ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

‘আইয়ুব বাচ্চু একটা সবুজ বাংলা গান’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫০, ১৮ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১১:২৪, ২০ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ, জনপ্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন৷ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান৷ তাঁর মৃত্যুতে সারা বাংলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া৷ 

‘‘মেঘনা নদীর উপর ছোট্ট একটা লঞ্চের ছাঁদ৷ এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিত হয়ে শুয়ে ছিল প্রায় গোটা কুড়ি কিশোর৷ স্বল্প আয়ের কিছু অপরিচিত লোকও অন্ধকার আকাশের তারাদের সাথে জুটেছিল সুমনের গিটারে সায়েমের গলায় ‘সেই তারা ভরা রাতে’ শোনার জন্য৷ সেই রাত তো কবেই চলে গেছে জীবন থেকে...... আজ প্রায় বিশ বছর পর আপনি চলে গিয়ে মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন আইয়্যুব বাচ্চু৷’’ আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবরে এভাবেই প্রতিক্রিয়া লিখেছেন একরামুল কবির নামের এক তরুণ শিক্ষক৷

আশির দশক থেকে শুরু করে প্রায় তিন যুগ ধরে এমন অসংখ্য কিশোরের অসংখ্য স্মৃতি বিনির্মাণে যে নামটি জড়িত তিনি কিংবদন্তী আইয়ুব বাচ্চু৷ একজন গায়ক, গীতিকার ও সুরকার৷ একজন লিভিং রকস্টার৷

তাইতো এই তিন দশকের কিশোররা কেঁদে ভাসিয়েছেন ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যম৷ লিখেছেন, ‘‘আমাদের একটা চমৎকার শৈশব-কৈশোর উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ৷’’

অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল লিখেছেন, ‘‘৯০ দশকের কিশোর-কিশোরীদের স্বপ্নকে এত তাড়াতাড়ি মাটি চাপা দিলেন বাচচু ভাই!’’

আবৃত্তিকার, উপস্থাপক ও লেখক শামসুজ্জোহা লিখেছেন, ‘‘একটা `কষ্ট` লুকিয়ে ছিল কী দারুন তারুণ্যের আড়ালে...উত্তাল কনসার্টে আর কোনোদিন গাইবেন না একটা কালো টি শার্ট, সানগ্লাস৷ আর বলবেন না, `গান হবে সারারাত`৷ আমরা নাচবো না বাচ্চু ভাইয়ের সাথে৷ হাতের গিটার আর কাঁদবে না৷

তবু কত তরুণ ঝাঁকড়া চুল আর হাতে গিটার নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন `আমি আইয়ুব বাচ্চু হবো`৷ আইযুব বাচ্চু একটা সবুজ বাংলা গান৷ একজন ফেরিওয়ালা৷’’

এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন বাংলাদেশের গান৷ গেয়েছেন, ‘‘তুমি উদ্ধত মিছিলের স্রোতে গর্বিত মুখ, তুমি ভুল নায়কের হাতছানিতে মায়ের শুন্য বুক৷’’ বলেছেন যে, এই বাংলার বুকেই স্বপ্নের শুরু৷ এখানেই শেষ৷

তা প্রমাণ করতেই যেন দেশের মাটিতেই ত্যাগ করলেন শেষ নিঃশ্বাসটুকু৷ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বামবার নেতারাও। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যান্ডতারকা লাবু রহমান বলেছেন, ‘‘আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একজন শিক্ষক৷ আমাদের দেশে ব্যান্ডসংগীতে এরকম শিক্ষক নেই বললেই চলে৷ তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত৷ আমরা সবাই তাঁকে মিস করব৷’’

স্বজনেরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সকালে বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন বাচ্চু৷ সোয়া নয়টার দিকে তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়৷ কিন্তু চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন৷

আইয়ুব বাচ্চুর ব্যান্ড এলআরবি`র সদস্য শামিম জানান, বাচ্চু বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন৷ হৃদরোগের কারণে সপ্তাহ দুই আগেও একবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল৷ বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সকালে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷

স্কয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক মির্জা নাজিমউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সকালে উনার হার্ট অ্যাটাক হয়৷ সকাল সোয়া ৯টার দিকে তাঁর ড্রাইভার তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন৷ তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়৷’’ মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬৷

জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবি`র প্রতিষ্ঠাতা দলনেতা ছিলেন বাচ্চু৷ ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ‘বস’ বা ‘এবি’৷ ব্যান্ড সংগীতের চর্চা শুরু করেন নব্বইয়ের দশকে৷ তাঁর গান যেমন দর্শক নন্দিত হয়েছে, তেমনি তাঁকে দুই বাংলাতেই করেছে সমান জনপ্রিয়৷ ‘সেই তুমি’, ‘রুপালি গিটার’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘ফেরারী এই মনটা আমার’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘একদিন ঘুমভাঙা শহরে’, ‘চল বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘হাসতে দেখ, গাইতে দেখ’র মতো অসাধারণ সব গান তিনি উপহার দিয়েছেন৷

উপমহাদেশের সেরা গিটারিস্টও ছিলেন তিনি৷ দেশে-বিদেশে গিটারিস্ট হিসেবে তাঁর ছিল অনেক কদর৷ তরুণ প্রজন্মের কাছে কয়েক যুগ ধরে জনপ্রিয়তার তালিকায় শীর্ষে ছিলেন তিনি৷ মুখে মুখে ফিরেছে তাঁর গান৷

সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুক্রবার জুমার পর জাতীয় ঈদগাহ ময়দা‌নে আইয়ুব বাচ্চুর জানাজা হবে৷ তারপর মর‌দেহ রাখা হবে হিমঘরে৷

সন্তানরা বি‌দেশ থে‌কে ফির‌লে শ‌নিবার চট্টগ্রা‌মে পারিবা‌রিক কবরস্থা‌নে দাফন করা হ‌বে জনপ্রিয় এই ব্যান্ড শিল্পীকে৷ ডয়েচে ভেলে 

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি