ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শান্ত পাখি স্যান্ডউইচ

বাউফল (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১৪:৫০, ১৯ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৫:০৪, ১৯ আগস্ট ২০১৯

গড়নে ছোট-মাঝারি। ধূসর শান্ত স্বভাবের পাখি স্যান্ডউইচ। উপকূলীয় নদ-নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চর-মোহনায় কিংবা খোলা ডিঙ্গিতে  বের হলে দেখা মিলে এ পরিযায়ী পাখিটির। এছাড়া হাওর-বাঁওড়েও দেখা যায় এদের। তবে গাছপালাশূন্য নদীর চড়া এলাকায়, আঁকাবাঁকা বয়ে যাওয়া খালে কিংবা ডুবোচরে পুতে রাখা বাঁশের খুটায় বসে থাকা ধূসর রঙের এই স্যান্ডউইচ পাখিদের দেখে নিমিষেই চোখ জুড়িয়ে যায়।

মাঝারি আকারের Thalasseus sandvicensis পরিবারের ভোকাল পাখি স্যান্ডউইচ। পিঠে, ডানায় ও উপরের অংশ ফ্যাকাশে ধূসর রঙের হলেও গলা-বুক ও দেহতলের পালক সাদা। ছোট কালো পায়ের স্যান্ডউইচের দু’পাশের পালকও কালো। এদের ঠোঁটটিও কালো। এরা লম্বায় ৩৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার।

স্যান্ডউইচ দেখতে গাংচিলের মতো মনে হলেও আকৃতিতে ছোট-মাঝারি। চালচলনে গাংচিলের চেয়ে শান্ত।  এই পাখিরা উপকূলীয় নদ-নদী, বালুকাবেলায়, জেলে পল্লীর আশপাশে কিংবা চরের কৃষি জমিতে ছুটে আসে খাবারের খোঁজে। এরা নোনা পানিতেই স্বাচ্ছন্দভাবে বিচরণ করতে ভালোবাসে। নরম ক্রিক-ক্রিক সুরে ডাকাডাকি করে। শান্ত বলেই হয়তো কেউ এদেরকে তেমন একটা বিরক্তও করে না। নদ-নদীর ছোট মাছ, ছোট কাঁকড়া, বালুচরের পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য।

আমাদের দেশ ছাড়াও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, ভূমধ্য অঞ্চল ও গ্রেট ব্রিটেনে দেখা  মেলে স্যান্ডউইচদের। সাদা মুকুট, কালোক্যাপ ও কপালে সাদা জলজলে কালোটুপি এই তিন প্রকারের স্যান্ডউইচ দেখা যায় বিভিন্ন দেশে।

দিন রাত ছোট-বড় হওয়া, সূর্য-তারাদের অবস্থান, ম্যাগনেটিক ফিল্ড, মেন্টাল ম্যাপ ও মানবসৃষ্ঠ পরিবেশ নিয়ামকের ওপর স্যান্ডউইচ পরিবারভূক্ত পাখিদের অভিগমন নির্ভর করে। আর এসব কারণে স্যান্ডউইচদের উপকূলীয় অঞ্চলে আগের তুলনায় কম দেখা যায় এমনই ধারণা পাখি বিশেষজ্ঞদের।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্যান্ডউইচদের বাসা তৈরির দৃশ্য কারো চোখে পড়নি। অঞ্চলভেদে হেরফের থাকলেও পাখি বিশেষজ্ঞরা মার্চ-সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত করে থাকেন। আটলান্টিক উপকূলে নদ-নদী কিংবা জলাশয়ের কাছে বেলাভূমিতে ঘন জঙ্গলের ঘাস, লতা-পাতায় বাসা বাঁধে এমনটিই জানান পাখিপ্রেমী বিশেষজ্ঞরা। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৫ দিন, আর বাচ্চা স্যান্ডউইচ স্বাবলম্বী হতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে। শীতে বাংলাদেশ ছাড়া পাশ্বর্বর্তী ভারত ও পাকিস্তানেও  দেখা যায় পাখিটি।

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাঝারি অবয়বের পাখি স্যান্ডউইচের ধূসর রঙের মাঝে লুকিয়ে থাকে দর্শনের লোভনীয় কমনীয়তা। পাখি প্রেমিরাই কেবল স্যান্ডউইচের রঙের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন। সুন্দরবন ঘেঁষা নদ-নদীতে কিংবা উপকূলীয় চর-মোহনায় চোখে পড়লেও আগের চেয়ে কমে গেছে এই পাখির সংখ্যা।

পাখি বিশেষজ্ঞ ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক  পিযুষ কান্তি হরি বলেন, দিন রাতের হেরফের (ছোট-বড় হওয়া), সূর্য-তারাদের অবস্থান, ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড, মেন্টাল ম্যাপ ও মানবসৃষ্ঠ পরিবেশের ওপর পরিযায়ী পাখি স্যান্ডউইচ পরিবারভূক্ত পাখিদের অভিগমন নির্ভর করে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আরও আগেই নানাভাবে বৈশ্বয়িক আবহাওয়া পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে। যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব-বৈচিত্র রক্ষায় এসব পাখিদের অবাধ বিচরণে সবারই যত্নবান হতে হবে।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি