ঢাকা, বুধবার   ০৫ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘রবীন্দ্রপ্রেমে পশ্চিমবঙ্গ হাবুডুবু খেলেও বাংলাদেশের কাছে হেরেছে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৫, ২৯ জুলাই ২০২২

Ekushey Television Ltd.

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি-মননের স্পর্শকাতরতা আজও এই নামের সঙ্গে সমার্থক। কেউ বলবেন, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আর ভাল লাগে না। কেউ বা এখনও তার লেখাতেই প্রেম-বিষাদ, হর্ষ-ভীতির মাপকাঠি খোঁজেন। তবে সেই রবি ঠাকুরই যে দুই বাংলার দড়ি টানাটানিরও নেপথ্যকারণ হয়ে উঠতে পারেন, এ বার তা দেখিয়ে দিলেন তসলিমা নাসরিন।

‘লজ্জা’র লেখকের মতে রবীন্দ্রপ্রীতির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গ হাবেভাবে রাবীন্দ্রিক হলেও, আসলে তার মধ্যে রবীন্দ্র-আনুগত্য এবং নিষ্ঠার অভাব। তাই এখানে এত ‘বিকৃত’ সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া চলে। সেখানে বাংলাদেশে রবীন্দ্র-বিচ্যুতির কড়া শাস্তি!

সম্প্রতি একটি পোস্টে তসলিমা লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতকে কুরুচি আর বিকৃতির হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ, এগিয়ে আসেনি পশ্চিমবঙ্গ। তাই বাংলাদেশের হিরো আলমকে পুলিশের কাছে গিয়ে মুচলেকা দিতে হয়েছে বিকৃত সুরে এবং ভুল উচ্চারণে রবীন্দ্রসঙ্গীত সে আর গাইবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রোদ্দুর রায়কে এ কারণে পুলিশেরা তলব করেনি, তাকে এ ধরনের কোনও মুচলেকাও দিতে হয়নি।’

এ ক্ষেত্রে তসলিমার শাণিত তির পশ্চিমবঙ্গের দিকে। তার মতে, ‘যেমন ইচ্ছে তেমন করে গান গাওয়ার অধিকার পশ্চিমবঙ্গে বেশি, এমনকি রবীন্দ্রসঙ্গীতও রুচিহীন ভাবে গাওয়ার অধিকার মানুষের আছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিকৃত সুরে ভুল উচ্চারণে অন্য যে কোনও গান গাওয়ার যে কারও অধিকার থাকুক, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার অধিকার নেই। লোকে যে যা-ই বলুক, বাংলাদেশের এই রবীন্দ্রপ্রেম আমার বেশ ভাল লেগেছে। পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্রপ্রেমে সারা বছর হাবুডুবু খেলেও, প্রেমদৌড়ে বাংলাদেশের কাছে এ বার গোহারা হেরেছে বটে।’

এই প্রসঙ্গে শ্রীকান্ত আচার্য বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথকে ভালবাসেন, নিজের মতো করে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করেন— এমন মানুষ দুই দেশেই আছেন। এ নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। গণতান্ত্রিক পৃথিবীতে কে, কী ভাবে মতপ্রকাশ করবেন, কোনটাকে ভাল বলবেন আর কোনটা বাড়াবাড়ি, সেটাও তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতা। তবে মানুষের শোনার কান রয়েছে, বোঝার বোধ রয়েছে। আমি যদি রবীন্দ্রনাথকে সত্যিই ভালবাসি, যখন গাইব, চাইব সেই ভালবাসা, ধ্যান যেন গানে প্রকাশ পায়।’’

তবে কি রবীন্দ্রপ্রীতি নিয়ে ভাবনাচিন্তাই বাড়াবাড়ি? শিল্পীরা বলছেন তা-ই। তসলিমাকে সমর্থন করলেন মনোময় ভট্টাচার্য। তার কথায়, ‘‘তসলিমা ঠিকই বলছেন। কবিপক্ষে আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে ভালবাসা দেখাই, সেটা সারা বছর কোথায়? তাকে মহাগুরুর জায়গায় রাখি ঠিক কথা, কিন্তু সত্যিকারের বুঝতে যে চর্চা দরকার, সেটা আমরা করি না। আমাদের আসর জমানো গানের মাঝে হারিয়ে যান রবীন্দ্রনাথ। সত্যিই অনেকটাই লোকদেখানো প্রীতি বলে আমার মনে হয়। তবে হ্যাঁ, স্বরলিপি মেনে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ারই পক্ষে আমি। যতই নিরীক্ষামূলক গান ট্রেন্ড হোক, রবীন্দ্রনাথ তার নিজের মন থেকে যে গান যে ভাবে ভেবেছেন, সেটা সে ভাবেই গাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’’

তবে কি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবেন না রবীন্দ্রনাথ? নিয়মের ঘেরাটোপে অতীতেই বন্দি হয়ে থাকবেন? মনোময় বলেন, ‘‘তা কেন! রবীন্দ্রসঙ্গীতে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হোক। সেই সুযোগ তো রয়েছে এখন। তবে বিষাদের জায়গায় উল্লাসের আবহ বাজিয়ে দিলাম, এমনটা যেন না হয়! রবীন্দ্রনাথকে বোঝার জন্য মেধার অভাব যেন না হয় এটুকুই কাম্য।’’

সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি