একটি বিদ্যুৎ বিল ও বন্ধুত্বের গল্প
প্রকাশিত : ১৫:০৭, ১১ জুলাই ২০২২
দেশভাগ,কাঁটাতারের বেড়া আর সীমান্ত রেখাকে উপেক্ষা করে বন্ধুত্বের স্মৃতিকে টিকিয়ে রেখেছে একটি বিদ্যুৎ বিল। দীর্ঘ বছর একটি বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমে স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রাখাকে বন্ধুত্বের অন্যতম নিদর্শন বলছেন সবাই।
বন্ধুত্বের গল্পটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মাখন লাল সাহা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নুরুল ইসলামের।
মাখন লালের বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজিপাড়ায়, আর নুরুল ইসলামের ভারতের আগরতলায়। দুজনেই পড়তেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে। এক সময় দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। পরে বন্ধুত্ব এতটাই ঘনিষ্ঠ হয় যে, দেশ ভাগের সময় পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকলে দুই বন্ধু একে অপরের বাড়ি বিনিময়ের প্রস্তাব করেন। তারপর দুই পরিবারের লোকজনের সিদ্ধান্তে একে অপরের বাড়ি রদবল করে ফেলেন।
মাখন ভারতে চলে গেলেও বন্ধুর স্মৃতি ভুলতে চাননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থেকে যাওয়া নুরুল ইসলাম। বন্ধু মাখনের ২৪ শতাংশের বাড়িটিতে বিদ্যুৎ বিলে রেখে দিলেন বন্ধু মাখনের নামটিই। বন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে সন্তানদের বলে যান নামটি যেন পরিবর্তন না হয়।। পরে বাব-চাচাদের সম্পত্তি ভাগ হয়ে গেলেও এখনও মাখন লাল সাহার নামেই বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছে নুরুল ইসলামের পরিবার।
পিতার বন্ধুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলামের সন্তানরা জানান, তাদের বন্ধুত্বের স্মৃতি ধরে রাখতেই টানা ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে মাখন লাল সাহার নামে বিদ্যুৎ বিল দিয় আসছি। কাঁটাতারের বেড়া আর সীমান্ত বন্ধুত্বকে কখনো আলাদা করতে পারে না বলেও জানায় তারা।
সুদীর্ঘ বছর ধরে একটি বিল পরিশোধের মাধ্যমে স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রাখাকে বন্ধুত্বের বড় উদাহরণ বলে অবহিত করছেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মাখন লাল সাহার ছেলে মানিক লাল সাহা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী। স্থানীয়রা উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে মূখ্যমন্ত্রী হয়েছে এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। বাবার মাতৃভূমিকে ঘুরে দেখার আমন্ত্রণও জানান তারা।
এমএম/