জেনেটিক ত্রুটি সংশোধনে সাফল্য
এবার দূর হবে বংশগত রোগও
প্রকাশিত : ১১:৩২, ২১ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১২:০৭, ২১ মার্চ ২০১৮
ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএর কারণে প্রাণঘাতি জটিল রোগ বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হতে থাকে। মা-বাবা কিংবা বংশের কারো ডায়াবেটিস, হৃদরোগ থাকলে এর ঘানি বয়ে বেড়াতে হয় পরবর্তী প্রজন্মের। যুগ যুগ ধরে এমনটি হয়ে আসলেও চিকিৎসা বিজ্ঞান এ বিষয়ে এতোদিন নির্বিকার ছিলো। তবে বিজ্ঞানীর সম্প্রতি ওইসব বংশগত রোগ থেকে মানুষকে বাঁচানোর দিশা খুঁজে পেয়েছেন। এর ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মানব-ভ্রূণ থেকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এই ডিএনএর কারণে প্রাণঘাতী হৃদরোগ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের শরীরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রবাহিত হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিতে এমন বংশপরম্পরায় চলে আসা ১০ সহস্রাধিক ত্রুটি বা স্বাস্থ্য সমস্যা সংশোধন করা যাবে।
বংশগত রোগে আক্রান্ত একজন পুরুষের শুক্রাণু প্রথমে একজন নারীর সুস্থ ডিম্বাণুর ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর যখন ভ্রূণে পরিণত হতে থাকে তখনই ক্রিসপার প্রযুক্তির সাহায্যে সেখানকার জেনেটিক ত্রুটি সংশোধন করা হয়। দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ ভ্রূণকে এ ত্রুটি থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের একটি দল মানব-ভ্রূণের ওপর এ গবেষণাটি চালিয়েছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী সুখরাত মিতালিপভ। যে প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ থেকে ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ দূর করা হয়েছে সেই এডিটিং-এর প্রযুক্তিগত নাম `ক্রিসপার`। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক এবং এর মাধ্যমে জেনেটিক ত্রুটি সংশোধনে সিসটিক ফিব্রোসিস থেকে শুরু করে স্তন ক্যান্সারের মতো রোগও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা হাইপারট্রফিক কার্ডিওমাইওপ্যাথি নিয়ে কাজ করেছেন। এই হৃদরোগটি অনেকের শরীরেই দেখা যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি ৫শ` জনের মধ্যে একজন এই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে হৃদযন্ত্র হঠাৎ অচল হয়ে যেতে পারে। ডিএনএতে থাকা একক একটি জিনের ত্রুটির কারণে এ রোগ হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে তার সন্তানের শরীরে এ রোগটি যাওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ।
ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ সরানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন, এ রোগে আক্রান্ত একজন পুরুষের শুক্রাণু প্রথমে একজন নারীর সুস্থ ডিম্বাণুর ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর যখন ভ্রূণে পরিণত হতে থাকে তখনই ক্রিসপার প্রযুক্তির সাহায্যে সেখানকার জেনেটিক ত্রুটি সংশোধন করা হয়। দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ ভ্রূণকে এ ত্রুটি থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
বিজ্ঞানী সুখরাত বলেন, `জিনের এই ত্রুটি একবার সংশোধন করার পর ত্রুটিমুক্ত জিনটি পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্মের শরীরেও প্রবাহিত হবে। এ কৌশল ব্যবহার করে এখন পরিবার ও মানবদেহের বংশগত বহু রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।
তবে বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিকে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখে পড়তে হবে সেটা হলো নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন। ল্যাবরেটরিতে তৈরি একটি ভ্রূণের এমন পরিবর্তন মানুষের করা উচিত কি-না? অনেকেই এ গবেষণার সমালোচনা করে বলছেন, এর ফলে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে শিশু জন্ম দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে। এছাড়া দেখা যাবে, শুধু ধনী ব্যক্তিরাই এ চিকিৎসা নিতে পারবে এবং বংশগতভাবে তারাই একের পর এক নীরোগ ও সুস্থ প্রজন্ম জন্ম দিতে পারবে। অন্যদিকে, দরিদ্র ব্যক্তিরা বংশগত এসব অসুখ-বিসুখে ভুগতে থাকবে।
সূত্র :বিবিসি
/এআর /