ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কখন অন্ত:স্বত্ত্বার সিজার করা জরুরি: ডা. ফয়েজা আক্তার(ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:০৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডা. কাজী ফয়েজা অাক্তার

ডা. কাজী ফয়েজা অাক্তার

অন্ত:স্বত্ত্বার সবথেকে বড় ভয় প্রসবকালীন ব্যথা। এই ব্যথা থেকে রেহাই পেতে অনেকে নিজ থেকেই সিজারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এভাবে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সিজার। চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী গত দশ বছরে দেশে সিজারের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণ। এর ফলে একদিকে যেমন মাতৃমৃত্যু হার বাড়ছে অন্যদিকে সিজার পরবর্তী সময়ে মায়ের শরীরে দেখা দেয় নানা সমস্যা।

তবে সিজার অনেক সময় অপরিহার্য হয়ে উঠে। অন্ত:স্বত্তা মা ও গর্ভস্থ সন্তানের অবস্থার উপর চিকিৎসকদের এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটিই জানালেন ইমপালস হাসপাতালের গাইনী, প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার এমবিবিএস,এমসিপিএস, এফসিপিএস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোন কোন ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অন্ত:স্বত্ত্বার সিজারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: কিছু কিছু অবস্থায় নরমাল ডেলিভারী করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কিছু কন্ডিশান থাকে মায়ের আবার কিছু কন্ডিশন থাকে গর্ভস্থ শিশুর। গর্ভাবস্থায় ফুল যদি একেবারে জরায়ুর মুখে থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে নরমাল ডেলিভারি অ্যালাউ করা সম্ভব হয় না।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে মায়ের স্পেস ছোট থাকা। এই ধরনের অবস্থায় দেখা যায় বাচ্চা ওই স্পেস দিয়ে নামবে না। সেক্ষেত্রে আমরা বাধ্য হই সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে।

বাচ্চারও কিছু বিষয় আছে। যেমন- হঠাৎ করে বাচ্চার মুভমেন্ট কমে যাওয়া, বাচ্চার হার্টবিট খুব কমে যাওয়া বা খুব বেড়ে যাওয়া, বাচ্চা অনেক সময় পেটের মধ্যে পায়খানা করে আবার তা খেয়েও ফেলে- এ ধরনের বিষয় যদি আমরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারি, তাহলে কোনো অবস্থাতেই স্বাভাবিক ডেলিভারী করতে দিই না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রথম সন্তান সিজারে হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও কি সিজার জরুরি হয়ে উঠে?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: এটা শতভাগ সত্যি, এমন কথা বলা ঠিক হবে না। মায়ের স্পেস যদি ছোট হয় তাহলে পরবর্তী ডেলিভারীর ক্ষেত্রেও সেই স্পেস ইমপ্রুভ করার কোনো সুযোগ তো নাই। তাই পরবর্তীতেও সিজারই করতে হবে। কিন্তু বাচ্চার মুভমেন্ট কমে যাওয়া, পেটের মধ্যে বাচ্চার পায়খানা করে দেওয়া, এসব কারণে যদি প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে সিজার হয়, তাহলে পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে বাচ্চা স্বাস্থ্যবান থাকলে, অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে আমরা চাইলে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারী এ্যালাউ করতে পারি।

তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে। আগের সিজারে যে সেলাইটা সেটা আমরা আগেই পরীক্ষা করে নেব। আগের সেলাইটা কতটুকু মজবুত। দ্বিতীয় বিষয় হলো- আমার ( কর্তব্যরত চিকিৎসকের) সেই সামর্থ্য থাকতে হবে যাতে করে প্রথম থেকেই আমি মনিটর করে বুঝতে পারি আগের সেলাইটা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না। যদি দেখা দেয় তাহলে তাকে দ্রুত সিজার টেবিলে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তার মানে তাকে ( মাকে) ২৪ ঘন্টা মনিটর করার সুযোগ ও দক্ষতা থাকতে হবে। অর্থাৎ আগের বাচ্চা সিজার হলে পরের বাচ্চা যদি নরমাল ডেলিভারী করতে চায় তাহলে এমন হাসপাতালে করা উচিত যেখানে সব ধরনের সুযোগ বিদ্যমান।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এক্ষেত্রে কোন হাসপাতালগুলো নিরাপদ?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: বাংলাদেশে এখন কিছু কর্পোরেট হসপিটাল আছে যেখানে পর্যাপ্ত স্টাফ আছে যারা অন্ত:স্বত্ত্বার সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে পারে। তবে অধিকাংশ হসপিটালের পর্যাপ্ত স্টাফ নেই যাতে তারা কোনো রোগীর পেছনে এতক্ষণ সময় দিতে পারবে।

তবে আমি এখন যে হাসপাতালে কাজ করছি, ইমপালস হাসপাতালের কথা বলতে পারি। এখানে আমরা লেবারের জন্য আলাদা ইউনিট চালু করেছি। যেখানে স্পেশালিস্ট, কনসালটেন্ট, মেডিক্যাল অফিসার, নার্স সবাই এমনভাবে প্রশিক্ষিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত যাদের কাজই হলো- একজন গর্ভবতী নারী যখন স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ভর্তি হন তখন থেকে শুরু করে সুস্থ স্বাভাবিক প্রসব করে বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত তার সেবা করা।

তারা রোগীকে খুব গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে থাকে। তাদেরকে হাসপাতালের অন্য রোগীকে সময় দিতে হয় না। ইমপালস হাসপাতাল যেহেতু আলাদা একটা টিম রেখেছে সেহেতু তাদের পক্ষে সম্ভব আলাদা ভাবে প্রসূতিকে সেবা করা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সিজারের পূর্বে প্রসূতির পরিবারের কেমন প্রস্তুতি রাখা উচিত?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: প্রসূতির হিমোগ্লোবিন কম থাকলে আমরা প্রসূতির পরিবারকে একজন ব্লাড ডোনার রেডি রাখতে বলি। যেদিন প্রসূতি হাসপাতালে ভর্তি হবে সেদিন সে অন্তত ছয় থেকে আট ঘন্টা না খেয়ে থাকবে। কেননা যে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়, ফুল স্টোমাকে এ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সিজারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর জন্য দায়ী কে রোগী না চিকিৎসক?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: আগে আমাদের দেশে মায়েরা অত সচেতন ছিলেন না। তারা ডাক্তারের কাছে যেতেন না। তখন একেক জন মায়ের সাত আট জন বাচ্চা ডেলিভারী হতো বাসায়ই। এদের মধ্যে দু`তিন জন বাচ্চা হয়তো মারাও যেতো। সেটা নিয়ে তারা খুব কষ্ট পেতেন না। কিন্তু এখন আমাদের মেয়েরা সাবলম্বী, শিক্ষিত। তারা দু`একটির বেশি সন্তান নিচ্ছেন না। প্র্যাগনেন্সির ব্যাপারেও তারা খুব সচেতন। যেহেতু তারা থার্ড বা ফোর্থ বেবির কথা ভাবতেও চান না, তাই তাদের কাছে প্রথম সন্তান বা দ্বিতীয় সন্তান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা ডেলিভারীর ব্যথাও সহ্য করতে নারাজ। আগে আমরা মা বা সন্তান মারা যাওয়ার কারণ শনাক্ত করতে না পারলেও এখন পারছি। সব তথ্য সংরক্ষিত থাকায় ডাটাগুলো পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সিজার চোখে লাগছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের এখানকার সিজারের পার্থক্যগুলো কী কী?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: সম্প্রতি আমি একটা কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে কানাডা থেকে আট জন আলোচক এসেছিলেন। তারা যেটা বললেন সেটা হলো- তারা তাদের দেশে নির্দিষ্ট কিছু কারণ ছাড়া সিজার করেন না। তারা আমাকে বললেন, তাদের দেশে ৯০ % স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়। একটা ছোট্ট ইনজেকশান দিয়ে মায়ের ব্যথাটা রিলিফ করা হয়। যার ফলে মায়েরা উৎসাহী হয় এই পদ্ধতি অনুসরন করার। আমাদের দেশেও এই পদ্ধতি শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রচারণার অভাবে মায়েরা নিজেরাও পদ্ধতিটি সম্পর্কে জানে নাই, মানুষের মধ্যেও উৎসাহ আসে নাই। স্টাফের স্বল্পতা, এ্যানেস্থসিয়ার স্বল্পতাও এসবের জন্য দায়ী।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: একুশে পরিবারের প্রতি শুভ কামনা।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি