আমি, ইয়াসিন আর আমার মধুবালা (২০০৭), কালপুরুষ (২০০৮), জানালা (২০০৯), মুক্তি (২০১২), পত্রলেখা (২০১২), আনোয়ার কা আজিব কিসসা (২০১৩), টোপ (২০১৭)।

তার নির্মিত তথ্যচিত্র ও টিভিকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্য কন্তিনেন্ত অব লাভ (১৯৬৮), ধোলার রাজা খিরোড নত্ত (১৯৭৩), ফিশারম্যান অব সুন্দরবন (১৯৭৪), সারাচন্দ্র (১৯৭৫), রিদম অব ষ্টিল (১৯৮১), ইন্ডিয়ান সায়েন্স মার্চে অ্যাহেড (১৯৮৪), বিজ্ঞান ও তার আবিষ্কার (১৯৮০), গ্লাস স্টোরি (১৯৮৫), ভারত অন দ্য মুভ (১৯৮৫), সিরামিকস (১৯৮৬), আরণ্যক (১৯৯৬), কন টেম্পোরারি ইন্ডিয়ান স্ক্‌লাপচার (১৯৮৭), হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান জুট (১৯৯০)।

১৯৬৮ সালে প্রথম তিনি নির্মাণ করেন ১০ মিনিটের তথ্যচিত্র- ‘দ্যা কন্টিনেন্ট অব লাভ’। এটি দিয়েই পরিচালনায় তার যাত্রা শুরু। ‘দূরত্ব’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘স্বপ্নের দিন’, ‘উড়োজাহাজ’-এর মতো সিনেমা করে দর্শকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। নিজের নির্মিত ‘লাল দরজা’, ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘কালপুরুষ’ চলচ্চিত্রের জন্য ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে ঢালিউডের চিত্রনায়িকা চম্পা, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, শুভেন্দু চ্যাটার্জি, ইন্দ্রাণী হালদারকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘লাল দরজা’ সিনেমা। এ সিনেমাটির জন্যও তিনি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। 

নির্মাণের পাশাপাশি সাহিত্য জগতেও পদচারণা ছিল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। তার কয়েকটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। যা নজর কেড়েছিলেন পাঠক মহলে। তার লেখা বিখ্যাত কবিতার বই ‘রোবটের গান’।

বুদ্ধদেবের ছোটবেলা কেটেছে পুরুলিয়ায়। সিনেমা বানানোর জন্য বারবার তিনি ফিরে গেছেন পুরুলিয়ার ল্যান্ডস্কেপে। আড্ডায় বার বার পুরুলিয়ার কথা টেনে আনতেন।

মৃত্যুর কিছুদিন আগেও একটি সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখছিলেন তিনি। এক নারী গোয়েন্দার কাহিনি। তবে মৃত্যুর কারণে সেই স্ক্রিপ্ট অসম্পূর্ণ থেকে গেল।

চেতনায় বুদ্ধদেব বামপন্থী ছিলেন। তবে কেউ তাকে দলপন্থী বলতে পারবে না। বামপন্থীই হোক বা ডানপন্থী, কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দেননি। বরং একজন প্রকৃত বামপন্থী হয়েও সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের উপাসক, মানবতার সেবক, ফ্যাসিবাদের শত্রু। তার পুরো জীবন ছিল সিনেমা আর কবিতার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত।

উল্লেখ্য, ১০ জুন না ফেরার দেশে চলে গেছেন এই নির্মাতা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। চিকিৎসার পাশাপাশি চলছিল ডায়ালিসিস। শুধু কিডনির সমস্যাই নয়, বাধর্ক্যজনিত সমস্যাও গ্রাস করেছিল তাকে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি