মাকে নিয়ে বিখ্যাত কিছু সিনেমা
প্রকাশিত : ১১:৫৭, ১২ মে ২০১৯
মা। একটি বর্ণের একটি শব্দ। কিন্তু এই এক বর্ণের শব্দের মর্মতা বিশাল। গভীরতাও অনেক। পৃথিবীর সকল আবেগ, অনুভূতি, মমতা যেন এই একটি শব্দের মধ্যেই নিহিত আছে। কালে কালে মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্র। মাকে নিয়ে যত আবেগ তা ফুটিয়ে তুলতে চলচ্চিত্র সবচেয়ে বড় মাধ্যম। বিভিন্ন সময়ে মাকে নিয়ে দেশে দেশে বিভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। তার তালিকা অবশ্য দীর্ঘ। তবে এর মধ্য থেকে মাকে নিয়ে নির্মিত কিছু বিখ্যাত সিনেমা নিয়ে আজকের এ প্রতিবেদন-
মাদার
এ সিনেমাটিকে ‘হারানো চলচ্চিত্র’ হিসেবে ধরা হয়। আমেরিকান নির্বাক স্বল্পদৈর্ঘ্য নাট্য চলচ্চিত্র এটি। যা প্রযোজনা করেছে থানহাউসার কোম্পানি। আবেগপ্রধান এ চলচ্চিত্রে উইল এ্যালেন নামের একটি ছেলে তার সৎ বাবার ভয়ানক অত্যাচারের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। আর তার মা একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে ছেলের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। কুড়ি বছর পর উইল বাড়ি ফিরে আসে একজন প্রখ্যাত উকিল হয়ে। কিন্তু সে তার বাবা-মাকে আর খুঁজে পায় না। পরবর্তীতে উইল একজন মহিলার হয়ে মামলা লড়ে, যার বিপক্ষে ছিল একটি খরিদ্দার প্রতিষ্ঠান। সেই মহিলাকে উইল মা হিসেবে চিনতে পারে এবং এভাবে তাদের পুনর্মিলন হয়।
চলচ্চিত্রটির মূল অভিনয়ে ছিলেন আনা রোসমন্ড, ফ্রাঙ্ক এইচ ক্রেন ও ক্যারি এল. হ্যাসিং। এটি ১৯১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়।
টু উইমেন
যুদ্ধের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া এক মা-মেয়ের করুণ গল্প নিয়ে ইতালিয় নির্মাতা ভিত্তোরিও ডি সিকা নির্মাণ করেছিলেন ‘টু উইমেন’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় কুঁকড়ে যাওয়া মানবতার করুণ গাঁথা এ সিনেমায় তুলে এনেছিলেন তিনি। আলবার্তো মোরাভিয়ার লেখা ‘টু উইমেন’ উপন্যাস থেকে নেওয়া গল্প এটি।
একদিকে প্রাণ হারাবার ভয়, আর অন্যদিকে শত্রুশিবিরের লালসা থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রাম- এর সবকিছুই উঠে এসেছে ‘টু উইমেন’ সিনেমায়।
কিংবদন্তী অভিনেত্রী সোফিয়া লোরেন এই সিনেমায় মা সেসিরার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এই চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় তাকে এনে দিয়েছিল অস্কারসহ মোট ২২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
মামা রোমা
সিনেমাটি ১৯৬২ সালে মুক্তি পায়। ইতালির এই সিনেমাটি সাবেক যৌনকর্মী ও তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের কষ্টের জীবন নিয়ে গড়ে উঠে। সংসার চালাতে গিয়ে মাকে যৌনকমী হতে হয়। তারপরেও ছেলেকে সে মানুষের মত মানূষ করে। যৌনকর্মী ও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যানা মাগনানি।
টার্মস অফ এনডিয়ারমেন্ট
মা-মেয়ের ত্রিশ বছরের গল্প নিয়ে ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় ‘টার্মস অফ এনডিয়ারমেন্ট’। যে সিনেমার গল্পে দেখা যায়-
বাবাহীন এমাকে আগলে রেখে অরোরা খুঁজে ফেরে সত্যিকারের ভালোবাসা। এদিকে এমাও বড় হয়ে জড়িয়ে পড়ে জটিল এক সম্পর্কে, নিজেও অর্জন করে মাতৃত্বের স্বাদ। তাদের চারপাশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলেও একান্ত গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে এই মা-মেয়ে দুজনেই এগিয়ে আসে একে অপরের সাহায্যে।
জুনো
জ্যাসন রেইটম্যানের পরিচালনায় এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র জুনো নামের এক কিশোরী। দুর্ঘটনাবশত গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার পর মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা, সামাজিক ও পারিবারিক জটিলতা এবং অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে এগিয়ে চলা জুনোর গল্প নিয়ে নির্মিত হয় এ চলচ্চিত্র।
২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তোলে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় গর্ভবতী হওয়ার সমস্যাগুলোই উঠে এসেছে সিনেমাতে। কেন্দ্রীয় চরিত্র করেন এলেন পেজ।
দ্য ব্লাইন্ড সাইড
মার্কিন ফুটবল তারকা মাইকেল ওহার আর তার ‘মা’ লেই অ্যান টুওহির গল্প নিয়েই তৈরি সিনেমা ‘দ্য ব্লাইনইড সাইড’। রক্ত সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও দিশেহারা কৃষ্ণাঙ্গ এক কিশোরকে নিজের ছেলের মত আগলে রাখা এক শ্বেতাঙ্গ নারীর এই গল্প বিখ্যাত সিনেমার তালিকায় রয়েছে। ২০০৯ সালে জন লি হ্যানক নির্মিত এই সিনেমাটিতে লেই অ্যান এর ভূমিকায় অভিনয় স্যান্ড্রা বুলক। যা তাকে এনে দিয়েছিল সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।
হাজার চৌরাসি কা মা
নকশালবাড়ি আন্দোলনে ছেলে হারানো এক মায়ের মর্মস্পর্শী গল্প নিয়ে নির্মিত ‘হাজার চৌরাসি কা মা’।
মহাশ্বেতা দেবীর ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাস অবলম্বনে এটি নির্মিত। সেই গল্প থেকেই ভারতে ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয় ‘হাজার চৌরাসি কা মা’।
প্রায় ১৮ বছর পর সেলুলয়েডের জগতে ফিরে শোকাহত সেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জয়া বচ্চন।
উত্তর ফাল্গুনী
নির্মাতা অসিত রায়ের সিনেমা ‘উত্তর ফাল্গুনি’। শ্রেণি বৈষম্য এবং সংগ্রামের এক করুণ চালচ্চিত্র এটি। এই সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন মহিানায়িকা সুচিত্রা সেন। দ্বৈত চরিত্রে ওই সিনেমায় তিনি ছিলেন একজন মা, আবার একই সঙ্গে সেই মায়ের সন্তান্ও।
ঢালিউডে ‘মা’কে নিয়ে নির্মিত সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘মায়ের অধিকার’, দেলোয়ার হোসেন দুলালের ‘বড় মা’, কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’, আওকাত হোসেনের ‘মায়ের দাবি’, দীলিপ বিশ্বাসের ‘মায়ের মর্যাদা’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘মা আমার চোখের মনি’, মনতাজুর রহমান আকবরের ‘আমার মা’ ও ‘মায়ের চোখ’, জাকির হোসেনের ‘মা আমার স্বর্গ’, শেখ নজরুল ইসলামের ‘মা বড় না বউ বড়’, দীলিপ বিশ্বাসের ‘মায়ের মর্যাদা’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ইত্যাদি।
এসএ/