ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

পৃথিবীর সব বর্জ্য আগ্নেয়গিরিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়না কেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩৩, ৫ জানুয়ারি ২০২২

এটি সত্য যে, আগ্নেয়গিরির লাভা কিছু বর্জ্য পোড়াতে যথেষ্ট সক্ষম। কারণ ২০১৮ সালে হাওয়াইয়ের কিলুয়া আগ্নেয়গিরিতে যখন অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়, তখন এটি থেকে বেরোনো লাভার তাপমাত্রা ছিল দুই হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১ হাজার ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি। এই তাপে অনেক পাথরও গলে যায়। এ জন্য এটি খুব স্বাভাবিক একটি প্রশ্ন, আমরা আগ্নেয়গিরিতে ফেলে আমাদের সব বর্জ্য পুড়িয়ে দেই না কেন?

এই প্রশ্নের উত্তরই দিয়েছেন মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার গবেষক এমিলি জনসন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কী ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। 

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে যে মনুষ্যসৃষ্ট যত আবর্জনা সব পুড়িয়ে ফেলার কিংবা ধ্বংস করার আদর্শ উপায় আগ্নেয়গিরি। তবে আমাদের এই চিন্তার সঙ্গে বাস্তবতা মেলাতে গেলে কিছু বিষয় অবশ্যই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

আমেরিকার একজন নাগরিক প্রতিদিন পড়ে সাড়ে চার পাউন্ড আবর্জনার সৃষ্টি করে, যা বছরে প্রায় ২৫৪ মিলিয়ন টন। এই সমস্ত ময়লা আবর্জনা ধ্বংস করতে হলে প্রথমে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এটি আমাদের সবারই জানা, যে পৃথিবীর সব আগ্নেয়গিরি সক্রিয় নয়। 

সে যাই হোক, ধরুন আপনার অবস্থান থেকে সবচেয়ে কাছের কোনও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নির্ধারণ করলেন; এখন সেখানে গিয়ে আগ্নেয়গিরিতে ঢেলে দিয়ে আসতে হবে সব আবর্জনা। এটিই প্রথম সমস্যা। 

কোনও আগ্নেয়গিরির আশেপাশেই অনেক মানুষ বাস করে না, সুতরাং লোকালয়ের আবর্জনা আগ্নেগিরি পর্যন্ত পৌঁছাতে যথেষ্ট সময় এবং অর্থ খরচ হবে।  

আর স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে যে আগ্নেয়গিরির মুখে খুব সুন্দর একটি গর্ত আছে, যেখানেই সহজেই ময়লা ফেলে আসা যায়। তবে বাস্তবতা মোটেই এমন নয়। কোনও আগ্নেয়গিরির মুখেই এমন কোনও নির্দিষ্ট গর্ত নেই। 

এছাড়া সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে অনবরত বিস্ফোরণ হতেই থাকে, যে কারণে এর কাছাকাছি যাওয়াও মানুষের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, এবং মৃত্যুর কারণও বটে। 

আর প্রতিটি আগ্নেয়গিরির আশেপাশের লাভা হ্রদগুলো শীতল লাভার আবরণ দিয়ে ঢাকা। সেই শীতল আবরণের নিচেই থাকে তীব্র উত্তপ্ত ও গলিত লাভা। এ অবস্থায় শিলা বা অন্য কোনো বস্তু লাভা হ্রদের পৃষ্ঠভাগের ওপর পড়লে তা ভেঙ্গে যেতে পারে এবং বিশাল বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। যে কারণে আগ্নেয়গিরি পর্যন্ত পৌঁছানোও এক বিরাট প্রশ্ন।

এবার আসা যাক আসল কারণে। আপনি যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়লা আবর্জনা পোড়াবেন এর জন্য সৃষ্টি হবে ধোঁয়া। যা সরাসরি যোগ হবে বায়ুমণ্ডলে। 

আর  প্লাস্টিক, আবর্জনা, ধাতু পোড়ালে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। আগ্নেয়গিরি এমনিতেই টনের পর টন সালফার, ক্লোরিন, কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করছে।  

সালফার অ্যাসিডিক কুয়াশা তৈরি করে, যাকে ভলকানিক ফগ বা সংক্ষেপে ভগ বলা হয়। এটি আশপাশের এলাকায় মানুষের শ্বাসকষ্ট তৈরি করতে পারে, মেরে ফেলতে পারে গাছপালাও।

আর তার সঙ্গে যদি প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা পোড়ানোর গ্যাস যোগ হয় তাহলে পরিস্থিতি কী হবে তা নিশ্চই স্পষ্ট? 

এছাড়া আরেকটি কারণ, যা না বললেই নয়; অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় আছে যারা আগ্নেয়গিরিকে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করে। ফলে আগ্নেয়গিরিতে বর্জ্য নিক্ষেপ, এমন আদিবাসী সংস্কৃতির অসম্মান এবং  অপমানজনক বৈকি। 

সূত্র: জেড এমই সায়েন্স, পপুলার সায়েন্স
এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি