আগাগোড়াই ছক ভাঙতে ভালোবাসেন শর্মিলা
প্রকাশিত : ১১:২০, ৮ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১১:৩৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
১৯৫৯ সালে পর্দায় আবির্ভাব। তখন তিনি পঞ্চদশী। এক রাশ চুল, আটপৌরে শাড়ি, আর মুখে উজ্জ্বল সারল্য— ‘অপুর সংসার’ এর অপর্ণা হলেন তিনি। ক্যামেরার সঙ্গে শর্মিলা ঠাকুরের সেই প্রথম পরিচয়।
তখন তিনি স্কুল পড়ুয়া। বই-খাতা-পড়াশোনার নির্ঝঞ্ঝাট জীবন। ‘অপু’ অর্থাৎ ২৩ বছরের এর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য হন্যে হয়ে নায়িকা খুঁজছেন পরিচালক সত্যজিত রায়। এক পর্যায়ে তার চোখে পড়ে ঠাকুর বাড়ির মেয়ে শর্মিলাকে।
শর্মিলার বাবা গীতীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন স্বয়ং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি। সত্যজিতের প্রস্তাবে অবশেষে রাজি হন শর্মিলার অভিভাবক। পরিচালক খুঁজে পান মনের মতো ‘অপর্ণা’। ছবি মুক্তি পেল। প্রশংসিত হলেন শর্মিলা।
এরপর এল দ্বিতীয় ছবির প্রস্তাব। নাম ‘দেবী’। পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তাই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শর্মিলাকে। একে একে কাজ করেন তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকের সঙ্গেও।
১৯৬৪ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে বাংলা থেকে পাড়ি দেন সোজা আরব সাগরের তীরে। ‘কাশ্মীর কি কলি’সিনেমায় শাম্মি কপূরের বিপরীতে বলিউডে হাতেখড়ি এই বঙ্গতনয়ার।
এর পর ‘ওয়াক্ত’, ‘অনুপমা’, ‘আরাধনা’, ‘চুপকে চুপকে’র মতো অগুনতি সফল ছবির মুখ হয়ে ওঠেন সত্যজিতের আবিষ্কার। হিন্দির সঙ্গে বাংলা ছবিতেও কাজ করতে থাকেন সমান তালে।
বুঝি ছক ভাঙতেই ভালবাসতেন শর্মিলা। তাই তো মলমলের শাড়ি আর টানা কাজলের প্রথা ভেঙে বিকিনি পরেও সাবলীল ছিলেন ক্যামেরার সামনে।
সেই আমলে পত্রিকার প্রচ্ছদে তার এমন পোশাকের ছবি বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। কিন্তু এ সবকিছুকেই এক তুড়িতে উড়িয়েছিলেন শর্মিলা।
ছক ভাঙ্গার বাসনা কিন্তু আটকে থাকেনি পেশাগত গণ্ডিতে। ব্যক্তি জীবনে শর্মিলা একই রকম সাহসী। তাই ক্যরিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদিকে বিয়ে করতে একটুও দ্বিধা বোধ করেননি তিনি। প্রেমের পর ১৯৬৮ সালে বিয়ে করেন তারা।
হিন্দু শর্মিলার সঙ্গে মুসলিম মনসুরের বিয়ে নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। তবে সে সবকে তোয়াক্কা না করে নতুন সংসারেই মন দিয়েছিলেন তারা।
নবাব পরিবারে বিয়ে হওয়ার পর নতুন নাম পেয়েছিলেন শর্মিলা। বেগম আয়েশা সুলতানা। এই নাম যদিও গ্রহণ করেছিলেন নিয়ম রক্ষার খাতিরে। কখনই তা ব্যবহার করেননি তিনি।
এক দিকে নতুন সংসার, অন্য দিকে ক্যারিয়ার। দিব্যি ভারসাম্য বজায় রেখে চলছিলেন। কিন্তু নায়িকা, স্ত্রীর পর মায়ের ভূমিকায় পেতেই দৃশ্যপট বদলে যায়। কম কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন নবাব-পত্নী।
পুত্রবধূ করিনা কপুর খানকে এক সাক্ষাৎকারে শর্মিলা জানিয়েছিলেন, সন্তানদের দেখাশোনা করার জন্য ‘খিলোনে’, ‘তেরে মেরে স্বপ্নে’, ‘হাতি মেরে সাথী’র মতো একাধিক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি।
বলেন, “সমাজ মনে করে শিশুকে লালন করার দায়িত্ব শুধু নারীর। একজন নারী যদি তার সন্তানকে ছেড়ে কাজে যান, সমাজের চোখে তিনি খারাপ হয়ে যান। আর আমরা তো প্রত্যেকেই আদর্শ নারীর আখ্যা পেতে চেয়েছি। তাই না?”
পরিবার, অভিনয় সামলেও নিজের পরিধি বিস্তার করেছিলেন শর্মিলা। সেন্ট্রাল ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারপার্সন পদে নিযুক্ত ছিলেন দীর্ঘ দিন। এ ছাড়াও ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসাডরও ছিলেন তিনি।
বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ৭৭ বছরে এ পা রাখলেন শর্মিলা। এক সময়ের এই নায়িকার জীবন যে তার সিনেমার চেয়েও বেশি বর্ণিল এবং ঘটনাবহুল, তা বললে কিন্তু মোটেও বেশি বলা হবেনা।
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন
এসবি