ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

স্বপ্ন ছিল প্রিয় গায়ককে দেখার, সুযোগ হল মর্গে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৩, ৩ জুন ২০২২

অনেকের মত সামনে থেকে তাকে একবার দেখার স্বপ্ন থাকলেও সুযোগ ছিল না। বুধবার সকালে সেই সুযোগ যখন এল, তখন ময়না-তদন্তের টেবিলে শুয়ে রয়েছেন ‘তড়প তড়প কে ইস দিল সে’র গায়ক কেকে। 

যাকে স্পর্শ করার বিস্ময়ের পর নিথর দেহ ব্যবচ্ছেদের জন্য ছুরি-কাঁচি এগিয়ে দিতে গিয়ে হাত কেঁপে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরেও যেন সেই ঘোর কাটছিল না এসএসকেএমের মর্গের তিন কর্মী আনন্দ মল্লিক, ভিকি মল্লিক ও সঞ্জয় মল্লিকের।
 
মর্গের পিছনের কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা ওই তিন কর্মীর কাছেই সে দিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ইন্দ্রাণী দাসের ফোন গিয়েছিল। জানানো হয়েছিল, সকাল ১০টার মধ্যে আসতেই হবে। অবাক হয়ে আনন্দ মল্লিক পুনরায় ফোন করে জানতে চান, ম্যাডাম, বিশেষ কিছু ঘটেছে? 
উত্তরে ইন্দ্রাণী দাস বলেন, ভিআইপি-র দেহের ময়না-তদন্ত হবে। সিএমআরআই হাসপাতাল থেকে আসবে। তখনও ওরা বুঝতে পারছিলেন না, কেন জরুরি তলব।

নিয়মানুযায়ী কার দেহের ময়না-তদন্ত হবে, তা আগাম জানানো হয় না ওই ময়না-তদন্ত সহকারী বা ডোমদের। কাজে যোগ দেওয়ার পরে তারা জানতে পারেন। 

ভিকি মল্লিক বলেন, বাড়ি থেকে বেরোনোর তাড়া ছিল। তখনই টিভি-র খবরে এক ঝলক দেখলাম, কেকে-র দেহ ময়না-তদন্তের জন্য এসএসকেএমে আনা হবে। ভাবতে পারছিলাম না, এটা কি সত্যি!

প্রায় সাত বছর ধরে পিজি-র মর্গে চাকরি করছেন বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ভিকি মল্লিক এবং অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ আনন্দ মল্লিক আর পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সি সঞ্জয় মল্লিক অবশ্য প্রায় ১০ বছর ধরে মর্গে কর্মরত আছেন। এত বছরের কর্মজীবনে অসংখ্য দেহের ময়না-তদন্তে সহযোগীর কাজ করেছেন তিনি। 

সঞ্জয় বলেন, ওই টেবিলে সকলেই আমাদের কাছে সমান। কিন্তু তা-ও যেন মনের ভিতরে একটা কষ্ট হচ্ছিল।

লাশবাহী গাড়ি পিজি-র মর্গে পৌঁছানোর পরে কেকে-র দেহ নামিয়ে তা সরাসরি ব্যবচ্ছেদের ঘরে নিয়ে গিয়ে টেবিলে তোলার সময়ে যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না আনন্দের। 

তিনি বলেন, ওম শান্তি ওম সিনেমার আঁখো মে তেরি আজব সি’র গায়ককে হাতে ধরে টেবিলে শোয়াচ্ছি, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল! মনে হচ্ছিল, উনি যেন ঘুমাচ্ছেন। 

এক সময় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ভিকি জানান, যার এত সব জনপ্রিয় গান শুনেছি, তাকে এক বার সামনে থেকে দেখার স্বপ্ন তো সকলের থাকে। কিন্তু তাকে যে ওই অবস্থায় দেখব, তা কল্পনাও করিনি। 

ব্যবচ্ছেদের পরে শিল্পীর দেহ সেলাই করেন আনন্দ, ভিকিরা। গোসল করিয়ে প্রিয় গায়ককে পরিপাটি করে হাসপাতালেরই দু’টি সাদা চাদরে মুড়ে কফিনে শুইয়ে পুলিশের লাশবাহী গাড়িতে তুলে দেন তারা।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
এমএম/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি