ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

নুসরাতকে নিয়ে কেন এতো বিতর্ক?

আজাদুল ইসলাম আদনান

প্রকাশিত : ১১:৫৭, ২৬ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১১:৫৯, ২৬ জুলাই ২০১৯

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন টালিউডের অভিনেত্রী নুসরাত জাহান রাহি। ভিন্ন ধর্মের রীতিতে বিয়ে, শপথ শেষে ‘বন্দে মাতরম’ বলা, নিজের সংসদীয় এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দাঙ্গা প্রভূতি বিষয়ে বিতর্কের শেষ নেই নুসরাতকে নিয়ে। 

সবশেষে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে নিয়ে করা নুসরাতের মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনায় টালিউডের এ অভিনেত্রী। কিন্তু  নুসরাতকে নিয়ে কেন এতো বিতর্ক? এর ব্যাখ্যা মিলবে টালিউডের এ অভিনেত্রীর কথা ও কর্মকাণ্ডে। 

নির্বাচনের আগে এক প্রচারণায় কোমর দুলিয়ে ছিলেন নুসরাত। এ নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। নির্বাচনের পর শপথ নিতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও হন। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে।

এরপর  নুসরাতের যে বিষয়টি গোটা ভারতের মুসলিমদের আহত করেছে তা হলো জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন বিধর্মীকে বেছে নেওয়া এবং সে রীতি অনুযায়ী বিয়ে করা। বিয়ের কারণেই লোকসভার আনুষ্ঠানিক শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি তিনি। 

বিয়ের পর শপথ গ্রহণ করেন নুসরাত। যেখানে দেখা যায়, শপথের সময় তার মাথায় ছিল সিঁদুর ও হাতে চূড়া। যা বিবাহিত হিন্দু রমণীর প্রতীক বলে ধরা হয়। এমনকি এ সময় শপথ শেষ করেন ‘বন্দে মাতরম’বলে। যা ইসলাম বিরোধী বলে দেশটির আলেমরা মত দেন। এমনকি তারা নুসরাতের বিয়ে বৈধ নয় বলে ঘোষণা করেন। 

নুসরাত অবশ্য এসব কথাকে বরাবরই উড়িয়ে দিয়ে বলে আসছেন, জাত-পাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে তিনি। ‘সবার জন্য যে ভারত’ তারই প্রতিনিধি এবং ধর্ম বিশ্বাসে এখনও তিনি মুসলিম বলে ঘোষণা দেন। তবে বিয়ের পর তার নামের শেষে স্বামীর নামের শেষাংশ জৈন যুক্ত করায় তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেন দেশটির আলেমরা।

বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে টালিউডের এ অভিনেত্রী বলেন, এ বিষয়ে নতুন করে আমার কিছু বলার নেই। তবে শুধু এতোটুকু বলবো, জীবন আমার, তাই আমিই চিন্তা করবো সারাজীবন আমি কার সঙ্গে কাটাবো। বলেন, আমি ধর্ম দেখে মানুষকে বেছে নিইনা, মানুষকে মানুষ হিসেবে বেছে নিই। এক্ষেত্রে অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আমাকে সহযোগীতা করেছেন। আর আমি ভালই আছি। 

এসব বিতর্কে জড়ানোয় সমালোচনার মুখে পড়া নুসরাত যেন থামছেই না। এবার এক ধাপ এগিয়ে স্বামী নিখিলকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন খাজা হজরত নিজামুদ্দিনের দরগা শরীফে। আর সেই ছবি স্বামী নিখিল জৈন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করা মাত্র নুসরাতের দিকে সমালোচনার তীর ছুটতে থাকে তীব্র গতিতে। 

মিডিয়া জুড়ে যখন তার এমন নীতিহীন কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় মুখর ঠিক তখনো সেখানে নতুন করে তেল ঢেলেছেন নুসরাত। এবার প্রথমবারের মতো খোদ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন তিনি। ফলে আগে যারা তাকে সমর্থন দিয়েছেন, তারা এখন নতুন করে ভাবছেন। 

গত বুধবার এক টুইটবার্তায় টালিউডের এ অভিনেত্রী ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবি আল্লামা ইকবালের কবিতার উদ্বৃতি করে বলেন, ‘কোনো ধর্ম একে অপরের মধ্যে হিংসা ছড়ানো শেখায় না। এগুলো মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত’ ভারতের অখন্ডতাকে ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। 

সম্প্রতি ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট হচ্ছে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দেশটির ৪৯ জন বুদ্ধিজীবী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর সূত্রতা টেনে নুসরাত বলেন, জয় শ্রী রাম ধ্বনির ধুয়ো তুলে দেশে আর্তনাদ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।  এই ধ্বনি মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এদিন গণপিটুনিতে অভিযুক্তদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন তিনি।

নুসরাত বলেন, ‘তথাকথিত গোরক্ষকরা খাবারের নামে, ধর্মের নামে বিভেদ তৈরি করে চলেছে। অথচ আশ্চর্যভাবে দেশের কেন্দ্র সরকার চুপ। সব দেখেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেই।’

নুসরাতের দাবি- এই গোরক্ষকরা গরু পাচার, গোমাংস খাওয়ার নামে তাণ্ডব চালায়। এই সব গোরক্ষকরা আসলে জঙ্গি। যারা দেশের মধ্যে থেকে অশান্তি তৈরি করে চলেছে। এরা সবাই দেশের শত্রু। এদের একযোগে মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি।

ভারতের সংসদ ও সংসদের বাইরে এসব কারণে আলোচনার অংশ এখন নুসরাত। তবে নুসরাত এসব বিষয়ের জবাব দিতে গিয়ে দেশ প্রেমের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করার কথা জানান। বলেন, আমাকে এ জায়গায় যারা নিয়ে এসেছেন, সেই সাধারণ মানুষদের জন্য কিছু করতে চাই। 

আই/ 


   


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি