ভারতের একটি গ্রামে পর্যটক আনছে কচ্ছপ
প্রকাশিত : ১৭:০৬, ২০ জুলাই ২০২৩
ভারতের মহারাষ্ট্রের উপকূলীয় ভেলাস গ্রাম পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে৷ বিপন্ন প্রজাতির অলিভ রিডলি কচ্ছপ এর কারণ৷ একটি সংস্থা তাদের রক্ষায় কাজ করছে৷ গ্রামবাসীও এতে সম্পৃক্ত হয়ে লাভবান হচ্ছেন৷
শিশু কচ্ছপরা টিম টিম করে সাগরের দিকে ছুটছে- এমন দৃশ্য দেখতে ভেলাসে ভিড় করেন পর্যটকরা৷ তাদের একজন মুম্বইয়ের শিক্ষার্থী শ্রুতি গোর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার আর্ট প্রজেক্টের জন্য এসেছি৷ প্রজেক্টের বিষয় ‘অ্যাট দ্য রেস'৷ সেজন্য কিছু ছবির দরকার ছিল৷ ভেবে পাচ্ছিলাম না, কী করবো৷ একসময় কনজারভেশন বা এমন কিছুর কথা ভাবছিলাম৷ পরে ভাবলাম, কচ্ছপেরা সাগরে যাচ্ছে এমন ছবি তুলবো৷ কারণ এটাও একধরনের বাঁচার জন্য প্রতিযোগিতা৷''
শীতে একেকটি নারী কচ্ছপ সর্বোচ্চ ১৬০টি ডিম পাড়ে৷ কয়েক বছর আগেও স্থানীয়রা সেসব ডিম খেয়ে ফেলতেন বা বিক্রি করতেন৷
২০ বছর আগে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়৷ পরিবেশ নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘সেহিয়াদ্রি নিশার্গ মিত্র' কচ্ছপদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল৷ ‘ওয়াশিংটন কনভেনশন অন ওয়াইল্ডলাইফ ট্রেড' অলিভ রিডলি প্রজাতির কচ্ছপকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে৷
গবেষক মোহন উপাধ্যায় জানান, ‘‘যারা সৈকতে ঘুরে কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করতেন তাদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি৷ কচ্ছপ ও তাদের ডিমের গুরুত্ব বুঝিয়েছি আমরা৷ এভাবে শিকারিরা একসময় কচ্ছপ সংরক্ষণের অংশ হয়ে ওঠে৷''
কচ্ছপদের নিয়ে কাজ করে কিছু গ্রামবাসী এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন৷ এটা সত্যিকার অর্থে একটি ইকো টুরিজম হয়ে উঠেছে, যার কারণ মানুষ ও প্রাণী উভয়ই লাভবান হচ্ছে৷
ম্যানগ্রোভ ফাউন্ডেশনের বন্দন জাভেরি বলেন, ‘‘আপনি যখন কিছু সম্পর্কে জানেন তখন তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারেন, তাদের রক্ষার তাগিদ অনুভব করেন৷ এটাই ইকো টুরিজমের গুরুত্ব: এটা প্রজাতি, আবাস ও দর্শকদের এক করে৷''
প্রায় সাত বছর ধরে কচ্ছপ দেখতে আসা পর্যটকদের আপ্যায়ন করছে সিদ্ধি কুলাপকার ও তার পরিবার৷ প্রতিবছর ভেলাস কচ্ছপ উৎসবের সময় তারা তাদের ঘরকে ‘হোম স্টে'তে পরিণত করেন৷ সিদ্ধি বলেন, ‘‘হোম স্টে শুরুর পর আমাদের খুব ভালো হয়েছে৷ আগে এখানে কিছু ছিল না৷ একমাত্র কাজ ছিল দিনমজুরি৷ কিন্তু এখন আমরা ভালো উপার্জন করছি৷ প্রতিবছর অনেক পর্যটক আসছেন৷''
প্রকৃতির ক্ষতি না করে প্রকৃতি উপভোগ সম্ভব করতে কিছু নিয়ম চালু করা হয়েছে৷ ‘‘যেমন সৈকতে বালু দিয়ে কিছু করা যায় না৷ পর্যটকরা চাইলেও ওয়াটার স্পোর্টসের অনুমতি নেই৷ সৈকতে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই৷ আর গাড়ি শুধু দূরে পার্ক করা যায়৷ মূল লক্ষ্য হচ্ছে কনজারভেশন,'' বলেন মোহন উপাধ্যায়৷
অলিভ রিডলি প্রজাতির কচ্ছপ বাঁচাতে ভেলাসে শুরু হওয়া ইকো টুরিজম সৈকতের আরও দশ গ্রামে বাস্তবায়িত হচ্ছে৷
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এসবি/