ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কেনো গান ছেড়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ!

প্রকাশিত : ১৪:২১, ২৪ মার্চ ২০১৯

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর নেই। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। শাহনাজ চলে গেলেও রয়ে গেছে তার মধুঝরা কণ্ঠের কালজয়ী গানগুলো। এই বরেণ্য শিল্পী দীর্ঘ ৫০ বছর গান গেয়েছেন। কিন্তু পাঁচ বছর আগে হঠাৎই গান ছেড়ে দিয়েছিলেন এ কিংবদন্তি শিল্পী। এরপর থেকে মিডিয়া ও গণমাধ্যমে চোখের আড়ালে ছিলেন তিনি।

তবে পরবর্তিতে জানা গেছে যে, ধর্ম-কর্মে বেশ মনোযোগী হয়েছেন কিংবদন্তি এ শিল্পী। তাই এসবে সময় হয়ে উঠছে না তার।

ওই সময় তিনি বলেন, ‘নামাজ পড়েই সময়টা বেশ কাটছে। ওমরাহ করে আসার পর দিন থেকেই আর গান করতে ইচ্ছা করেনি। তখন আমি নামাজ পড়া শুরু করেছিলাম।’

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, পবিত্র কাবা, মহানবী (সা.)-এর রওজা শরিফ দেখে আসার পর থেকে পার্থিব বিষয়ে আগ্রহী নন তিনি। বাকিটা জীবন সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতায় প্রার্থনা করেই কাটাতে চান।

তিনি জানিয়েছিলেন, ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন। ফজর পর্যন্ত জায়নামাজে অপেক্ষা করতে থাকেন। ওয়াক্ত হলে ফজর পড়ে কোরআন শরিফ পড়া শুরু করেন।

একজন হুজুর বাসায় এসে পবিত্র কোরআন শিখিয়ে যান বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ আরও কিছু ধর্মীয় কাজ সারেন।

এশার নামাজ শেষে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন যেন পরবর্তী দিনে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে জাগতে পারেন।

তবে গানের জগত থেকে নিজেকে আড়াল করে নিলেও শ্রোতাদের ভালোবাসাকে জীবনের সেরা প্রাপ্তি বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এ শিল্পী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে। শাহনাজ রহমতুল্লাহ ছিলেন দেশাত্ববোধক গানের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তার উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো :

বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া গানই চারটি। এগুলো হলো ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিতে খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ ও ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে‌ এবার বল’।

দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’ প্রভৃতি।

দেশীয় চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে প্লেব্যাকে অপরিহার্য ছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। ‘অধিকার’ ছবিতে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কথা ও আলী হোসেনের সুরে তিনি গেয়েছিলেন ‘কোন লজ্জায় ফুল সুন্দর হলো’। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবির ‘সাগরের সৈকতে কে যেন ডাকে আয়’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়িকার সম্মান ওঠে তার হাতে।

তার গাওয়া কালজয়ী গানের তালিকায় রয়েছে-

‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’ (পিচ ঢালা পথ), ‘ওই ঝিনুক ফোঁটা সাগর বেলায়’, ‘পারি না ভুলে যেতে’ (সাক্ষী), ‘যেভাবে বাঁচি বেঁচে তো আছি’, ‘আমি সাত সাগরের ওপার হতে’ (কত যে মিনতি), ‘শুনেন শুনেন জাঁহাপনা’ (সাত ভাই চম্পা), ‘কে যেন সোনার কাঠি ছোঁয়ায় প্রাণে’, ‘আমি যে কেবল বলে তুমি’ (আগন্তুক), ‘একটু সময় দিলে না হয়’ (সূর্য উঠার আগে), ‘স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই’, ‘আবার কখন কবে দেখা হবে’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি দিয়ে চোখ বাঁধা যায়’, ‘তোমার আগুনে পোড়ানো এ দুটি চোখে’, ‘তুমি কি সেই তুমি’, ‘ও যার চোখ নাই’ (তাসের ঘর), ‘ঘুম ঘুম ঘুম চোখে’ (ঘুড্ডি), ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘বন্ধুরে তোর মন পাইলাম না’, ‘খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছো’, ‘একটি কুসুম তুলে নিয়েছি’, ‘আমায় তুমি ডাক দিলে কে’, ‘ওই আকাশ ঘিরে সন্ধ্যা নামে’, ‘আমার ছোট্ট ভাইটি মায়ায় ভরা মুখটি’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ এলে নেই তো সংশয়’, ‘বারোটি বছর পরে’, ‘আরও কিছু দাও না দুঃখ আমায়’, ‘আমি ওই মনে মন দিয়েছি যখন’, ‘আমার সাজানো বাগানের আঙিনায়’, ‘দিগন্ত জোড়া মাঠ’, ‘তোমার আলোর বৃন্তে’, ‘এই জীবনের মঞ্চে মোরা’ প্রভৃতি।

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি