ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

যাঁর হাত ধরে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শিমু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৭:৫৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু

সম্প্রতি নিখোঁজের একদিন পর অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর (৪৫) বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সকাল ১০টায় কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে দুটি বস্তায় থাকা শিমুর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকনের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল এবং তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেছেন, ‘দাম্পত্য কলহের জেরে শিমুকে হত্যার কথা’ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন নোবেল।

বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়ার মেয়ে রাইমা ইসলাম শিমু দুই যুগ আগে রূপালী পর্দার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন। সে সময় এফডিসির অলি-গলি ঘুরতে ঘুরতে প্রয়াত নায়ক আসলাম তালুকদার মান্নার হাত ধরে বরেণ্য পরিচালক কাজী হায়াৎ-এর ‘বর্তমান’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান শিমু।

১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমায় মান্নার ছোটবোনের চরিত্রে অভিনয় করেন কিশোরী শিমু। পরে কাজী হায়াৎ-এর ‘মিনিস্টার’ নামের আরেকটি চলচ্চিত্রেও কাজ করেন তিনি। 

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বরেণ্য এই পরিচালক। তিনি জানান, প্রয়াত মান্নার অনুরোধেই শিমুকে চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ দেন তিনি। 

কাজী হায়াৎ বলেন, ‘শিমুর ভাই খোকনের সঙ্গে মান্নার পরিচয় ছিল, মান্নার অনুরোধেই তিনি শিমুকে সিনেমায় নিয়েছিলেন। পরে মেয়েটি ভালো অভিনয়ও করেছিল, প্রতিভা ছিল তাঁর। ও খুব কম কথা বলত, চুপচাপ থাকত। ফলে আমি ওকে ‘বিষ্ণুপদ’ বলে ডাকতাম। পরে ওকে আরেকটি সিনেমায়ও নিয়েছিলাম।’

‘বর্তমান’ চলচ্চিত্রে মান্না ও শিমুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন আনোয়ারা। এছাড়াও ছবিটিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন মৌসুমী, ডিপজল, মিজু আহমেদ, কাবিলাসহ অনেকে।

দুই দশক আগে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করা শিমু একটানা ছয় বছর পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। ওই সময়ে তিনি অনেক প্রতিষ্ঠিত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেন। যে তালিকায় আছেন- চাষী নজরুল ইসলাম, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান, এনায়েত করিম, শবনম পারভীন প্রমুখ। 

গুণী এসব পরিচালকের সেসব ছবিতে মান্না ছাড়াও অভিনয় করেছেন রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, শাকিব খান, জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিমসহ অনেক গুণী ও জনপ্রিয় অভিনেতার বিপরীতে। 

এর মধ্যে ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাহাদাত খান পরিচালিত ‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমায় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে বেশ পরিচিতি পান শিমু। সেই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন অমিত হাসান।

সিনেমাটির অন্যতম মুখ্য অভিনেতা রিয়াজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, শিমু হত্যার খবরটি পড়ে তিনি স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। সেইসঙ্গে তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ওই সিনেমাটির পর তাঁকে আর কোনও চলচ্চিত্রে দেখা না গেলেও, নিয়মিত অভিনয় করতে দেখা যায় টিভি নাটকে।

শিমুর ফেসবুকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিপণন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি একটি প্রোডাকশন হাউজ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ব্যবসায়ী সাখাওয়াত আলী নোবেলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ২০০৪ সালে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার কলাবাগানের গ্রিন রোডে থাকতেন। দুটি সন্তানও আছে তাঁদের সংসারে।

এ বিষয়ে নিহত শিমুর বোন ফাতিমা নিশা মঙ্গলবার সকালে কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কে, কি কারণে আমার বোনকে হত্যা করেছে, আমরা এখনও কিছু বুঝতেই পারছি না। আমার বোন-জামাইয়ের সঙ্গে বোনের তেমন কোনও কলহ ছিল না। তাঁদের ১৮ বছরের সংসার, তাঁর লাভ ম্যারেজ করেছিল।’

ফাতিমা নিশা আরও বলেন, ‘তবে যেই হত্যা করুক, আমরা চাই, সঠিক বিচার হোক, আমরা মামলা করব।’

এছাড়াও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন শিমু। তবে ২০১৭ সালে পূর্ণ সদস্যপদ হারানোয় সমিতির ভোটাধিকার হারান এ অভিনয়শিল্পী। যদিও পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পেতে গত দুই বছরে এফডিসিতে বিভিন্ন বিক্ষোভ-সমাবেশে শামিল ছিলেন তিনি। সোচ্চার ছিলেন শিল্পী সমিতির ক্ষমতায় থাকা মিশা সওদাগর-জায়েদ খানদের বিরুদ্ধেও।

অবশ্য বরাবরই সদস্যপদ হারানোদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মিশা-জায়েদ এন্ড কোং।

এদিকে, অভিনেতা রিয়াজের পাশাপাশি অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, কাজী হায়াৎ, ওমর সানিসহ আরও অনেকে।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি