সেদিন সালমান-শাবনূরের ডাবিং রুমে যা ঘটেছিল
প্রকাশিত : ১৮:৪৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সেদিন সালমান-শাবনূরের ডাবিং রুমে যা ঘটেছিল
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহকে কেউ হত্যা করেনি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এমনকি তার মৃত্যুর নেপথ্যে দাম্পত্য কলহ ও শাবনূরের সঙ্গে অন্তরঙ্গতাসহ পাঁচটি কারণের কথাও জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আত্মহত্যার আগের দিন সালমান শাহকে শাবনূরের সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেছিলেন তার স্ত্রী সামিরা।
গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্লাইড শো'র মাধ্যমে এসব ঘটনার খুঁটিনাটি বিস্তারিত দেখানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আত্মহত্যার আগের দিন সন্ধ্যায় এফডিসিতে ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমার ডাবিং করছিলেন সালমান শাহ ও শাবনূর। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন সালমানের স্ত্রী এবং দুইজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পান। পরে রাগ করে সেখান থেকে চলে যান সামিরা।
এদিকে, সেদিন ডাবিং রুমে আসলে কী ঘটেছিল, তা জানতে একটি অনলাইন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমার পরিচালক রেজা হাসমত। তিনি বলেন, ওই সময় ডাবিং রুমে বসে নিজেদের ডায়লগগুলো মনিটরিং করছিল সালমান-শাবনূর। তখন সামিরা ও সালমানের বাবা আমার রুমে আসেন। তারপর ডাবিং রুমে গিয়ে সামিরা দেখতে পান, সালমান ও শাবনূর মনিটরিং করছে।
পরিচালক রেজা হাসমত বলেন, ‘সেদিন আমার রুমে অ্যাসিস্ট্যান্ট আবুল ও সাউন্ড অ্যাসিস্ট করা একটা ছেলে ছিল। এসবের মাঝে তারা কেবল কথাই বলতে পারে, তবে অনৈতিক কিছু করার মতো অবস্থা ছিল না। পিবিআই যে কথাটি বলছে সে অবস্থা হওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
তিনি আরও বলেন, ডাবিং রুমগুলোতে সাধারণত আর্টিস্ট ছাড়া আর কেউ ঢুকতে পারে না। আর গেষ্ট আসলে তাদের জন্য বসার আলাদা জায়গা আছে। তাছাড়া ডাবিং চলা অবস্থায় রুমের লাইট বন্ধ থাকে। ফলে সেখানে কথা বলাও যায় না। ওইদিন সকালে শুটিং করার পর বিকেলে ডাবিং রুমে ঢোকেন সালমান। রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানেই ছিল। এরপর বাসায় চলে যায়।
মামলার দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা বিস্তারিত জানতে ওই ডাবিং স্টুডিওতে এসেছিলেন জানিয়ে পরিচালক রেজা হাসমত বলেন, ‘গত ১১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারির দিকে তদন্ত কর্মকর্তারা এখানে আসেন। তখন সরেজমিনে তাদের পুরো স্টুডিও ঘুরে দেখিয়েছি। ঘটনার দিন ভেতরে বসা অবস্থায় কী হয়েছিল, পরিচালক এ ব্যাপারে কিছু জানেন কিনা, এসব তারা জানতে চেয়েছেন। সবকিছুই ওনাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।’
এদিকে, পিবিআইয়ের করা ৬০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পারিবারিক কলহসহ অন্তত পাঁচটি কারণে সালমান শাহ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
কারণগুলো হলো-
-চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহর অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা,
-স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ,
-অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা,
-মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা এক সময় জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে অভিমানে রূপ নেয়া এবং
-সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজ বাসা থেকে চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে এটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন জানান তিনি।
পরবর্তীতে অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। নির্দেশনা অনুসারে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি। প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়।
সেই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী ফের রিভিশন মামলা দায়ের করেন। এরপর বেশ কয়েক দফায় একে আত্মহত্যা বলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হলেও সালমানের পরিবার তা মানতে রাজি হয়নি। সর্বশেষ পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনেও আত্মহত্যার কথা বলা হলো।
এনএস/