ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চুল পড়ার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৯, ১৫ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১৭:২৬, ১৫ আগস্ট ২০১৮

ডা. জাহেদ পারভেজ বড়ভুঁইয়া

ডা. জাহেদ পারভেজ বড়ভুঁইয়া

চুল পড়া বর্তমান সময়ের একটি বড় সমস্যা। তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সী মানুষই বর্তমানে এই সমস্যায় ভোগে। অনেকের অল্পতেই চুল পড়ে মাথা সামনের দিকে খালি হয়ে যায়। আবার অনেকের ‍চুল পড়তে পড়তে একটা সময় মাথায় টাক পড়ে যায়।

চুল পড়ার জন্য অনেকে দায়ী করেন দুশ্চিন্তাকে। কেউ কেউ বলেন, বংশগত কারণে চুল পড়ে। আবার অনেকে বলেন, খাদ্যাভাস চুল পড়ার জন্য দায়ী। কী ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে একুশে টিভির কথা হয়  ডা. জাহিদ পারভেজ বড় ভুঁইয়ার সঙ্গে। তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিবাগের সহকারী অধ্যাপক।  

প্রশ্ন: চুলপড়া সারা বিশ্বে একটি বড় সমস্যা। চুল পড়া কীভাবে রোধ করা যেতে পারে?

ডা. জাহিদ পারভেজ: চুল পড়ার জন্য প্রধানত দায়ী লাইফস্টাইল। লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট চুল পড়াটা অনেকটা কমিয়ে ফেলে। পরিমিত ঘুম, পরিমিত খাবারের পাশাপাশি সাধারণ ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য জরুরী। চুল শরীরের বাইরের কোন জিনিস নয়, শরীরেরই অঙ্গ। ফলে খাবার-ঘুম-ব্যায়াম চুলের সঙ্গে জড়িত। একজন মানুষ কী ধরনের তেল ব্যবহার করছেন, কী ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন এ প্রশ্নও এসে যায়।

পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকাল ফাস্টফুড কালচার খুব দ্রুত বাড়ছে। এই ফাস্টফুডের ফলাফল কিন্তু চুলের জন্য ক্ষতিকর। দৈনন্দিন জীবনে ১০০- ১৫০টা চুল একজন মানুষের স্বাভাবিক ভাবেই পড়ে। এই ১০০-১৫০ চুল পড়ার পর যদি রি- গ্রোথ না হয় তখনই দেখা যায় একজন মানুষের চুল ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। টাক দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন : চুল পড়া কী কোনো বংশগত সমস্যা?

ডা. জাহিদ পারভেজ: হ্যাঁ, আমাদের কাছে নিয়মিত যেসব রোগী আসে সেখানে আমরা দেখি টাক রোগীর সংখ্যা বিরাট। আমাদের শরীরে এমন একটা হরমোন আছে ( ডিএসটি হরমোন) যেটা আল্লাহর দেওয়া নিয়মে প্রতিনিয়ত কনভার্টেড হচ্ছে। বংশগত কারণে বা জ্বীনগত কারণে একটা শক্ত পদার্থ চুলের গোড়ায় জমে। ফলে চুল নিউট্রিশন নিতে বাধাগ্রস্ত হয়। এভাবে চুলটা এক সময় ছোট হয়, চিকন হয়। এক পর্যায়ে দেখা যায় সেটা ছোট লোম লোম হয়ে যায়। একপর্যায়ে ডিএসটি হরমোনের প্রভাবে লোমটাও পড়ে যায়। এটাকে বলা যায় বংশগত টাক।

বংশগত টাক সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। আমার বাবার মাথায় ভাল চুল আছে, তাই বলে আমার মাথায়ও ভালো চুল থাকবে তা না। বা আমার বাবার মাথায় টাক বলে আমারও টাক হবে তাও না।

প্রশ্ন: কী ধরণের খাবার খেলে চুলের বংশবৃদ্ধি হবে? চুল সুস্থ থাকবে?

ডা. জাহিদ পারভেজ: আমি আগেই বলেছি চুল পড়ার প্রধান কারণের মধ্যে ডিএসটি হরমোন অন্যতম। এখনকার গবেষণায় দেখা গেছে আমরা যে চীনা বাদাম খাই, সেই বাদাম ভাঙ্গার পর একটা হালকা লেয়ার থাকে। এটা আমরা ফেলে দিই। অথচ এটা ডিএসটি ইনহেবিটর হিসেবে কাজ করে ন্যাচারালি। পাশাপাশি অনেকেরই কাচা ছোলা খাওয়ার অভ্যাস আছে। পরিমিত মাত্রায় ছোলা খেলে খুব উপকার হয়। এর পাশাপাশি সবুজ শাক সবজি, মাছ মাংস, সুস্বাদু খাবার সুস্থ চুলের জন্য কার্যকর।

প্রশ্ন : অনেক সময় অনেক রোগী দেখা যায় যাদের চুল জায়গায় জায়গায় খোপ খোপ হয়ে পড়ে গেছে। এটি কেন হয়?

ডা. জাহিদ পারভেজ: জায়গায় জায়গায় চুল না থাকা এটা হঠাৎ করেও হতে পারে। এক রাতের মধ্যেও পড়ে যেতে পারে। এটা একটা ডিজিজ। এটা চিকিৎসা ছাড়াও নিজে নিজে সুস্থ হয়ে যেতে পারে। সাধারণ কিছু চিকিৎসা আছে। যেমন উচ্চ মাত্রার স্টেরোয়েড ক্রীম। এটা আমরা দিয়ে থাকি।

প্রশ্ন: চুল পড়া সমস্যায় সাধারণত কী ধরনের পরীক্ষা করেন?

ডা. জাহিদ পারভেজ: সাধারণত রক্ত পরীক্ষা দিই। হিমোগ্লোবিন টেস্ট। আমাদের দেশে মেয়েদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব কম থাকে। যা চুল পড়ার খুব বড় কারণ। পাশাপাশি আজকাল যেটা পাই ভিটামিন `ডি` ডেফিসিয়েন্সি। চুল ধরে রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন যেসব রোগী আমাদের কাছে আসে পরীক্ষা করলে দেখা যায় শতকরা ৮৫% রোগী ভিটামিন `ডি`- এর অভাবে ভুগছে। পাশাপাশি আমরা থাইরয়েড হরমোন চেকআপ করে থাকি। ব্লাড সুগারটা দেখি। ডায়াবেটিসের ভূমিকাও থাকে। এছাড়া চুলের কন্ডিশন, স্কাল্পের কন্ডিশন দেখি। বয়স অনুযায়ী চুলের অনুপাত ঠিক আছে কিনা, ফাঙ্গাস ঠিক আছে কিনা মূলত এসব পরীক্ষা করা হয়।

প্রশ্ন : কীভাবে চুল পড়া রোধ করা যায়?

ডা. জাহিদ পারভেজ: চুল পড়া রোধে ডায়েট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রচুর শাক সবজি ও ফলমূলের পাশাপাশি বায়োটিন নামে একটা ওষুধ খেলে চুল পড়া কমে যাবে ও চুলের গ্রোথ বেড়ে যাবে। পাশাপাশি আয়রন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমরা নিতে পারি।

প্রশ্ন : বিভিন্ন বিউটি পার্লারে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙ্গে চুলে মেখে দিতে দেখা যায়। এটা চুলের জন্য কেমন কার্যকর?

ডা. জাহিদ পারভেজ: একটা সময় ধারণা ছিল ভিটামিন `ই`- এর একটা বড় রোল আছে। কিন্তু যতোই দিন যাচ্ছে গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন `ই` চুলের চেয়ে স্কিন ও মানুষের শারীরিক কিছু ফিজিক্যাল ফিটনেসের ক্ষেত্রে বেশী কাজে দেয়। চুল পড়া রোধে ভিটামিন ` ই` খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। স্কাল্পে ভিটামিন ` ই` ম্যাসাজ করলে যে চুলের গ্রোথ বাড়বে তা কোনদিন সম্ভব নয়।

প্রশ্ন : চুল পড়ার চিকিৎসা কিভাবে দিয়ে থাকেন?

ডা. জাহিদ পারভেজ: বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। একটা তরুণের চিকিৎসা ও একজন বয়স্ক রোগীর চিকিৎসা এক রকম নয়। আলাদা রকমের থেরাপী দেওয়া হয়। পাশিপাশি মেডিকেটেড শ্যাম্পু, পুষ্টিকর খাবার এসবকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়। একবারেই যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে যেটা করে থাকি সেটা হলো ট্রান্সপ্লান্ট। অর্থাৎ চুল প্রতিস্থাপন।

প্রশ্ন : চুল পড়ার আধুনিক চিকিৎসা বলতে আমরা কী বুঝব?

ডা. জাহিদ পারভেজ: আধুনিক চিকিৎসা বলতে আমরা বুঝব পিআরপি থেরাপীর কথা। এই থেরাপী বেশ কার্যকর।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি