ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চিকনগুনিয়ার উপসর্গ, চিকিৎসা ও প্রতিকার: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:১০, ১০ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৪:৪০, ১০ জুলাই ২০১৮

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

সময়টাই যেন জ্বরের। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কেউ না কেউ জ্বরে ভোগছেন। তাদের কেউ ভাইরাস জ্বরে আবার কেউ চিকনগুনিয়া বা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এই জ্বর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোর জ্বরের রোগীর ভিড় বাড়ছে। এই সময়ে একটু সতর্ক ও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসরা।

চিকনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণগুলো অন্যান্য সব ভাইরাল জ্বরের মতোই। হাড়ের জোড়ায় তীব্র ব্যথাই এই রোগের একমাত্র স্বতন্ত্র উপসর্গ। সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, বমিভাব, শারীরিক দুর্বলতা, সর্দি-কাশি, ইত্যাদি তো আছেই।

তবে সবচেয়ে বেশি ভোগায় ব্যথা। একটু সচেতন হলেই চিকনগুনিয়া থেকে সহজের মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনের পাঠকদের উদ্দেশে  চিকনগুনিয়া নিয়ে দেওয়া টিপসে তিনি একথা বলেন। দেশের প্রথিতযশা এই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে  লিখেছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।

একুশে টিভি অনলাইন: চিকুনগুনিয়া কি?

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ: চিকনগুনিয়া ভাইরাস হচ্ছে টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলা হয়ে থাকে। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাস ও একই মশার মাধ্যমে এর রোগ ছাড়ায়।

একুশে টিভি অনলাইন:  চিকনগুনিয়ার লক্ষণগুলো কী কী?

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ: প্রথম জ্বর দিয়ে শুরু হয়। ধীরে ধীরে জ্বরের তীব্রতা বাড়ে। অধিকাংশ সময় তিন থেকে চারদিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। তবে হাড়ের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা নাছোড়বান্দায় রূপ নেয়। ব্যথার তীব্রতাও থাকে প্রচণ্ড। ফলে রোগীর স্বাভাবিক হাঁটাচলা, হাত দিয়ে কিছু ধরা এমনকি হাত মুঠ করতেও বেশ কষ্ট হয়। আর শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় হাটা চলা বন্ধ হয়ে যায়।

একুশে টিভি অনলাইন:  চিকনগুনিয়ার করণীয় কী?

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ : টানা ৩ থেকে ৪ দিন জ্বর থাকলে এবং শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হলে চিকনগুনিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। এই জ্বরে শরীরে প্রত্যেকটা পয়েন্টে পয়েন্টে ব্যথা হয়।

এই রোগে বিশেষ কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা পর কিংবা তিনবেলা প্যারাসিটামল খেতে হবে। তবে কোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে কোনো উপকার নেই। বরং অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পাশাপাশি ডাবের পানি, স্যালাইন, লেবুর সরবত ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।

তবে একটা বিষয় বলে রাখা ভালো- একবার চিকুনগুনিয়া হলে দ্বিতীয়বার সেই রোগীর এই রোগ আর হয় না। তবে অনেক চিকুনগুনিয়া রোগী এমনও পাওয়া যায় যাদের জ্বর তিন চার দিন সেরে গেলেও ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে না আজীবনেও।

একুশে টিভি অনলাইন: চিকনগুনিয়ায় সব চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা ?

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ: সাধারণত এটা মশা বাহিত রোগ। তাই অপরিষ্কার ও বদ্ধ পানিতে মশা জন্মায় এবং যাদের আশপাশে এ রকম মশা বৃদ্ধির জায়গা আছে, সে সব মানুষেরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন।

একুশে টিভি অনলাইন: চিকনগুনিয়ার কীভাবে ছড়ায়?

ডা. এবিএম আবদুল্লাহ : প্রাথমিকভাবে চিকনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস ইজিপ্টাই অথবা এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়। এছাড়া চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময়ে অসাবধানতায় এ রোগ ছড়াতে পারে।

একুশে টিভি অনলাইন: প্রতিকার কী ?

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ: মশার জন্মস্থান ধ্বংস করা: আবাসস্থল ও এর আশপাশে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। বাসার আশপাশে ফেলে রাখা মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোলা ইত্যাদি যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করতে পারে। এসব স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সে ব্যাপারে লক্ষ রাখা এবং নিয়মিত বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার করা। সরকারের মশা নিধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা। এক্ষেত্রে ব্যাক্তি নিজে ও ঢাকা সিটি করপোরেশন বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে।

টিআর/ এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি