ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ফুসফুসে বাতাস জমার কারণ ও প্রতিকার কি?

ডা. বালাসুব্রামনিয়াম কে আর 

প্রকাশিত : ১৯:২৯, ৪ নভেম্বর ২০২১

Ekushey Television Ltd.

শ্বাসতন্ত্রের একটি মৌলিক অঙ্গ ফুসফুস। আমাদের নিশ্বাস প্রশ্বাসের পরিচালনে ফুসফুস সহায়তা করে। তাই ফুসফুসে বায়ু প্রবেশ মানবশরীরের জন্য অপরিহার্য। তবে ফুসফুসে যদি তুলনামূলক বড় ছিদ্র বা গহ্বর তৈরি হয় তাহলে এই অপরিহার্য উপাদানটি অনেক সময় অনেকের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

আমাদের ফুসফুসে সাধারণত অনেক ছিদ্র থাকে, যার মাধ্যমে বাতাস চলাচল করে। তবে অনেকের ফুসফুসে তুলনামূলক বড় ছিদ্র বা গহ্বর তৈরি হয়। যা শরীরে অক্সিজেনের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। বাধা পাওয়ার কারণে মানুষের শরীরে স্বাভাবিকের থেকে কম অক্সিজেন প্রবেশ করে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। 

ফুসফুসে ছিদ্র হওয়ার কারণঃ
ফুসফুসে অগণিত ছোট ছোট বাতাসের থলি রয়েছে। এই থলিগুলো যদি অকেজো হয়ে যায়, তখন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে মানব শরীর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফুসফুসে বাতাস জমতে জমতে তা বেলুনের মতো আকার ধারণ করে, যাকে ‘বুলা’ বলা হয়। এই বুলা বা ফুসফুসে সৃষ্ট গহ্বর ফুসফুসকে ধীরে ধীরে অকেজো করে ফেলে। ফুসফুসের থলি অকেজো হলে- মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়, ‘বুলা’ ফুসফুসের সক্রিয় অংশে আঘাত হানে, বুলা হলে ধীরে ধীরে বাতাসের এই থলিগুলি বড় হতে থাকে, যা এক সময় অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। থলিতে জমা বায়ু নিষ্কাশিত হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) আছে এমন রোগীদের ফুসফুসে সাধারণত এমন সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ধূমপায়ী অথবা দীর্ঘ সময় ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকা মানুষদের ফুসফুসে বুলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

ফুসফুসের ছিদ্র বেড়ে গেছে কিনা বোঝার উপায়ঃ
ফুসফুসের ছিদ্র বেড়ে গেছে কিনা তা সহজে বোঝার উপায় নেই বললেই চলে কারণ এর নির্দিষ্ট কোন উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়না। এটি মূলত ফুসফুসের স্ক্যান করলেই ধরা পড়ে। তবে কাশি, অতিরিক্ত থুতু উৎপাদন, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, আঙ্গুলের ডগা এবং ঠোঁট নীল বর্ণ ধারণ করা, ক্লান্তি বেড়ে যাওয়া এ সবই ফুসফুসজনিত সমস্যার লক্ষণ।  

ফুসফুসের ছিদ্র অপসারণের পদ্ধতি- বালেক্টোমিঃ
ফুসফুসের এই গুরুতর রোগ ‘বুলা’ নিরাময়ের জন্যে বালেক্টোমি সার্জারি করা লাগে। তবে সৌভাগ্যবশত সবার এই সার্জারি করা প্রয়োজন পড়েনা। রোগীর শারীরিক অবস্থা, গহ্বর কতটা বড় এবং এমন গহ্বর ফুসফুসের কোথায় সৃষ্টি হয়েছে তার উপরে সার্জারির আবশ্যকতা নির্ভর করে। ফুসফুসে সৃষ্ট গহ্বর যদি এর এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে বড় হয়, তাহলে তা ফুসফুসকে সঠিকভাবে কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত করে। তখন সার্জারি আবশ্যক হয়ে পড়ে। 

বর্তমান করোনা মহামারির কারণে বেশিরভাগ মানুষের ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনকি করোনা সেরে গেলেও দেখা যাচ্ছে অনেকের ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হচ্ছেনা। তাই বর্তমানে আমাদের ফুসফুসের যত্ন নেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এজন্যে লক্ষণ দেখা দিলেই অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফুসফুসের রোগ নিরাময় করা উচিত। 

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ্ ফুসফুসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য হলেও এটি এমন একটি অঙ্গ যা পরিবেশ দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়। তাই ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে আমাদের সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। 

লেখক: কনসালটেন্ট, মিনিম্যালি ইনভেসিভ এবং রোবোটিক থোরাসিস সার্জন, ইয়াশোদা হসপিটালস, হায়দ্রাবাদ।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি