ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শাকিব খানেই ভরসা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৬:২২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

২০১৮ সালের পরিসমাপ্তি ঘটছে। চলচ্চিত্রের নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়েই বছরটি পার হয়েছে। এখন আগামী বছরকে বরণ করে নিতেই চলছে সবার প্রস্তুতি। তবে নতুন বছরকে বরণের আগে এ বছরের পাওয়া না পাওয়া নিয়ে চলছে হিসেব।         

এ বছর ঢালিউড কেমন ছিল? কার পাল্লা ছিল ভারী ? ইন্ডাস্ট্রিতে কার অবদান সবচেয়ে বেশি বা এগিয়ে। কয়টা সিনেমা হিট হলো। কার সিনেমা দেখার জন্য দর্শক লাইন ধরেছে। কার সিনেমায় টাকা উসূল হয়েছে। এসব হিসেব চলছে এখন জোর কদমে।  

জানা যায়, চলতি বছর মোট ৫৬টি সিনেমা মুক্তি পায়। তবে এর মধ্যে ৪টি কলকাতার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার। ১১টি ওপার থেকেই আমদানি করা।    

অর্থাৎ হিসাবের পাল্লা কষে বছর শেষে নিজেদের ছবি বলতে মাত্র ৪১! এ ক’টি ছবি নিয়েও হয়েছে রাজনীতি। ছবি নির্মাণ কিংবা অভিনয়ের চেয়ে আলোচনায় কে কাকে টপকে যাবেন কিংবা ল্যাং মেরে ফেলে দেবেন- এটা নিয়েই বছরের পুরোটা সময় ব্যস্ত ছিল ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকজন। বছর শেষে আবার জাতীয় নির্বাচন নিয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ শিল্পী কলাকুশলী। যেন ওখানেই সব প্রশান্তি!

এ মুহূর্তে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাণ্ডারী চিত্রনায়ক শাকিব খান। তার হাতেই ছবির সংখ্যা বেশি। ২০১৮ সালেও তিনি ছিলেন সর্বাধিক ছবির নায়ক।   

শুধু তাই নয়, সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবির নায়কও এ শাকিব খান। তাকে নিয়ে হয়েছে রাজনীতি! নিষিদ্ধ, বয়কটসহ কত রকম খেলা! সবকিছুকে পেছনে ফেলে শাকিব খান কাণ্ডারীর ভূমিকায়ই রয়ে গেছেন।    

এ বছর তার অভিনীত ৮টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ‘আমি নেতা হব’, ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’, ‘পাঙ্কু জামাই’, ‘সুপারহিরো’ ও ‘ক্যাপ্টেন খান’। তার অভিনীত ভারতীয় ছবি হিসেবে আমদানি করা হয়েছে ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এল রে’ ও নাকাব’।

প্রায় প্রত্যেকটি ছবিই পুঁজি তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ছিল সুপারহিট। বছর শেষে এই শাকিব খানের ওপর ভরসা করেই কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।  

২০১৮ সালের সেরা নায়কের মুকুট স্বভাবতই শাকিব খানের মাথায় উঠবে। এরপর যদি নায়ক হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে কাউকে চিন্তা করতে হয় তাহলে ২ থেকে ৯ বাদ দিয়ে দশম স্থানকেই দ্বিতীয় হিসেবে চিন্তা করতে হবে।  

সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ফেরদৌস। তার অভিনীত ‘পুত্র’, ‘মেঘকন্যা’, ‘লিডার’ ও ‘পোস্টমাস্টার-৭১’ নামে ৪টি ছবি মুক্তি পেয়েছে এ বছর। কিন্তু ভাগ্যে শিকে না ছেঁড়ায় সবগুলো ছবিই ফ্লপের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

একই হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন বাপ্পি চৌধুরী। তার অভিনীত ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’, ‘নায়ক’ ও ‘আসমানী’ নামে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে ‘নায়ক’ ছবিতে ভালো অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনো ছবিরই ব্যবসায়িক সফলতা নেই।

দুই ছবির তালিকায় আছেন বেশ কয়েকজন অভিনেতা। এদের মধ্যে রয়েছে আরেফিন শুভ, সাইমন সাদিক, তৌকীর আহমেদ, আনিসুর রহমান মিলন ও সিয়াম আহমেদ।

এ বছর আরেফিন শুভ অভিনীত ‘ভালো থেক’ ও ‘সিনেমার গল্প’ নামে দুটি ছবি মুক্তি পায়। কিন্তু সফলতার তালিকায় কোনো ছবিই নাম লেখাতে পারেনি।

সাইমন সাদিক অভিনীত ‘জান্নাত’ ও ‘মাতাল’ নামে দুটি ছবিই ছিল ব্যর্থ। অন্যদিকে তৌকীর আহমেদ অভিনীত ‘কমলা রকেট’ ও ‘অর্পিতা’ মুক্তি পায় এ বছর।

ব্যবসায়িক সফলতা না থাকলেও গল্পনির্ভর দুটি ছবিই বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। আনিসুর রহমান মিলনের ‘আলতা বানু’ ও ‘স্বপ্নের ঘর’ নামে স্বল্প পরিসরে মুক্তি পাওয়া দুটি ছবিরই কোনো ব্যবসায়িক সফলতা নেই।

সিয়াম আহমেদের অভিষেক হয় চলতি বছর। ‘পোড়ামন-২’ ও ‘দহন’ নামে দুটি ছবি মুক্তি পায় তার। এর মধ্যে ‘পোড়ামন-২’ ব্যবসায়িক সফলতা পেলেও ‘দহন’ শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।   

চলতি বছর এক ছবি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বেশ ক’জন অভিনেতাকে। এদের মধ্যে রয়েছেন নিরব (রাঙা মন), রোশন (বেপরোয়া), শাহরিয়াজ (ফিফটি ফিফটি লাভ), নবাগত জন মাসুদ (প্রেমের কেন ফাঁসি), ইয়াশ রোশান (স্বপ্নজাল), শাহেন খান (পাগলা মানুষ), রিপন গাজী (দেমাগ), মোশারফ করিম (কমলা রকেট), চঞ্চল চৌধুরী (দেবী) ও খিজির হায়াত খান (মিস্টার বাংলাদেশ)। ব্যবসায়িক সফলতার দিক থেকে ‘দেবী’ই একমাত্র আলো ছড়িয়েছে। অন্যগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি কবে মুক্তি পেয়েছে সে খবর দর্শকও জানেন না।

নায়িকাদের মধ্যে চলতি বছর সর্বাধিক ৪টি ছবি মুক্তি পেয়েছে মাহিয়া মাহির। এগুলো হচ্ছে ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’, ‘মনে রেখ’, ‘পবিত্র ভালোবাসা’, ‘জান্নাত’ ও ‘তুই শুধু আমার’ (যৌথ প্রযোজনা)। এর মধ্যে কোনো ছবিই ব্যবসায়িক সফলতা পায়নি।

তিনটি ছবি মুক্তি পাওয়া নায়িকাদের তালিকায় রয়েছেন মৌসুমী, শবনম বুবলী, বিদ্যা সিনহা মিম ও নবাগত পূজা চেরি। এর মধ্যে মৌসুমী অভিনীত ‘লিডার’, ‘নায়ক’ ও ‘পোস্টমাস্টার-৭১’ ছবিগুলো সফলতা পায়নি খুব একটা।

তবে ছবিগুলোয় মৌসুমীর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। শবনম বুবলী অভিনীত ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’, ‘সুপারহিরো’ ও ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবিগুলো ব্যবসায়িকভাবে সফল ছিল।

