ঢাকা, রবিবার   ০৯ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

একনজরে গাজী মাজহারুল আনোয়ার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৭, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

গাজী মাজহারুল আনোয়ার। একাধারে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, রচয়িতা, গীতিকার ও সুরকার। ১৯৪৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে ৭৯ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি এই গীতিকবি।

তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলের একজন নামকরা আইনজীবী। বনেদি পরিবারের সন্তান। দাদা-দাদি দুজনই ছিলেন জমিদার বংশের।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার বেড়ে ওঠেন কুমিল্লাতেই। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুমিল্লা জেলা স্কুলে। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র গাজী মাজহারুল আনোয়ারের আইনজীবী বাবা চাইতেন ছেলে ডাক্তার হবে। তাই কলেজ শেষ করে ছেলে ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেলে। 

কিন্তু ওষুধের গন্ধ, পঁচা-গলা লাশের গন্ধ সহ্য করতে পারলেন না তিনি। বলা যায়, হাসপাতালের দিনযাপন সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেবেন। আর সেই সময়টাতেই তিনি শুরু করলেন গান লেখা। ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিয়ে গান লেখার খবর তার বাবার কানে যেতেই বাবা বড় বিষাদ-বেদনা নিয়ে তাকে চিঠি লিখেছিলেন, ‘ইউ আর মাই লস্ট গেম’। 

১৯৬২-৬৩ সালে মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় প্রথম গান লিখেন তিনি। সেই গানটি ছিল— ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’, যার সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন। এরপর ১৯৬৪ সাল থেকে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু হয় তার। সেইসময়ে গানপ্রতি ৫০ টাকা পেতেন যা দিয়েই তার পেশাদার গীতিকার জীবন শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে টেলিভিশনের জন্য গান লিখে গেছেন তিনি।

তার রচিত গানের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। তার গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ, অনুভূতির কথা।

১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা শুরু করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই তার অবদান ছড়িয়ে আছে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অঙ্গনে।

সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রে ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি একজন সফল কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেশ চিত্রকথা থেকে শাস্তি, স্বাধীন, শর্ত, সমর, শ্রদ্ধা, ক্ষুধা, স্নেহ, তপস্যা, উল্কা, আম্মা, পরাধীন, আর্তনাদ, পাষাণের প্রেম, এই যে দুনিয়া- নামের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।

বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে তিনটি গানের রচয়িতা গুণী এই গীতিকবি। গানগুলো হচ্ছে- ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’।

তার ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি বিবিসি বাংলার জরিপে ১৩তম স্থান লাভ করে। যে গানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রেরণাদায়ক গান হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল।  

এই গান দিয়েই যাত্রা শুরু করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। গানটি প্রকাশ হতেই রাতারাতি সবার মুখে মুখে চলে গেল ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’।” স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা সংগীত হিসেবে নিয়মিত প্রচার করা হতো এই গান। এ গানের গ্রহনযোগ্যতা চিরকালীন। এ গান আজো গাওয়া হয় এবং গাওয়া হবে চিরকাল। 

গীতিকার হিসেবে ৫ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা রয়েছে তার ঝুলিতে।

তার লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে’। 

এছাড়া তার লেখা কালজয়ী গানগুলো হলো ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ প্রভৃতি।

এমএম/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি