তারেক মাসুদের জন্মদিন
প্রকাশিত : ০৮:৩২, ৬ ডিসেম্বর ২০২১
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ৬৫তম জন্মদিন ৬ ডিসেম্বর। একাধারে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক ও গীতিকার।
তারেক মাসুদ ১৯৫৬ সালের এ দিনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এই গুনি তারকার মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ ও বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ। তিনি ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন। মাদ্রাসায় তার শিক্ষাজীবন শুরু হলেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করেন। যুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। পরে তারেক মাসুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেন।
আশির দশকের মধ্যভাগে শুরু হওয়া স্বাধীনধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের অগ্রগণ্য তিনি। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তার পরিচয় ঘটে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতারের সঙ্গে। দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৮২ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে তিনি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতানের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত (১৯৮৯) নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রায় সাত বছর তিনি শিল্পীর সান্নিধ্যে কাটান এবং সেই সময়েই তার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি ও দর্শনচর্চায় তারেক মাসুদ নিজেকে যুক্ত করেন।
মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজনির্ভর প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গান (১৯৯৫)-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রকার হিসেবে তারেক মাসুদ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। মূলত, মুক্তির গান তারেক মাসুদকে দেশে চলচ্চিত্রকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়।
তারেক মাসুদ ছিলেন বাংলাদেশের একজন স্বাতন্ত্রিক চলচ্চিত্রকার। তিনি ছিলেন স্বাধীনধারার চলচ্চিত্রের এক জাত কারিগর। তার নির্মাণ ও ভাবনায় ভিন্নতর এক শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান হয়েছে। তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র মাটির ময়নার (২০০২) মাধ্যমে তারেক মাসুদ আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। মাটির ময়না ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপ্রেস্কি আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কারের আওতায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করে এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশে নির্মিত সবচাইতে আলোচিত চলচ্চিত্রে পরিণত হয়।
তারেক মাসুদের উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্তর্যাত্রা (২০০৬) চলচ্চিত্রে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশিদের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে বার বার শেকড়ের টানে ফিরে আসার কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’-এ (২০০৯) প্রাধান্যশীল মুক্তিযুদ্ধের বয়ানের বিনির্মাণ দেখা যায় যেখানে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ধাওয়া খেয়ে পলায়নরত এক মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় বিহারী নরসুন্দররা, যাদের সম্পর্কে সাধারণ ধারণা আছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।
তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন এবং তারেক মিলে ঢাকায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন যার নাম ‘অডিওভিশন’। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও তারেক মাসুদের আগ্রহের বিষয় ছিল লোকসঙ্গীত এবং লোকজ ধারা। এই দম্পতির ‘বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ’ নামে এক ছেলে রয়েছে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট তার পরবর্তী চলচ্চিত্র কাগজের ফুল-এর শুটিংস্পট নির্বাচন করে ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।
এসএ/