কারণ, প্রত্যেকটি ছবিতেই নায়ক ছিলেন শাকিব খান। এ কারণেই ব্যবসায়িকভাবে হিট তকমা পেয়েছেন এ নায়িকা। বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত ‘আমি নেতা হব’, ‘পাষাণ’ (যৌথ প্রযোজনা) ও ‘সুলতান’ (আমদানি) নামে তিনটি ছবি মুক্তি পায়।

এর মধ্যে ‘আমি নেতা হব’ ছবিতে শাকিব খান থাকায় কিছুটা আলোর মুখ দেখে। অন্যগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। অন্যদিকে নবাগতা হিসেবে পূজা চেরি বেশ আলো ছড়িয়েছেন এ বছর।

তার অভিনীত ‘নুরজাহান’ (যৌথ প্রযোজনা), ‘পোড়ামন-২’ ও ‘দহন’ নামের ছবিগুলো মুক্তি পায়। তিনটি ছবিতেই পূজার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।

দুই ছবির তালিকায় রয়েছেন জয়া আহসান, জাকিয়া বারী মম, ববি হক ও নবাগত অধরা খান। জয়া অভিনীত ‘পুত্র’ ও ‘দেবী’ মুক্তি পায় এ বছর। এর মধ্যে পুত্রের ভরাডুবি ঘটলেও দেবী জয়াকে টেনে উঠিয়েছে।

মম অভিনীত ‘আলতা বানু’ ও ‘স্বপ্নের ঘর’ ছবিগুলো তাকে এনে দিয়েছে প্রশংসা। ববি অভিনীত ‘বেপরোয়া’ ও ‘বিজলী’ মুক্তি পায় এ বছর। দুটি ছবিই ফ্লপ। অন্যদিকে নবাগত অধরা খান অভিনীত ‘নায়ক’ ও ‘মাতাল’ ছবিতে নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন।

এক ছবির তালিকায় রয়েছেন অনেক অভিনেত্রী। এদের মধ্যে রয়েছেন শাবনূর (পাগল মানুষ), অপু বিশ্বাস (পাঙ্কু জামাই), নিপুণ (ধূসর কুয়াশা), পরীমনি (স্বপ্নজাল), নুসরাত ফারিয়া (ইন্সপেক্টর নটি কে, আমদানি ছবি), শানারেই দেবী শানু (মিস্টার বাংলাদেশ), তানহা তাসনিয়া (ভালো থেক), সিলভী (রাঙা মন), তানিন সুবহা (দেমাগ), নবাগত সুস্মি (আসমানী), অরিণ (ফিফটি ফিফটি লাভ) এবং গোলাম ফরিদা ছন্দা ও অর্ষা (অর্পিতা)।

এ বছর শাবনূরকে দীর্ঘদিন পর পর্দায় দেখলেও দর্শকরা আগের মতো গ্রহণ করেননি। শাকিব খান থাকা সত্ত্বেও অপু বিশ্বাস ‘পাঙ্কু জামাই’ নিয়ে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। অন্যদিকে ‘স্বপ্নজাল’ ছিল পরীমনির শেষ পরীক্ষা। কিন্তু শেষতক বরাবরের মতোই ফেল করেছেন তিনি। বাকি ছবিগুলোর অবস্থা ছিল নামমাত্র মুক্তি।

এ ছাড়া চলতি বছর ‘হৈমন্তী’, ‘মাটির প্রজার দেশে’, ‘কালের পুতুল’, ‘নামতা’ ও ‘সনাতন গল্প’ নামে দেশীয় প্রযোজনায় কয়েকটি শৈল্পিক ছবি মুক্তি পায়। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা ‘জিও পাগলা’, ‘ফিদা’, ‘পিয়া রে’, ‘ভিলেন’, ‘গার্লফ্রেন্ড’ ও ‘আমি শুধু তোর হলাম’ নামে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো শুধু ব্যর্থই হয়নি, সঙ্গে কুড়িয়েছে সমালোচনাও।

এসি  

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি