ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ১৪ করণীয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫৫, ১৬ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৮:১৮, ১৬ জুলাই ২০১৮

দেশে যে কয়টি রোগে অাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির একটি সূত্র জানায়, অান্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন এটলাসের জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৭৯ লাখ ৫০ হাজার রোগী অাছে।

ডায়াবেটিক সমিতি অারও জানায়, ১৯৮৯ সালে ঢাকা শহরে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানে (বারডেম জেনারেল হাসপাতাল) নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ। কিন্তু ২০১৬-১৭ সালে ঢাকা ও তার অাশে পাশে ২৮টি প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ নিবন্ধিত রোগী রয়েছে। ২০১৫ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৩৫ লাখ ও ২০১৪ সালে তা ছিল ৩০ লাখ। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে পাঁচ লাখ লোক নতুন করে ডায়াবেটিসে অাক্রান্ত হচ্ছে। মানুষের খাদ্যাবাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে এর ভয়াবহতা অাগামীতে অারও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা।

ডায়াবেটিস পুরোপুরি কখনো ভালো না হলেও ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অার তার জন্য প্রয়োজন ডায়াবেটিস সংক্রান্ত প্রাথমিক কিছু নিয়ম কানুন জেনে রাখা। ডায়াবেটিস অাক্রান্ত রোগীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রখ্যাত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও বারডেম জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ডা. উম্মে সালমা। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ওষুধ বা ইনসুলিন নিয়ে অামার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অাছে। অামি কী ওষুধ বা ইনসুলিন বন্ধ করে দিতে পারব?

ডা. উম্মে সালমা: এই মুহুর্তে যদি ওষুধ বা ইনসুলিন বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে ডায়াবেটিস অাবার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কখনো ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন বন্ধ করা যাবে না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ডায়াবেটিস কী ছোঁয়াচে রোগ?

ডা. উম্মে সালমা: ডায়াবেটিস কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। পরিবারের একজনের ডায়াবেটিস হলে তার সংস্পর্শে এলে অন্যদের কখনো ডায়াবেটিস হবে না। তবে বাবা মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে পরবর্তীতে সন্তানদের ডায়াবেটিস হতে পারে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ডায়াবেটিস রোগীরা কী মিষ্টি ফল খেতে পারবে?

ডা. উম্মে সালমা: ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি ফল খাওয়া যায়। তবে তা খেতে হবে পরিমাপ ঠিক রেখে। ফলের পরিমাণ বারডেম কর্তৃক সরবরাহকৃত গাইড বইয়ে দেওয়া অাছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ডায়াবেটিস অাক্রান্ত নারী কী সন্তান ধারণ করতে পারবে?

ডা. উম্মে সালমা: ডায়াবেটিস অাক্রান্ত নারী অবশ্যই সন্তান ধারণ করতে পারবে। তবে তার জন্য সন্তান ধারণ পূর্ববর্তী এবং গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে হবে। না হলে গর্ভস্থ শিশুর নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে খাবার কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না। একমাত্র চিকিৎসা ইনসুলিন ইনজেকশন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  ডায়াবেটিক রোগীরা কী খাবার স্যালাইন খেতে পারবে?

ডা. উম্মে সালমা: ডায়াবেটিক রোগীরা খাবার স্যালাইন খেতে পারবে। তবে তা শুধু ডায়রিয়া হলে বা বারবার বমি হলে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য দৈনিক কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে?

ডা. উম্মে সালমা: দৈনিক ৩০-৪০ মিনিট সময় ব্যায়াম করলেই যথেষ্ট। ব্যায়াম হিসেবে দ্রুত গতিতে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা ঘরে বসে ব্যায়ামের যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যায়াম করা যেতে পারে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: করলার রস, চিরতার পানি, জামের বীচি, মেহগনির বীচি ইত্যাদি খেলে কী ডায়াবেটিস কমে?

ডা. উম্মে সালমা: এ সমস্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়বে না। কারণ এর কোনোটাই মিষ্টি জাতীয় খাবার না। তবে এই খাবারগুলো খেলে ডায়াবেটিস অাদৌ কমবে কিনা বা কতটুকু কমবে সে ধরণের কোন তথ্য অামাদের জানা নাই।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  অামি যদি ওষুধ খেতে বা ইনসুলিন নিতে ভুলে যাই তাহলে কী করব?

ডা. উম্মে সালমা: যদি ওষুধ বা ইনসুলিন খাওয়ার অাগে নেওয়ার কথা থাকে তাহলে খাওয়ার মাঝখানে বা খাওয়ার অাধা ঘণ্টা মধ্যে মনে পড়লেও নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে একটু বাড়তি শর্তরা জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে হবে। তবে খাওয়ার অাধা ঘণ্টা পরে মনে পড়লে ওই বেলার ওষুধ বা ইনসুলিন অার নেওয়া যাবে না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  একবার ইনসুলিন নিলে সারা জীবনই নিতে হবে?

ডা. উম্মে সালমা: কিছু ক্ষেত্রে সারাজীবনই ইনসুলিন নিতে হবে। যেমন বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হলে ( টাইপ- ১), মুখে খাওয়ার ওষুধ সর্বোচ্চ মাত্রায় দেওয়ার পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না অাসলে। অাবার কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন: গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসব করার পর, বড় কোন অপারেশনের পরবর্তী পর্যায়ে যখন রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হবে। অাবার কিছু ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের প্রথম অবস্থায় যদি ডায়াবেটিস খুব বেশি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে সেক্ষেত্রে কিছুদিন ইনসুলিন নিয়ে শর্করার মাত্রা কমিয়ে এনে মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  ডায়াবেটিক রোগী কী বাজারের বিভিন্ন কোমল পানীয় পান করতে পারবে?

ডা. উম্মে সালমা: না, কোন ধরণের কোমল পানীয় পান করা যাবেনা। কারণ, একগ্লাস কোমল পানীয় ( কোক, পেপসি, সেভেনঅাপ) মানেই হচ্ছে ঘন এক গ্লাস চিনির শরবত। তবে যে সমস্ত কোমল পানীয়র উপরে `ডায়েট` কথাটা লিখা থাকবে তা পান করা যাবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  বিকল্প চিনি দিয়ে কী চা কফি শরবত খাওয়া যাবে?

ডা. উম্মে সালমা: বিকল্প চিনি দিয়ে চা, কফি, শরবত খাওয়া যাবে। প্রতিদিন ২/৩ কাপ চা, কফি বিকল্প চিনি দিয়ে পান করলে তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: মাটির নীচের সবজি খেলে কী ডায়াবেটিস বাড়বে?

ডা. উম্মে সালমা: মাটির নীচে বা ওপরে- যে সবজিগুলোতে শর্করা জাতীয় উপাদান অাছে তা বেশি খেলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ বাড়বে। যেমন: অালু মাটির নীচে থাকে যা পুরোটাই শর্করা জাতীয় খাবার। কাজেই অালু বেশি খেলে শর্করা বাড়বে। অাবার মিষ্টি কুমড়া গাছে ধরে। মাটির ওপরে থাকে। কিন্তু এটা বেশি খেলেও শর্করা বাড়বে। অাবার পেঁয়াজ, রসুন, অাদা, বাদাম এগুলো মাটির নীচে থাকে কিন্তু বেশি খেলেও রক্তের শর্করা বাড়ায় না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ডায়াবেটিক রোগীর যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে কী ডিম, দুধ খেতে পারবে?

ডা. উম্মে সালমা: উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে দুধ, ডিমের কোন সম্পর্ক নাই। রক্তচাপ বাড়ে লবন ও লবনাক্ত খাবার (চিপস, লবনযুক্ত বাদাম, মাছ ইত্যাদি) খেলে। তাছাড়া অনিদ্রা, মানসিক দুঃশ্চিন্তা ইত্যাদি কারণেও রক্তচাপ বাড়তে পারে। একজন ডায়াবেটিক রোগী চাইলে প্রতিদিন ১টা ডিম ও ১ কাপ দুধ খেতে পারে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?

ডা. উম্মে সালমা: ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে পরিবর্তিত জীবন যাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস। যেমন: পরিশ্রম না করা, ফাস্টফুড, জাংক ফুড বেশি খাওয়া, অত্যধিক মানসিক চাপ ইত্যাদি।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি