ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

স্তন ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিকার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৫, ১১ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৪:১২, ১৭ মে ২০১৮

দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে প্রায় ২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। এরমধ্যে শুধু স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ২২ হাজার নারী। যার মধ্যে বিনা চিকিংসায় অর্থ্যাৎ চিকিংসার অভাবে প্রায় ১৫ হাজার নারী স্তন ক্যান্সার মৃত্যু বরণ করছেন। যা শতকরার হিসেবে প্রায় ৭০ভাগ। তবে আগাম সচেতনতা ও সুচিকিৎসায় রুখতে পারে স্তন ক্যান্সার এমনটায় মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. লতিফা আক্তার। সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক তবিবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন: কি কি কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে ?

ডা. লতিফা আক্তার : স্তন ক্যান্সার অনেকগুলো কারণে হতে পারে। তার মধ্যে মূল অপরিকল্পিত জীবন যাপন একটি কারণ। বলা যেতে পারে মেয়েদের দেরিতে বিয়ে হওয়া এর জন্য দায়ী। সন্তান না নেওয়া ইচ্ছা। সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অত্যধিক জন্মনিরোধক নেওয়া যেমন দায়ী তেমনি ধূমপান, মদপান, ফাস্টফুড খাওয়া, বসে বসে কাজ করাও একইরকমভাবে দায়ী। এছাড়া স্তন ক্যান্সারের জন্য ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জন্মগত কারণ দায়ী। মা-দাদীর স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে পরিবারের পরের প্রজন্মের মধ্যে এটি সঞ্চারিত হতে পারে। পরিবেশ দুষণকে অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয়। এছাড়া ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের কারণ এখনও অজানা।

একুশে টিভি অনলাইন: কিভাবে বুঝবে যে সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত?

ডা. লতিফা আক্তার: স্তন বৃন্তের চারপাশের রঞ্চক এলাকায় নাম ওরিওলা। যদি স্তন বৃন্তের এরিওলা কিংবা স্তনের যে কোন অংশ বাইরের দিকে ঠেলে উঠে অথবা এ সময়ে ভেতরের দিকে ফুলে উঠে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরার্মশ নিতে হবে। স্তন বৃন্ত থেকে স্বল্প পরিমাণ তরল পদার্থ নিংসৃত হলে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষরণের রং যদি লালচে বাদামি হয়। তাহলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেযজ্ঞ চিকিংসাকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্তনের বেশির ভাগ পিন্ড বা চাকাগুলো মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ নয়। দুধ উৎপাদক কোষ ও নালিকা উভয় স্তনে সুবিন্যাস্ত অবস্থায় থাকে। মাসিক চক্রের সময় তা বেড়ে যায়। এ সময়ে হরমোনের উঠানামা এবং স্তন টিস্যু সমূহ ফুলে যাওয়ার ব্যথা অনুভব হয়। এমন অবস্থাকে বলে ফাইব্রোসিসটিক স্তন রোগ। সিস্ট এবং ফাইব্রোএডেনোমা এ দুধরনের পিন্ড বা চাকা প্রাণঘাতী নয়। এটাকে বিনাইন বলা চলে অর্থ্যাৎ ঝকিঁপূর্ণ নয়। মারাত্নক ঝুকিঁপূর্ণ বা প্রাণঘাতি পিন্ড বা চাকাসমুহ শক্ত ধরনের এবং তা এ জায়গায় স্থায়ী থাকে। পক্ষান্তরে সিস্ট বা ফ্রাইব্রো এডেনোমার চাকাগুলো চারপাশ নাড়া করতে পারে এবং তা তলতলে হতে পারে। এটা অনেক ঝুকিঁপূর্ণ। এধরনের সমস্যা দেখা দিলেই ডাক্তার দেখাতে হবে।

একুশে টিভি অনলাইন: স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কি কি চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ডা. লতিফা আক্তার: স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে পুরোপুরি সেরে ওঠা সম্ভব। ক্যান্সার প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে সার্জারির পরে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা হরমোনাল থেরাপি করা হতে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে প্রথমে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। পরে সার্জারি করা হয়। চতুর্থ পর্যায়ে সার্জারির কোনো সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপি ও পরে রেডিওথেরাপি দিয়ে ক্যান্সার কিছুদিনের জন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। সার্জারির আগে যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় তাকে বলে নিওঅ্যাডজুভেন্ট থেরাপি। আর সার্জারির পরে হলে তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় অ্যাডজুভেন্ট থেরাপি। 

কার জন্য কোন থেরাপি যথাযথ, সেটি নির্ভর করে তার ক্যান্সার ঠিক কোন পর্যায়ে আছে তার উপর। আবার যাদের বয়স অপেক্ষাকৃত কম, তাদের ক্যান্সার প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে ধরা পড়লে পুরো স্তন বাদ না দিয়ে শুধু ক্যান্সারাস টিউমারটিকেই অপসারণ করে দেওয়া হয়। একে বলে অঙ্গ সংরণ সার্জারি। অনেকের প্রশ্ন, সার্জারির পরে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব কিনা। এর উত্তর হ্যাঁ, আর পাঁচজন নারীর মতোই আপনিও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। এমনকি দু’বছর পর মা-ও হতে পারবেন। স্তন বাদ দিয়ে দেওয়া হলে একধরনের বিষন্নতা দেখা দেয়। তখন প্লাস্টিক সার্জারি করার কথা ভাবা হতে পারে। আর বিষন্নতা কাটানোর জন্য কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।

একুশে টিভি অনলাইন: স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত যদি দীর্ঘ মেয়েদী হয় তাহলে জটিল কোন সমস্যা হবে কি না?

ডা. লতিফা আক্তার: যদি তিন থেকে চার বছর স্তন ক্যান্সারের বয়স হয় তাহলে অবশ্যই সমস্যা সৃষ্টি হবে। তখন অপরেশন ছাড়া রোগ মুক্তি সম্ভব নয়। আর যদি সমস্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে আসে। তাহলে অপরেশন ছাড়া মেডিসিনের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সর থেকে মুক্তি মিলবে।

একুশে টিভি অনলাইন: স্তন ক্যান্সার আগাম শনাক্তকরণে আপনার সুপারিশ কি ?

ডা. লতিফা আক্তার: স্বাভাবিকভাবে ১৯ থেকে ২০ বৎসর বয়স থেকে প্রত্যেক নারীকে মাসে অন্তত এক নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা উচিত। ৩৫ থেকে ৪০ বছর বৎসরের প্রত্যেক নারী অন্তত একবার বেসলাইন ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। যাতে পরবর্তী সময়ে কোন সমস্যা দেখা দিলে এর সঙ্গে তুলনা করা যায়।

যাদের বয়স ৪০ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে তাদের প্রত্যেকে অন্তত ২ বৎসর পরপর একবার ম্যামোগ্রাম করানো কর্তব্য। ৫০ বৎসরের বেশি বয়েসের নারীদের বছরে একবার অবশ্যই ম্যামোগ্রাম করা উচিত।

টিআর/টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি