ভোলায় শীতের সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা পিঠা বিক্রির ধুম
প্রকাশিত : ১২:০৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২২
ভোলায় শীত বাড়ার সাথে-সাথে শীতের পিঠা বিক্রি বেড়েছে। জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে ভাপা, চিতই, পাটিসাপটাসহ বিভিন্ন পিঠা বিক্রি। শীতের সন্ধ্যায় ধোঁয়া উঠা সুস্বাদু পিঠার স্বাদ নিতে ভীড় করছে বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
শহর ও শহরতলীর ফুটপাত, রাস্তার মোড়, হাট-বাজারগুলোতে শীতের ভ্রম্যমাণ দোকানে পিঠা খাওয়া ও বিক্রির ধুম পড়ে যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি ও খাওয়ার পালা। এসময় নতুন চালের মন মাতানো গন্ধে ভরে উঠে চারপাশ।
শহরের কালীবাড়ি রোডের মোড়, সদোর রোড, নতুন বাজার, যুগীর খোল, উকিল পাড়া, বাংলা স্কুল মোড়, বরিশাল দালানের সামনে, হাসপাতাল রোড, বাসস্ট্যন্ড, সরকারি স্কুল মোড়ে দেখা যায় অস্থায়ী দোকানে ভাপা পিঠা বিক্রি। এছাড়া শহরতলীর পরানগঞ্জ, ইলিশা বাজার, বাংলাবাজার, ভেদুরিয়া লঞ্চ ঘাট, শীবপুর, তুলাতুলী বাজার, গুইংগার হাট, ভেলুমিয়া বাজার, চালতাতুলী, নবীপুরসহ বিভিন্ন বাজার হাটে দেখা মেলে শীতের পিঠার দোকান।
পিঠা বিক্রেতারা জানান, নতুন খেজুরের গুড় ও নতুন চালের গুড়া দিয়ে ভাপা পিঠা বানানো হয়। গড়ম পানির তাপে (ভাপে) এই পিঠা তৈরি হয় বলে একে ভাপা পিঠা বলা হয়। এই পিঠাকে আরো সুস্বাধু ও মুখরোচক করতে নারকেল ও গুড় ব্যবহার করা হয়। পিঠা তৈরিতে একটি পাতিল ও ঢাকনা ব্যবহার করা হয়। জলন্ত চুলার উপর পাতিলে পানি দিয়ে ঢাকনার মাঝখানটা ছিদ্র করে পাত্রের মুখে দিতে হয়। এসময় ঢাকনার চারপাশে আটা, চালের গুড়ি ও কাপড় দিয়ে শক্ত করে মুড়ে দেয়া হয়। যাতে করে গড়ম পানির ভাপ বের হতে না পাড়ে।
এছাড়া জলন্ত কড়াইতে চালের গুড়োর মিশ্রণ বানিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করা হয়। ইলিশ, চিংড়ি, শুটকি, কাঁচা মরিচ, সরিষাসহ নানান পদের ভর্তা দিয়ে এই পিঠা খাওয়া হয়। চিতই পিঠারও ব্যাপক চাহিদা শীতের সময়। অনেকে আবার প্রিয়জনের জন্য এসব পিঠা নিয়ে যান। এই জেলায় শীতে সাধারণত ভাপা ও চিতই পিঠার কদর বেশি বলে বিক্রেতারা জানান।
শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকার ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতা মো. সোহেল জানান, একটি ভাপা পিঠা ১০ টাকা ও চিতই পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি করেন। তবে চিতই পিঠার সাথে হরেক ধরণের ভর্তা থাকায় এর চাহিদা বেশি। তার এখানে ৪টি চুলায় চিতই পিঠা ও একটি চুলায় ভাপা পিঠা তৈরি করা হয়। শীতের সময় এলেই তিনি পিঠা বিক্রি করেন।
সদরের বাংলাবাজার এলাকায় ফুটপাতে পিঠা বিক্রেতা আব্দুল আলিম জানান, অন্যান্য সময়ে তিনি ফুটপাতে চা-বিস্কিট বিক্রি করেন। কিন্তু শীতের সময় এলেই তিনি পিঠা বিক্রি করেন। এ ব্যবসায় অল্প পুজি লাগে বলেই কোন সমস্যা হয়না। এছাড়া লাভ ভালোই হয়। কোন কোন দিন হাজার টাকার বেশি লাভ হয় বলে জানান ভ্রাম্যমাণ এ পিঠা বিক্রেতা।
ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকার পিঠা বিক্রেতা কাদের মিয়া ও রাসেল জানান, এসব পিঠার দাম অল্প হওয়াতে সব ধরণের মানুষই এখানে ভিড় করে পিঠা খেতে। কেউ কেউ আবার পিঠা কিনে নিয়ে যায় প্রিয়জনের জন্য।
শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকায় পিঠা খেতে আসা ভোলা সরকারি কলেজের ছাত্র তারিক হাসান, রিয়াদ হোসেন, আবুল মনসুর ও শামিম রেজা বাসস’কে জানান, শীতের সময় ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। আমাদের শীতের সাথে পিঠার যে একটা নিবির সম্পর্ক তা পিঠা খাওয়ার মধ্যেই বোঝা যায়। প্রায় দিনই তারা দল বেঁধে পিঠা খেতে আসেন বলে জানান।
সূত্র: বাসস
এসবি/