ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৮ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কাউ ফলের যত পুষ্টিগুণ

এমএ বশার, বাউফল (পটুয়াখালী) থেকে

প্রকাশিত : ১৭:০১, ২০ জুন ২০২০

কাউ ফল

কাউ ফল

Ekushey Television Ltd.

নামটা কাউ হলেও, টক-মিষ্টি স্বাদের ফল এটি। উপকূলীয় অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে শিশুদের অনেক প্রিয় এই ফল। ভিটামিন-সি তে ভরপুর কাউ ফলে আছে সর্দি-জ্বর ও ঠাণ্ডা সারাবার মতো ভেষজ গুণাগুণ। দিন দিন তাই বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে এই কাউ ফল।

কাউয়ের বৈজ্ঞানিক নাম- Gracinia cowa Roxb বা Gracinia idia Roxb. ইংরেজিতে- Cowa (mangosteen) বলা হয়। মাঝারি বৃক্ষ জাতীয় ঝুলন্ত শাখার ঝুপড়ি গাছ। উচু হয় ৩-৬ মিটার। পূর্ণমোচী। গাঢ় সবুজ ও চকচকে সরল পত্র। ফুল ছোট লালাভ-হলুদ ও চতুরাংশক। চারটি বৃত্তাংশ ও চারটি পাপড়ি হলুদ, বেগুনী কিংবা লাল আভাযুক্ত। পাকলে কমলা-হলুদ হয়। আকারে ছোট কমলা লেবুর মতো মোটা বাকলযুক্ত ফলের ভেতর চুষে খাওয়ার মতো রসালো দানা থাকে চার-পাঁচটি। পাকা ফলের টক-মিষ্টি দানায় কিছুটা কসভাব থাকে। জানুয়ারী-জুলাই ফুল ও ফল ধারণ করে। 

চিরহরিৎ অঞ্চল, উষ্ণমন্ডলীয় মালয়েশিয়া, ভারত, চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে এই ফল দেখা যায়। জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ততা সহনীয় হওয়ায় দেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রামের মতো উপকূলীয় পিরোজপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চলের জঙ্গলে, খালের পাড়ে দেখা মেলে কাউ গাছের। 

কাঁচা ফলের রঙ সবুজ। তবে অনেকটাই সুস্বাদু বেগুনী রঙের শক্ত বাকলের mangosteen নামে পরিচিত থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় কাউয়ের আরেকটি প্রজাতি দেখা যায়। দেশের কোন কোন এলাকায় কাউগোলা, তাহগোলা নামেও পরিচিত ফলটি। 

পুষ্টিগুণে ভরা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই কাউ ফল মুখের অরুচি দূর করে। পরিমিত ক্যালরী সমৃদ্ধ চর্বি, ফাইবার ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি-বিকাশে ও রোগ প্রতিরোধে এই ফলের প্রয়োজনীয়তা অনেক। সর্দি-জ্বর ও ঠাণ্ডা সারায়। গাছের ছাল আমাশয়, খিচুনি ও মাথা ব্যাথায় উপকারী। 

এই ফলে কপার, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ ও প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় হাড় মজবুত রাখে হৃদস্পন্দনে সাহায্য করে। এতে থিয়ামিন, নিয়াসিন ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সসহ আরো প্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় রক্তচাপ, স্ট্রোক ও করোনারি হার্ট রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। অপুষ্টিজনিত সমস্যায় উপকারী কাউ ফল। অনেকে পাতার রস চুলের খুসকি দূর করতে ব্যবহার করেন।

লবন, মরিচের গুঁড়া দিয়ে পাকা ফলের ভর্তা খেতে দারুণ স্বাদ। অনেকে আবার ছোট মাছের তরকারিতে কাউ ফল ব্যবহার করেন। আদিবাসীরা সবজি হিসেবে কাউয়ের পাতা খেয়ে থাকেন। অপরিপক্ক ফল দিয়ে চাটনি তৈরী করেন। বৌদ্ধরা কাপড়ে রঙ করতে বাকল ব্যবহার করেন। কষ দ্বারা রঙ, রজন ও বার্ণিশ তৈরী হয়। ইঁদুর ও পাখির অতি প্রিয় এই কাউ ফল।

স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’র পরিচালক মন্ডলীর একজন সামসুন নাহার জানান, ‘একসময় এখানকার শিশুদের বর্ষাকালের প্রিয় ফল ছিল কাউ। খাওয়ার পরে ফলের শক্ত বাকলে পিদিম জ্বেলে শিশুদের খেলা করতেও দেখা যেত। উপকূলীয় এসব অঞ্চলের বন-জঙ্গলে, খালের পাড়েঅহরহ দেখা মিলত কাউ গাছের। কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তন আর অবাধে গাছ কেটে বন-জঙ্গল উজাড় করায় কাউ গাছ কমছে। কিন্তু দিন দিন খাদ্য সচেতনতায় মানুষ কাউয়ের মতো দেশি জাতের ফলের আবার কদর করছে। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র’, ‘বুনো কৃষি’, ‘আমার শপ’, ‘শুদ্ধ কৃষি’ -এসব বিপণন কেন্দ্রেগুলোতে সার-বিষমুক্ত প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেঁতুল, রক্তগোটা, চাপালিশ কাঁঠাল (বুনো কাঁঠাল), ডেউয়া, হরিতকি, আমলকী, তাল, দেশি গাব, আম, খুদে জাম, গোলাপ জাম, চালতা, কাটাবোহরী, পায়লা, বৈঁচি কিংবা কাউয়ের মতো নানা সব দেশি ফলের চাহিদা বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় হাট-বাজারেও কাউয়ের চাহিদা বাড়ছে। ৭০-৮০ টাকা কুড়ি হিসেবে স্থানীয়রা কিনে নিচ্ছেন কাউ ফল। এটা লটকনের চেয়েও বহুলাংশে ভাল ফল। এখন বিভিন্ন নার্সারিতেও কাউয়ের চারা পাওয়া যায়। শখ করে হলেও গৃহস্থ বাড়িতে দু’একটি কাউয়ের চারা লাগানো উচিত। এতে আমাদের প্রচুর খাদ্য মান সম্পন্ন এই অপ্রচলিত ফলের প্রচলন বাড়বে।’

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি