ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

ডায়েটে যে ভুলগুলো অনেকেই করে থাকেন

প্রকাশিত : ১৯:০৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

আমরা অনেকেই আছি, যারা চাই ওজন নিয়ন্ত্রনে আসুক। ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য আমরা ডায়েটিশিয়ানরা পরামর্শ দিয়ে থাকি লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে। ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ হচ্ছে ডায়েট। আর সেই ডায়েট করতে গিয়ে আমরা কিছু ভুল করে থাকি।

আমরা ডায়েট করতে গিয়ে প্রথম যে ভুলটা করি তা হলো নিজে নিজে ডায়েট শুরু করে দিই। তার প্রথম ফোকাসটাই হয় কার্বোহাইড্রেটকে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া বা কমিয়ে দেওয়া। বিশেষ করে ভাত একেবারেই বন্ধ করে দেন অনেকে।

বিষয়টা আসলে এরকম যে, আপনি যখন ডায়েট শুরু করবেন তার আগে একটা মানসিক প্রস্তুতি দরকার। হঠাৎ যদি ভাবেন, আমি ওজন কমাবো এবং টানা দু`তিন সপ্তাহ ডায়েট করে আবার ছেড়ে দেন সেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কারণ, তাতে আপনি যেটুকু ওজন কমাবেন তা বেড়ে আগের চাইতেও দু`এক কেজি বেশি বেড়ে যাবে।

তাই প্রথমে একটি টার্গেট সেট করুন। ওজন কমাতে হলে প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনাকে কতটুকু ওজন কমাতে হবে। যে ওজন কমাবেন তা যদি পাঁচ ছয় কেজির বেশী হয় তাহলে আমার পরামর্শ হচ্ছে একজন পরামর্শকের সাথে আলাপ করে নেওয়া ভালো। যদি এক্সপার্টের কাছে নাও যান, তাহলে মনের জোরটা বাড়াবেন।

রোজ ওজন মাপার দরকার নেই। প্রতিদিন ওজন মাপতে গেলে কতটুকু ওজন কমলো তা নিয়ে মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এতে মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। মানসিক শান্তি না থাকলে ওজন কমানো বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

কেন ওজন বাড়ল, ওজন বাড়ার ফলে শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দিল তা জানার জন্য কিছু টেস্টও আছে। আমি আমার পেশেন্টদের সব সময় টেস্টগুলো করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। টেস্টগুলো হচ্ছে হিমোগ্লোবিন কী অবস্থায় আছে,  কোলস্টেরলের মাত্রা কী অবস্থায় আছে, ডায়াবেটিস আছে কি-না বা থাইরয়েডের কী অবস্থা তা জানাটা জরুরি। বয়স যদি চল্লিশের উপরে হয় তাহলে তাদের কিডনি এবং লিভার চেক আপ করে নেওয়া উচিত। এর ফলে বুঝতে পারবেন কী ধরণের ডায়েট আপনি করবেন?
অনেকে একটা কমন ভুল করে থাকেন। তা হলো কার্বোহাইড্রেট একেবারে কমিয়ে দেন বা ছেড়ে দেন। অন্যদিকে প্রোটিন বাড়িয়ে দেন। দেখা গেল সারাদিন মানুষটা মাছ মাংস খাচ্ছে কিন্তু কার্বোহাইড্রেট নিচ্ছে না। এর ফলে কিন্তু কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে যদি তার বংশে কারো কিডনীর সমস্যা থেকে থাকে।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আরেকটি ভুল করে থাকে মানুষ। অনেকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বন্ধ করে দেয়। যেমন: খাওয়ার তেল। এটি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ। তেল বাদ দিয়ে শুধু সেদ্ধ সবজি খেলে ওজন হয়তো কমবে ঠিকই, কিন্তু হাড়, চামড়া ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মনে রাখবেন তেলে থাকা ভিটামিন- ডি এর অভাবে মানসিক বিষন্নতা ও তৈরি হতে পারে। খুব ভালো উদ্ভিজ্জ তেল খাওয়া উচিত তবে পরিমিত। সাধারণত আমরা বলে থাকি চা চামচের চার পাঁচ চামচ তেল খাবারে থাকতে পারে। কেউ চাইলে তিন চামচ তেলও ব্যবহার করতে পারেন।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আরেকটি ভুল সবাই করেন। খুব বেশি পরিমাণ বাদাম ও গ্রীন টি খেয়ে থাকেন। মনে রাখবেন, কোনো স্বাস্থ্যকর খাবারও যদি অতিরিক্ত খান তাহলে কোনো না কোনো সাইড এ্যাফেক্ট কাজ করে। তাই এক্ষেত্রে সাবধান থাকা উচিত। অতিরিক্ত গ্রীন টি থেকে ইনসোমনিয়া হওয়া, ঘুমের সমস্যা হওয়া, হাতের জ্বালা পোড়া হওয়া, ইউরিনের সমস্যা ইত্যাদি হয়ে থাকে। দিনে দু`কাপের বেশী গ্রীন টি না খাওয়া ভাল। হঠাৎ করে অতিরিক্ত বাদাম খেলে আপনার কিডনী বা ইউরিক এসিডের উপর প্রভাব পড়তে পারে। আবার অতিরিক্ত বাদামে ক্ষিধে নষ্ট হলে আপনি অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর মানে হচ্ছে আপনার খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় সব থাকতে হবে। কোনো পুষ্টিগুণ বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার হয় না।

প্রোটিন যুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকতে হবে। ডিম, মাছ, ননফ্যাট দুধ, টকদই এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত প্রোটিন। এগুলো ব্যালেন্স করে খেলেই সবচেয়ে ভাল।

কৃত্রিম কোনো কিছুই ভাল না। কৃত্রিম সবকিছু বাদ দেওয়া ভালো। খাদ্য তালিকা আমরা এমনভাবে করবো যাতে ওজনও কমবে, পাশাপাশি শরীরের কোনো প্রয়োজনীয় উপাদানে ঘাটতি দেখা দিবেনা।

শ্রুতি লিখন: আলী আদনান

পরামর্শদাতা : অ্যাপেলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ।

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি