জন্মদিনে ফিরে দেখা, প্রেমিক ‘ট্র্যাজেডি কিং’ দিলীপকে
প্রকাশিত : ০৯:৩৭, ১১ ডিসেম্বর ২০২১
পর্দাতে যার একটি চাহনি প্রেমের জোয়ার আনত দর্শকমনে, বাস্তবেও যে তিনি চিরন্তনী প্রেমিক-মানুষ হবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! সেই দিলীপ কুমারের জন্মদিন আজ। পাঁচ মাস আগে তিনি চলচ্চিত্র জগতকে শূন্য করে দিয়ে চলে গেছেন এই কিংবদন্তী।
তার প্রেমিক সত্তা যতই বিরাট হোক না কেন, ছবির দুনিয়ায় তাকে ‘ট্র্যাজেডি কিং’-এরই তকমা দেওয়া হয়েছে বরাবর। হবে না-ই বা কেন! পর্দার কোনও প্রেমই যে সফল হত না তার। বেদনার রেশ থেকে যেত দিলীপের ছবির শেষে।
পর্দার ছায়া অবশ্য শেষ জীবনে ছিল না। পাঁচ দশকের সঙ্গী সায়রা বানু তার স্বামীর মৃত্যুশয্যার পাশে ঠায় বসে থেকেছেন।
সেই প্রেমিক এবং ‘ট্র্যাজেডি কিং’ এর অভিনয় জীবন শুরু ৪০ এর দশকে। ৯০ এর দশকেও পর্দায় দেখা দিয়েছেন।
১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ ছবিতে শেষ অভিনয় তার। মাঝের ছয়টি দশক চুটিয়ে অভিনয় করেছেন দিলীপ।
একবিংশ শতাব্দীতে পরিচালক হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছেন। ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘কলিঙ্গ’, ‘দিল দিয়া দর্দ লিয়া’র মতো ছবি বানিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানে জন্ম দিলীপ কুমারের প্রকৃত নাম মুহাম্মদ ইউসুফ খান। হিন্দি ছবিতে কাজ করার সময়ে নিজের নাম পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। একইসঙ্গে হিন্দি, ঊর্দু, মরাঠি, পঞ্জাবি, বাংলা, ইংরেজি, পার্সির মতো একাধিক ভাষায় দখল ছিল তার।
পর্দার নায়িকাদের সঙ্গে কালজয়ী প্রেমের উদাহরণ তিনি নিজেই। ‘তারানা’ ছবির শ্যুটিং করতে গিয়ে নায়িকা মধুবালার প্রেমে পড়েন দিলীপ।
সাত বছর সম্পর্কে ছিলেন তারা। কিন্তু মধুবালার বাবা আতাউল্লাহ খানকে ঘিরে সমস্যা শুরু হয় প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে, এক পর্যায়ে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
১৯৪৮ সালে ‘শহিদ’ ছবিতে দিলীপের বিপরীতে অভিনয় করেন কামিনী কৌশল। শ্যুটিং করতে করতেই প্রেম। সেই সময়ে কামিনী-দিলীপের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছিল। কিন্তু নায়িকার দাদার হস্তক্ষেপে সেই সম্পর্কও পরিণতি পায়নি।
১৯৫০ সালে বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে ফের সম্পর্কের গুজব। একাধিক ছবিতে তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন দিলীপ।
এ তো গেল, পর্দার নায়িকারদের সঙ্গে প্রেম। কিন্তু নায়িকাদের সঙ্গে পর্দায় প্রেম নিয়েও তিনি এতটাই নিষ্ঠাবান ছিলেন যে এমনই একটি কারণে নার্গিসের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি তিনি।
‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবি প্রত্যাখ্যান করার পিছনে নাকি কারণ জানিয়েছিলেন দিলীপ নিজেই। তার বক্তব্য, ‘মেলা’, ‘বাবুল’-এর মতো ছবিতে নার্গিসের সঙ্গে প্রেম করার পরে ‘মাদার ইন্ডিয়া’-তে নার্গিসের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করাটা তার কাছে হাস্যকর বলে মনে হয়েছিল।
১৯৬৬ সালে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। সায়রা বানু পরে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ১২ বছর বয়স থেকে পর্দায় দেখা দিলীপ সাবের প্রেমে পাগল ছিলেন তিনি।
১৬ বছরের সায়রা ‘মুঘল-এ-আজম’ ছবির প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন প্রিয় নায়ককে এক বার চোখের দেখা দেখতে। কিন্তু কাজে ব্যস্ত থাকায় দিলীপ নিজেই প্রিমিয়ার যেতে পারেননি।
কিন্তু সায়রা বানুর উপস্থিতিতেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন ‘ট্র্যাজেডি কিং’। ১৯৮১ সালে। দ্বিতীর স্ত্রীর নাম আসমা সাহিবা। দু’বছর পরে সেই বিয়ে ভেঙে যায়, আবারও সায়রা বানুর কাছেই ফেরেন দিলীপ।
১৯৭১ সালে সায়রা অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে তার গর্ভপাত হয়ে যায়। সায়রা বানু পরবর্তী কালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাদের সন্তান হলে শাহরুখ খানের মতোই দেখতে হত।
ট্র্যাজেডি কিং’ নিজেও স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘আমাদের সন্তান থাকলে দাম্পত্য আরও রঙিন হত। তবে যোগ্য উত্তরাধিকারী নেই বলে আমাদের কোনও খেদ নেই।’’
অভিনেতা সেই সময়ে বলেছিলেন, তিনি এবং সায়রা এই অভাব মেনে নিয়েছেন। তারা মনে করেন, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই তাদের জীবনে এই অপূর্ণতা। দিলীপের দাবি, সেই শূন্যতা পূরণ করে দিয়েছেন তাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা।
২০২১ সালের ৩০ জুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি ভর্তি হন পিডি হিন্দুজা হাসপাতালে। ফুসফুসে সংক্রমণের জন্য চিকিৎসা চলে তাঁর। গত ৭ জুলাই ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্তম্ভ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন
এসবি