কিংবদন্তি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত : ০৮:৫৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৭। এদিন চিরনিদ্রায় শায়িত হন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রশিল্পী চার্লি চ্যাপলিন। ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি লন্ডনে জন্ম গ্রহণ করেন (যদিও তার জন্মতারিখ নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে)। তার পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র। চার্লির জন্মের নির্দিষ্ট কোনো দলিল-দস্তাবেজ আজও উদ্ধার হয়নি। এমনকি জন্মস্থান নিয়েও রয়ে গেছে সন্দেহ। তিনি নিজেও ফ্রান্সকে তার জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
১৮৯১ সালের স্থানীয় আদমশুমারি থেকে জানা যায়, চার্লি তার মা হান্না চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটনের অন্তর্গত। ইতিমধ্যে তার বাবা চার্লস চ্যাপলিন জুনিয়রের সঙ্গে তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। চ্যাপলিনের শৈশব কাটে প্রচণ্ড দারিদ্র্য আর কষ্টের মধ্য দিয়ে। পিতৃহারা চ্যাপলিন অবর্ণনীয় কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছেন।
মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের একটি শহরে বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকতেন চ্যাপলিন। ভাড়া দিতে না পারায় প্রায়ই তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়া হতো। এভাবে তাড়া খাওয়ার চেয়ে চ্যাপলিন পার্কের বেঞ্চিতে ঘুমাতেই বেশি পছন্দ করতেন। চার্লি একটি মুদির দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সেখানে কাজ চলে যাওয়ার পর কাজ নিয়েছিলেন একটি ডাক্তারখানায়। সেখানে কাজ চলে যাওয়ার পর লোকের বাড়িতে বাসন মাজার কাজে লেগে যান চার্লি। এক কাচের কারখানা, রঙের দোকান, লোহার দোকান, ছাপাখানা, খেলনা কারখানা, কাঠ চেরাই কল, কাগজ বিক্রি ইত্যাদি নানা কাজের মধ্যে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন।
তার মা-বাবা দু’জনেই মঞ্চাভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই এ পেশাতে আসা তার কাছে সহজ ছিল। চ্যাপলিন সেই সময়ের জনপ্রিয় লোকদল ‘জ্যাকসন্স এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’-এর সদস্য হিসেবে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর ১৪ বছর বয়সে তিনি উইলিয়াম জিলেট অভিনীত শার্লক হোমস নাটকে কাগজওয়ালার চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সুবাদে তিনি ব্রিটেনের নানা প্রদেশ ভ্রমণ করেন ও অভিনেতা হিসেবে তিনি যে খুবই সম্ভাবনাময়- তা সবাইকে জানিয়ে দেন।
১৮৯৮ সালে ৯ বছর বয়সে চ্যাপলিন একটি নাচের দলে যোগ দেন। ওই দলটির সঙ্গে যুক্ত থেকে নাচ দেখিয়ে কিছু অর্থ-কড়ি রোজগার করতেন। সেই রোজগার দিয়েই চ্যাপলিন দিন কাটাতেন। ওই নাচের দলে চ্যাপলিন কমেডিয়ানের ভূমিকা পালন করতেন। ১৯ বছর বয়সে ‘ফ্রেড কার্নো’ থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ড থেকে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯১৪ সালে ২৫ বছর বয়সে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করেন চার্লি চ্যাপলিন। নাম ছিল ‘মেকিং এ লিভিং’। সিনেমার পরিচালক ছিলেন ফ্রান্সের অরি লোর্মা। এক রিলের এ সিনেমাটি প্রদর্শনের মেয়াদ ছিল মাত্র দশ মিনিট। এটিতে চার্লি অভিনয় করেন খামখেয়ালি উচ্ছৃংখল প্রকৃতির যুবকের চরিত্রে।
১৯১৪ সালে তার নিজের সৃষ্ট দ্য ট্রাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি দিয়ে তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে মানুষকে হাসানোর মতো দুরূহ কাজটি শুধু অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যিনি করতেন অত্যন্ত সফলভাবে। সাদাসিধে ভবঘুরে একটা মানুষ, যার পরনে নোংরা ঢিলেঢালা প্যান্ট, শরীরে জড়ানো জীর্ণ কালো কোট, পায়ে মাপহীন জুতো, মাথায় কালো মতো হ্যাট আর হাতে লাঠি। যে ব্যাপারটি কারও চোখ এড়ায় না তা হচ্ছে লোকটির অদ্ভুত গোঁফ। তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন আর ঘটাচ্ছেন অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানা। আর এসব দেখেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এরপর অনেক ঘটনা।
১৯৭৭ সালের শুরু থেকেই চার্লি চ্যাপলিনের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। ১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে চার্লি প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান সুইজারল্যান্ডের কার্সিয়ারে। ওই দেশের ডিঙ্গিতে চার্লির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এরপর ঘটে একটা দুর্ঘটনা। পরের বছর চার্লির মৃতদেহ চুরি হয়ে যায়। ১৬ দিন পর তা উদ্ধার করে আবার সমাহিত করা হয় ।
এসএ/