সামাজিক পরিমণ্ডলে শুদ্ধাচার
প্রকাশিত : ১৮:৫২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রথম পরিচয়ে আপনার আচরণই অপর পক্ষের মনে রেখাপাত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রথম ধারণাই স্থায়ী রূপ নেয়। তাই প্রথম পরিচয়ে সঠিক ও সুন্দর আচরণ অন্যের সাথে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর।
আর নতুন পরিবেশে, জনসমাগমস্থলে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়, মসজিদ বা উপাসনালয়ে আপনার আচরণ দেখেও অন্যেরা আপনার সম্পর্কে ধারণা করে নিতে পারে। এ-ক্ষেত্রে শুদ্ধাচারের আন্তরিক অনুশীলন করে আপনিও পরিণত হতে পারেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে।
প্রথম পরিচয়ে
> হাসিমুখে সালাম, শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করুন। পুরুষরা পুরুষদের সঙ্গে এবং মহিলারা মহিলাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে হাত মেলান। আড়ষ্ট নয়, সবসময় স্বতঃস্ফূর্ত থাকুন।
> বিপরীত লিঙ্গের কারো সঙ্গে হাত মেলানোর আগে পরস্পরের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনের কথা মনে রাখুন।
> বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে হাত মেলানোর জন্যে ছোটরা হাত এগিয়ে দেবেন না। বড়রা হাত বাড়িয়ে দিলে আন্তরিকভাবে হাত মেলান। হাত মেলানোর সময় জোরে চাপ দেবেন না। হাত ধরে ঝাঁকাবেন না।
> প্রথম পরিচয়ে নিজের পুরো নাম বলুন। সংক্ষেপে কর্মপরিচিতিও দিন।
> রক্তীয় সম্পর্ক না থাকলে আপা/ ম্যাডাম বা ভাই/ স্যার বলুন কিংবা বয়সের সঙ্গে মানানসই সম্বোধন করুন।
> বয়সে ছোট অনুমান করে যে-কাউকে অনুমতি ছাড়াই ‘তুমি’ সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকুন।
> যে-কাউকে ‘মামা’ বা ‘বস’−এ জাতীয় চটুল সম্বোধনের অভ্যাস বর্জন করুন।
> নিজেকে কখনো খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন না। বিশিষ্ট/ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে আপনার সম্পর্ক পরিচিতির বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলবেন না।
> নিজের সম্পর্কে কম বলুন। অপর পক্ষকে তার কথায় ও আচরণে বুঝতে চেষ্টা করুন।
> অপর পক্ষ অতি আগ্রহ দেখালে কথা বলার ক্ষেত্রে কুশলী হোন।
> সম্পর্কের শুরুতে এবং পরবর্তীকালে কখনোই অন্ধবিশ্বাসী হয়ে নিজের ও পরিবারের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য বা কোনো দুর্বলতা নিয়ে আলাপ করবেন না। এর মাশুল আপনাকে অনেক বেশি দিতে হতে পারে।
> কথা বলুন কিন্তু বাচাল হবেন না। আন্তরিকতা দেখান, তবে প্রথম আলাপেই বেশি ঘনিষ্ঠ হতে চাইবেন না।
> প্রথমবার যোগাযোগে পরিচয়ের সূত্র উল্লেখ করুন। কীভাবে তার ফোন নম্বর বা ঠিকানা পেয়েছেন তা বলুন।
> বয়স, বেতন, আর্থিক সঙ্গতি, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তানাদি, বাড়িওয়ালা না ভাড়াটিয়া, স্বামী/ স্ত্রী কী করেন, ছেলেমেয়েরা কী করে, কোন ধর্ম, কোন গ্রাম, তার শারীরিক অবয়ব অর্থাৎ দেখতে মোটা-চিকন-লম্বা-খাটো বা কোনো ধরনের অক্ষমতা নিয়ে প্রথম দেখাতেই কোনো প্রশ্ন ও মন্তব্য করবেন না। এতে তিনি বিব্রত হতে পারেন।
> অর্থ-ধর্ম-বর্ণের ভিত্তিতে বিচার না করে মানুষ হিসেবে সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিন। তবে এ কারণে আপনাকে কেউ সম্মান দিতে না চাইলে তা সহজভাবে নিন।
> যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কাউকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করাবেন না। তার সময়ের প্রতিও খেয়াল রাখুন।
> সম্পর্কের স্থায়িত্ব সবসময় নির্ভর করে দুই পক্ষের আগ্রহের ওপর। অপর পক্ষ ব্যস্ত থাকলে বা অনাগ্রহী হলে কথা সংক্ষিপ্ত করুন। পরবর্তী সময়ে ঘন ঘন মেসেজ দেয়া/ ফোন করা/ দেখা করতে বাসায়/ বাইরে কোথাও যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
> কারো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে কৌতূহলী হবেন না, অহেতুক প্রশ্ন করবেন না। ফোন নম্বর বা যোগাযোগের ঠিকানা চেয়ে পীড়াপীড়ি করবেন না।
> অপর পক্ষ যোগাযোগের ঠিকানা জানাতে আগ্রহী হয়ে তার ভিজিটিং কার্ড দিলে সাথে সাথেই তা পকেটে/ পার্সে না ঢুকিয়ে তার সামনে অন্তত একবার পড়ুন। আর কার্ড না থাকলে নিজেই তার নাম ও ফোন নম্বর টুকে নিন।
> প্রথম পরিচয়েই ব্যবসায়িক লেনদেন/ টাকা ধার দেয়া বা চাওয়া অথবা যে-কোনো ধরনের চুক্তি করা থেকে বিরত থাকুন।
> কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয় দেখা হলে খাবার অর্ডার করা নিয়ে তাড়াহুড়ো করবেন না।
> অপ্রয়োজনে নিজের সমস্যার কথা বলবেন না বা কারো সমালোচনা করবেন না।
> চিকিৎসক বা অন্য যে-কোনো পেশাজীবীর সাথে প্রথম পরিচয়েই পরামর্শ বা ব্যক্তিগত ফোন নম্বর চাইতে শুরু করবেন না।
> প্রথম পরিচয়ে কারো কোনো বদভ্যাস সংশোধন করে দিতে চাইবেন না। তার ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বা আপনার পছন্দ চাপিয়ে দেয়া থেকেও বিরত থাকুন।
নতুন পরিবেশে
> পরিচিত বা অপরিচিত কারো সাথে দেখা/ চোখাচোখি হলে সালাম দিন। পরিচিত কেউ হলে কুশল বিনিময় করুন। আর খুব তাড়া থাকলে হাসি বিনিময় করে বলুন, ‘পরে কথা হবে’।
> স্থানকালপাত্র বুঝে কথা বলুন ও আচরণ করুন। যে পরিবেশের যে আদব বা নিয়ম তা মেনে চলুন।
> কারো বাসায়/ অফিসে যাওয়ার আগে এপয়েন্টমেন্ট নিন। যাওয়ার দিন পুনরায় তা নিশ্চিত করুন।
> প্রয়োজনে কারো কাছে গেলে কাজ সেরেই বিদায় নিন। অহেতুক তার সময় নষ্ট করবেন না।
> খুব জরুরি না হলে খাওয়া ও বিশ্রামের সময় কারো সঙ্গে দেখা করতে যাবেন না।
> কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলে উঠে দাঁড়ান। তিনি বসতে বললে সৌজন্যসুলভ হাসির সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়ে বসুন। চেয়ার টেনে বসার সময় যথাসম্ভব কম শব্দ করুন।
> হাঁটার সময় অতিরিক্ত শব্দ হয়−এমন জুতো পরিহার করুন। প্রয়োজনে ধীরে হাঁটুন যাতে শব্দ কম হয়।
> চেয়ার বা সোফায় গা এলিয়ে বসবেন না। চেয়ার অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়ে বসলে কাজ শেষে তা পুনরায় জায়গামতো রাখুন।
> ‘এন্ট্রি/ প্রবেশ’ লেখা পথ দিয়ে প্রবেশ করুন এবং ‘এক্সিট/ বাহির’ লেখা পথ দিয়েই বের হোন।
> প্রবেশপথে শিশু/ মহিলা/ প্রবীণ থাকলে তাকে আগে যেতে দিন।
> ভিড় থাকলে অযথা দরজার সামনে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করবেন না। ভিড় কমলে প্রবেশ করুন/ বের হোন।
> শপিং মল, এটিএম বুথ, রেস্টুরেন্টে দরজা খোলার সময় ‘পুশ/ পুল’ বা ‘টানুন/ ধাক্কা দিন’ লেখা দেখে নিন।
> অন্য দিকে বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে শপিং মল, এটিএম বুথ, রেস্টুরেন্টের দরজা খুলবেন না। আপনার অসতর্কতার কারণে দরজার অপর প্রান্তের ব্যক্তি আঘাত পেতে পারেন।
> কেউ নিজের জন্যে দরজা খুলেছেন−এ অবস্থায় আপনি হুড়মুড় করে ঢুকে পড়বেন না। তাকে আগে সুযোগ দিন।
> প্রবেশ বা বাহির দরজায় সেলফি/ ছবি তুলবেন না বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। এতে অন্যদের চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে।
> প্রয়োজনে প্রবেশপথে বা অভ্যর্থনা কক্ষে নিজের পরিচয় দিন। কী কাজে বা কার কাছে এসেছেন তা বলুন।
> কোথাও আমন্ত্রিত হয়ে এলে আপনাকে যেখানে বসতে দেয়া হয়েছে সেখানেই বসুন। অযথা পায়চারি করা বা এটা-সেটা ধরে দেখা থেকে বিরত থাকুন।
> পেশাগত পরিচয়ের সূত্র ধরে কোনোরকম ব্যক্তিগত প্রশ্ন না করে পারস্পরিক সম্পর্কে পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন।
> অপর পক্ষের কথা মন দিয়ে শুনুন। তার কথা থামিয়ে দিয়ে নিজেরটা বলতে শুরু করবেন না।
> ভাবগম্ভীর পরিবেশে হাসাহাসি করা ও জোরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
> কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে আলাপ করা থেকে বিরত থাকুন।
> কারো কথা বা আচরণে মন খারাপ হলে তা বুঝতে দেবেন না। যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। অপমানবোধে ভুগে উত্তেজিত হবেন না।
> কোনো অনুষ্ঠানস্থলে উচ্চস্বরে কাউকে ডাকবেন না। কথা বলতে হলে তার কাছে গিয়ে কথা বলুন।
> জনসমাগমস্থলে ব্যক্তিগত জিনিস নিজ দায়িত্বে সাবধানে রাখুন।
> ভিন্ন ধর্মের কোনো অনুষ্ঠানে এসে তাদের কোনো আয়োজন দেখে নেতিবাচক কিছু বলা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকুন।
> কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে আপনার রুচি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুশাসন পরিপন্থী আয়োজন দেখলে কোনো মন্তব্য না করে কৌশলে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করুন।
হোটেলে/ রেস্তোরাঁয়
> রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে আগে থেকে বুকিং দিন।
> অন্যদের প্রথমে বসার সুযোগ দিন, তারপর নিঃশব্দে চেয়ার টেনে বসুন।
> প্রবীণ অতিথির জন্যে চেয়ার এগিয়ে দিন। এতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্মানিত বোধ করবেন।
> ‘ওয়েটার/ বেয়ারা’ বলে চিৎকার না করে ইশারায় মনোযোগ আকর্ষণ করুন। বড়জোর ‘হ্যালো’ বা ‘এক্সকিউজ মি’ বলে ডাক দিন।
> শিশু-কিশোর বয়সী বেয়ারা/ ওয়েটারকে ‘অ্যাই পিচ্চি’− এ ধরনের সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকুন।
> টেবিলের ওপর হ্যান্ডব্যাগ রাখবেন না। খাওয়ার সময় মোবাইল, চাবি ব্যাগের ভেতরে রেখে তা পায়ের কাছে বা কোলে রাখুন।
> নিমন্ত্রণকারী মেন্যু বেছে নেয়ার অনুরোধ করলেও তার পছন্দকেই অগ্রাধিকার দিন। আর আপনাকেই পছন্দ করতে হলে এমন খাবার বেছে নিন যা সাধারণভাবে বেশিরভাগের পছন্দনীয় এবং নিমন্ত্রণকারীর বাজেটের মধ্যেই পড়বে।
> সবার পছন্দ জেনে নিয়ে যে-কোনো একজন খাবারের অর্ডার দিন। একেকজন একেকটা খাবারের নাম বলে/ বার বার খাবারের অর্ডারে পরিবর্তন করে ওয়েটারকে বিভ্রান্ত করবেন না।
> মেন্যুতে খাবারের নাম ও সেটা কী জাতীয় খাবার তা বুঝতে না পারলে ওয়েটারকে নিঃসংকোচে জিজ্ঞেস করুন।
> আগেই খাবারের মূল্য সম্পর্কে অবগত হোন। ভ্যাট এবং সার্ভিস চার্জ আলাদা দিতে হবে কিনা জেনে নিন।
> প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার অর্ডার করবেন না। বিল পরিশোধের জন্যে আইটেমের মূল্য মনে রাখুন।
> খাবার পরিবেশনে দেরি হলে উত্তেজিত হবেন না। কত সময় লাগতে পারে তা আগেই জেনে নিন।
> কোথাও মেহমান হয়ে গেলে আগেই খেতে বসে যাবেন না। নিমন্ত্রণকারী আহ্বান জানালে টেবিলে আসুন, একসাথে খাবার গ্রহণ শুরু করুন।
> নিজের প্লেটে প্রথমেই খাবার নেবেন না। আন্তরিকভাবে অন্যদের দিন, তারপর নিজে নিন। খাবারের ভালো অংশ−বিশেষত মাছ-মাংসের বড় টুকরো সচেতনভাবে অন্যদের পাতে তুলে দিন।
> মেহমানদের অতিরিক্ত খাওয়ানোর জন্যে পীড়াপীড়ি না করে আপ্যায়নের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা প্রকাশে সচেষ্ট থাকুন।
> খাবার পরিবেশন করার পর পরিবেশনকারীকে ধন্যবাদ জানান।
> বুফে খাবারের দাওয়াতে কিউতে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করুন।
> নিজের প্লেটে খাবার নেয়ার সময় খেয়াল রাখুন− পরিবেশিত খাবার অন্যদের জন্যেও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে কিনা।
> একবার যে খাবার হাত দিয়ে স্পর্শ করেছেন− তা কখনো পরিবর্তন করবেন না।
> একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার প্লেটে নেবেন না। এতে খাবার অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং কাজটি অশোভন।
> ডিশ বা বাটির একপাশ থেকে খাবার নিন। খাবার নাড়াচাড়া ও ঘাঁটাঘাঁটি করে অন্যদের বিরক্তির কারণ হবেন না।
> আপনার অনিচ্ছাসত্ত্বেও কেউ জোর করে কোনো খাবার খাওয়াতে বা প্লেটে তুলে দিতে চাইলে বিনীতভাবে ‘না’ বলুন।
> হোটেল বা রেস্তোরাঁয় নিমন্ত্রিত হলে অতিরিক্ত কিছু পরিবেশনের জন্যে ওয়েটারকে তলব করবেন না।
> ছুরি ও কাঁটা-চামচ দিয়ে মাছ-মাংস খেতে অভ্যস্ত হলে সেভাবেই খান। অন্যথায় পরিস্থিতি বুঝে হাত দিয়েই খাবার গ্রহণ করুন।
> চামচ বা ছুরি ব্যবহার করলে খাওয়া শেষে তা প্লেটেই রাখুন।
> চামচ দিয়ে খাওয়ার সময় যথাসম্ভব কম শব্দ করুন।
> মুখ বন্ধ রেখে যথাসম্ভব নিঃশব্দে খাবার চিবাতে ও খেতে সচেষ্ট থাকুন।
> কোনো খাবার মুখ থেকে ফেলতে হলে টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে বোন-প্লেটে রাখুন।
> অন্য টেবিলে পরিবেশিত খাবার বা কারো খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না, মন্তব্য করবেন না।
> রেস্টুরেন্টে আস্তে কথা বলুন। উচ্চস্বরে হাসাহাসি করবেন না। পাশের টেবিলেও যেন আওয়াজ না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
> খাওয়ার সময় ফোনে কথা বলবেন না। এতে অন্যেরা বিরক্ত হতে পারে। খুব জরুরি হলে অনুমতি নিয়ে সংক্ষেপে কথা বলুন।
> বোতলে মুখ না লাগিয়ে পানি পান করুন। সুযোগ থাকলে পানি গ্লাসে ঢেলে নিন।
> কাউকে পানি এগিয়ে দিতে ও নিজে পানি পানের সময় গ্লাসের নিচের দিকে ধরুন।
> হাঁচি এলে হোটেলের ন্যাপকিন ব্যবহার না করে নিজস্ব রুমাল/ টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন। তা না থাকলে কনুই অথবা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি দিন। তারপর বেসিনে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
> খাওয়ার সময়/ শেষে ঢেঁকুর চলে এলে মুখে হাত/ রুমাল রাখুন, যেন শব্দ কম হয়।
> গরম পানীয়/ খাবার খাওয়ার সময় ফুঁ দেবেন না। সহনীয় হওয়ার সময় দিন।
> খাওয়ার মাঝে/ অন্যদের আগে একান্তই উঠতে হলে ‘এক্সকিউজ মি/ আমি একটু উঠছি’ বলে অনুমতি নিন।
> সুযোগ থাকলে প্রার্থনা করে সবাই একসঙ্গে খাওয়া শুরু করুন। টেবিলের সবার খাওয়া শেষ হলে উঠুন।
> খাওয়া শেষে ন্যাপকিনটি প্লেটের বামপাশে ঢিলেঢালা ভাঁজে রেখে দিন। একে পরিপাটি করে ভাঁজ করা বা চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই।
> খাওয়া শেষে গল্প বা আড্ডায় মশগুল হয়ে টেবিল আটকে রাখবেন না।
> বেসিনে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে লাইন অনুসরণ করুন। কারো হাত ধোয়ার মাঝে নিজের হাত বাড়িয়ে দেবেন না।
> খাবার শেষে নিমন্ত্রণকারীকে ধন্যবাদ জানান।
> টেবিল ছেড়ে ওঠার সময় চেয়ার সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গুছিয়ে রাখুন।
> মেহমান হয়ে খেতে গেলে বিল দেখার ব্যাপারে কৌতূহলী হবেন না।
> নিমন্ত্রিত হলে নিজে বিল দেয়ার জন্যে জোরাজুরি করবেন না। এটা নিমন্ত্রণকারীর জন্যে বিব্রতকর।
> খাবারের স্বাদ বা পরিবেশ অপছন্দ হলে অথবা কোনো সমস্যা হলে সবার সামনে তা নিয়ে সমালোচনা না করে কর্তৃপক্ষকে জানান। অযথা ওয়েটারের সঙ্গে বাক্যালাপ বা রাগারাগি করবেন না। বিল মিটিয়ে বেরিয়ে আসুন।
> বিল পরিশোধের সময় তা নিজেও যাচাই করুন। অন্য রেস্টুরেন্টের খাবারের দামের সাথে তুলনা করবেন না। বিল কমবেশি মনে হলে কর্তৃপক্ষকে জানান।
> নিমন্ত্রণকারী হিসেবে নিমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে বিলের কাগজ রেখে টাকা গুনে দেবেন না। প্রয়োজনে ক্যাশ কাউন্টারে চলে যেতে পারেন কিংবা আড়ালে টাকা গুনে ওয়েটারের হাতে দিতে পারেন।
> ভবিষ্যতে একই স্থানে অনুষ্ঠান করতে চাইলে সে অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণকারীকে বিলের পরিমাণ জিজ্ঞেস না করে হোটেল/ রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলুন।
> ব্যবসায়িক লাঞ্চ/ ডিনার পার্টিতে খাওয়ার সময় পণ্য, দাম বা চুক্তি নিয়ে হালকা আলাপ করতে পারেন। কিন্তু ব্যবসা-সংক্রান্ত আসল কথাবার্তা শুরু করুন আহার পর্ব শেষ হওয়ার পর।
> কেউ যদি প্রস্তাব দেন, ‘চলুন, কোনো রেস্তোরাঁ থেকে খেয়ে আসি’ তাহলে বিলের অন্তত আংশিক পরিশোধের প্রস্তুতিও রাখুন।
> খাওয়ার সময় সেলফি বা ছবি তুলবেন না। সেলফিটিস বা সেলফি সিনড্রোম একটি রোগের নাম। খাওয়া শেষে অন্যদের ছবি তুলতে হলে অনুমতি নিন। ছবি শেয়ার করার আগে বা কাউকে দেখানোর আগে ছবিতে যারা আছেন তাদের অনুমতি নিন।
> বাকিতে খাওয়ার অভ্যাস বর্জন করুন।
> বাইরে খাওয়ার সামর্থ্য থাকার শুকরিয়াস্বরূপ বিলের একটি অংশ দান করুন, যা ব্যয় হবে নিরন্নকে অন্নদানে।
লেখাটি শহীদ আল বোখারী মহাজাতক'র 'শুদ্ধাচার' বই থেকে নেওয়া
এমএম//