ভেঙেই গেল দুই তারকার সংসার
প্রকাশিত : ১৫:৫২, ২২ জানুয়ারি ২০২৪
যে কোন বিচ্ছেদ আমাকে ভাবায়, বিচলিত করে। আর সেই বিচ্ছেদ যদি হয় কোন পরিচিত মুখ ও গুনী ব্যক্তির তাহলে তো কথাই নেই। সর্বক্ষণ পিড়া দিতে থাকে। মনের ভেতরটা খচখচ করে। মেনে নেওয়াটাই যেন অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। আসলে ভালোবাসা বা ভালো লাগা কোনটাই চিরন্তন নয়। সময়ের বৈরী স্রোতে অনেক অনুভূতি আর ইচ্ছা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে জীবনের বাঁকে বাঁকে। ভালোবাসায় মোড়ানো সুন্দর জীবন উপভোগ করতে করতে একসময় ছন্দপতন ঘটে। কোন কিছুই তখন ঠিক থাকে না। সব সম্পর্ক যেন বেসুরো ঠেকে। সবকিছুতেই তাল কেটে যায়। ভালোবাসা হলো সৃষ্টিকর্তার দান। মানুষ ভালোবাসা পেতে ব্যাকুল। ভালোবাসা-বাসিতে যখন বুঝাপড়া ভালো হয়, তখন পৃথিবীতে পাওয়া যায় স্বর্গের সুখ। কিন্তু সেই ভালোবাসায় যখন দুরত্বের সৃষ্টি হয় তখন সেই সুন্দর পৃথিবীটাই হয়ে উঠে এক নরক।
২. পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক ও ভারতের সেরা টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাকে ভারত-পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী সেলিব্রিটি দম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো।পাক-ভারত বৈরিতার মাঝেও ২০১০ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুজনেই নিজ নিজ খেলার নামী দুই তারকা। যদিও সেসময় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল এই দুজনের বিয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তাদের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হতে থাকে। একসময় আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকেই শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জার বিচ্ছেদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এসময়টা তাদের দুজনকে একসঙ্গে খুবই কম দেখা গেছে। শেষপর্যন্ত সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) নতুন বিয়ের খবর নিয়ে আবির্ভূত হন শোয়েব। সানা জাভেদ নামের এক পাকিস্তানি মডেল ও অভিনেত্রীকে বিয়ে করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় শোয়েব মালিক নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৩. এখন সময়ের সবচেয়ে চর্চিত বিষয় হলো তাদের এই বিবাহ বিচ্ছেদ। হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন যেন বদলে গেল, ভেঙে গেল সানিয়া-শোয়েব মালিকের দীর্ঘ ১৩ বছরের সংসার জীবন। তাদের নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে সানিয়া মির্জা ও শোয়েব মালিকের বিবাহ বিচ্ছেদের খবর। তাদের বিবাহিত জীবনের বয়স এক যুগেরও বেশি। একমাত্র ছেলে ইজহানকে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। অথচ ভালোবাসার টানে একসময় দেশ ছেড়েছিল সানিয়া মির্জা। শোয়েব মালিকের হাত ধরে বাসা বেঁধেছিলেন দুবাইয়ে। তবু আগলে রাখতে পারলেন না সংসার। শোয়েব মালিকের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো। জানা গেছে, এর আগে আয়েশা ওমর নামে এক পাকিস্তানি মডেলের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। সাধারণত বিয়ে ভাঙার জন্য বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কই বহুলাংশে দায়ী হয়। কোন একসময় ভারতে খেলতে গিয়ে প্রথম সানিয়া- শোয়েবের দেখা হয়। সেখান থেকেই আলাপের সূত্র ধরে ঘনিষ্ঠতা ও পরে বিয়ে। তাদের এ বিয়ে নিয়েও কিন্তু কম বিতর্ক হয়নি। কিন্তু দুজনেই ছিলেন নাছোড়বান্দা।
৪. ভারত-পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্কে বরাবরই তিক্ততার ছোঁয়া লেগে থাকে। আর খেলার মাঠে তো তারা চিরপ্রতিদ্বন্ধী। সেই পাকিস্তানের ক্রিকেটারের গলাতেই মালা দিয়েছিলেন ভারতের সেরা টেনিস তারকা। নিন্দুকের কথায় কেউ কান দেননি। রুপ কথার গল্পের চেয়েও কোন অংশে কম ছিল না তাদের প্রেম থেকে বিয়ে। সেই সম্পর্কও শেষপর্যন্ত টিকলো না। অথচ একসময় ভারত-পাকিস্তানের শীতল সম্পর্কের মাঝে স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল শোয়েব-সানিয়ার মিলন। তাদের এ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ অনেকটাই কাছে চলে এসেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না।
৫. একইভাবে দীর্ঘ ১২ বছর একসঙ্গে থাকার পরে বিচ্ছেদের পথে হেটেছেন স্প্যানিশ ফুটবলার জেরার্ড পিকে ও বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়ান পপ গায়িকা শাকিরা। এখানেও পিকের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কই বিচ্ছেদের মূলকারণ। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসেছিল ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। ওই বিশ্বকাপে ওয়াকা ওয়াকা গানটি গেয়েই বিখ্যাত হয়ে উঠেন এই কলম্বিয়ান পপ গায়িকা শাকিরা। আমার প্রিয় গানগুলোর অন্যতম একটি গান। আর তখন থেকেই এই গুনীমানুষটির গানের ভক্ত হয়ে উঠি আমি। বিশ্বকাপের ওই আসর থেকেই শুরু হয়েছিল পিকে-শাকিরার প্রেম কাহিনি। শাকিরা ছিল পিকের চেয়ে দশ বছরের বড়। কিন্তু প্রেম তো আর বয়স মানেনা। সেটা এসে থামলো প্রায় এক যুগ পরে। বিয়ে না হলেও মিলান ও শাশা নামে রয়েছে তাদের দুই সন্তান। মজার ব্যাপার হলো, সন্তানদের ভালো থাকার কথা বিবেচনা করেই নাকি তারা সম্পর্কের ইতি টানেন।
৬. একটি গল্পের উপমা টেনে লেখাটি শেষ করছি। ছোট বেলায় মায়ের মুখে কতই না রুপ কথার গল্প শুনেছি। রাজা-রানি গল্পের শেষ লাইনটি কী মনে আছে ? অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষা, বিপদ-আপদ, ষড়যন্ত্র পার করে গল্পের শেষে রাজা-রানি সুখে শান্তিতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেন। কিন্তু বাস্তবের গল্প বড়ই নির্মম ও কঠিন। মানুষের বাস্তব জীবনটা কখনোই সিনেমার মতো নয়। এমনকি গল্প উপন্যাসের মতো গোছানোও নয়। রুপ কথা, সাহিত্য বা গানে বিচ্ছেদের বেদনা যতই মধুর হোকনা কেন, বাস্তবের বিচ্ছেদ বয়ে আনে নানা তিক্ততা আর জটিলতা। এছাড়া দুজনের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অন্য জীবনগুলোও হয়ে পড়ে অসহায়। সন্তানের জীবনে শুরু হয় নানা টানাপোড়েন। বাবা না মা, শিশু কার কাছে থাকবে, কার কাছে ছুটি কাটাবে, এ নিয়ে শুরু হয় কত জটিলতা।
৭. হাতে হাত ধরে জীবন পথের চড়াই উৎরাই পার হতে গিয়ে কখনো যদি হাত ছুটে যায়, তখন আর ওই পথটা সহজ-সরল থাকে না, দু'দিকে বেঁকে যায়। তাই তো সুচিত্রা উত্তম অভিনীত "হারানো সুর" কথাচিত্রে কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন সেই কালজয়ী গানটি। "আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে"।
কেআই//