সুখ অসুখ
প্রকাশিত : ১৪:৫০, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩
সুখ এই কথাটার আসল অর্থ কি? কাকে আমরা সুখ বলে ভাবি? কী সেটা? রাতদিন আমরা বলে ফিরি, এ জীবনে সুখ পেলাম না, আমার কপালে সুখ নাই, জন্মের পর থেকে সুখের মুখ দেখলাম না, এমন আরও কত কি! কিন্তু আমরা কি জানি সুখ মানে কী বা কোথায় আছে সুখ?
সুখকে আমরা যে যার মতো করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করি। কেউ ভাবি এটা পেলে সুখী হতাম, কেউ ভাবি ওটা পেলে সুখ পেতাম। একেকজনের ভাবনা একেক রকম। একজন ব্যবসায়ী কী চায়? টাকা। সে ভাবে যদি এক কোটি টাকার কন্ট্রাক্ট পেতাম বা টেন্ডারটা যদি মিলে যেত, তবে আমার মতো সুখী আসলেই কেউ হতো না। যারা চাকরিজীবি তারা চায় বেতন বাড়ুক বা প্রমোশন হোক। একজন গৃহিণীর চাওয়া পাওয়ার হিসেবটা আবার অন্যরকম। সে চায় শাড়ি গয়না, নিজের একটা সংসার। কেউ জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকলে ভাবতে থাকে, কবে হবে নিজের একটা ছোট্ট সংসার। সন্তান চায় স্বাধীনতা। তারা ভাবে আর কতদিন বাবা মায়ের শাসনে থাকতে হবে।
অর্থাৎ আমরা যে যার মতো করে শুধু চেয়েই যাচ্ছি অবিরত। কেউ কেউ সেই চাওয়াগুলোকে হয়তো পাওয়াতেও রূপান্তরিত করতে পারছি। কিন্তু তারপর? তারপর কি হচ্ছে? আমরা কি আসলেই সুখী হতে পারছি?
ধরে নেই, সমাজ সংসার ধর্ম বাদ দিয়ে জঙ্গলকে কেউ বেছে নিল সুখের নিবাস হিসেবে। যেখানে কোনো দায় নেই। তারপরও কি কোনো মানুষ হলফ করে বলতে পারবে, সে শতভাগ সুখি? তা যদি নাই হয় তবে সুখটা কথায়?
বাবা-মা ভাবে সন্তানকে কষ্ট করে মানুষ করলে বুড়ো বয়সে সুখ মিলবে। কিন্ত সেই সন্তান যখন বড় হয়ে মা-বাবাকে ফেলে নিজের সুখের সংসার গড়তে ব্যস্ত হয়ে ওঠে তখন? এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে সুখের পথে সামাজিক মূল্যবোধই কি অন্তরায়? নাকি মানুষ জানেই না আসলে সুখ কি জিনিস।
আসলে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে আমরা এক সফরে এসেছি। এই সফর শেষে যেতে হবে আরেক অনন্ত সফরে। হয়তো সেই জীবনে গিয়ে আমরা সুখের সন্ধান পাব। আর এই জীবনে! এই জীবনেও সুখি হওয়া সম্ভব, যদি স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা যায়। মানুষের কল্যাণের মাঝেই নিজের সুখ খুঁজতে হবে। চাওয়ার মাঝে কিন্তু কোনো সুখ নেই। সুখ আছে দেয়ার মাঝে। তাই চাওয়ার চেয়ে বেশি দিতে হবে। মন-প্রাণ উজাড় করে ভালবাসা দিতে হবে অসহায় বঞ্চিতের মাঝে, প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে নিজের সমস্ত সত্ত্বা। সৃষ্টির লালনে বিলাতে হবে ছোট এই জীবন।
এমএম/