ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সিজারের স্বাস্থ্যঝুঁকি : ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৩০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অন্ত:স্বত্ত্বার সবথেকে বড় ভয় প্রসবকালীন ব্যথা। এই ব্যথা থেকে রেহাই পেতে অনেকে নিজ থেকেই সিজারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এভাবে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সিজার। চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী গত দশ বছরে দেশে সিজারের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণ। এর ফলে একদিকে যেমন মাতৃমৃত্যু হার বাড়ছে অন্যদিকে সিজার পরবর্তী সময়ে মায়ের শরীরে দেখা দেয় নানা সমস্যা।

সিজারের নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন ইমপালস হাসপাতালের গাইনী, প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার এমবিবিএস,এমসিপিএস, এফসিপিএস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সিজারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: সিজার একটা অপারেশন। যেকোনো অপারেশনেই শরীরে একটা প্রভাব তো পড়বেই। তার চেয়ে বড় বিষয় মায়ের পেটে যে কাটা টা থাকে সেই কাটা থেকে পরবর্তীতে হার্নিয়া হতে পারে। হার্নিয়া হলে পেটের চামড়াটা উইক হয়ে যায় এবং সেদিক দিয়ে খাদ্য নালী বাইরের দিকে পুশ করে। যারা দুটো বা তিনটা সিজার করিয়েছেন তাদের জন্য এটা খুব কমন সমস্যা। স্বাভাবিক প্রসবের পর মায়েরা যত সহজে ওজন কমাতে পারেন সিজারে প্রসবের পর মায়েরা তত সহজে ওজন কমাতে পারেন না।

যেকোনো সার্জারী করতে গেলে আমরা অপারেশন থিয়েটারে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হই। যেমন মায়ের রক্তক্ষরণ হওয়া, মায়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গা- যেমন খাবার নালীতে, প্রস্রাবের থলিতে ইনজুরি হওয়া। এমন কোনো পরিস্থিতি যদি হয়, এবং সেটা যদি মায়ের থার্ড বা ফোর্থ টাইম সিজার হয় তাহলে মায়ের জন্য একটা ঝুঁকির বিষয় যেটা তাকে সারা জীবন ভুগতে হয়।

একুশে টিভি অনলাইন: ব্যথামুক্ত সিজারের জন্য বর্তমানে অনেকে ইপিডুরাল প্রসব পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। এটি কতটা স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: ইপিডুরাল একধরনের স্বাভাবিক প্রসব। এতে সবকিছুই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রেখেই সন্তান প্রসব করানো হয়। কোনো সিজার বা অস্ত্রোপ্রচারের দরকার পড়ে না।

তবে অন্যান্য স্বাভাবিক প্রসবে মায়ের যে ব্যথা হয়, এখানে সেই ব্যথা হবে না। মা কোনো ধরনের ব্যথা অনুভব ছাড়াই সন্তান প্রসব করবেন। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে এ্যানেস্থেসিয়া। ডাক্তার এক্ষেত্রে একটি ছোট ইনজেকশন কোমরে দেন। এটাকে বলে ইপাডুরাল এ্যানেস্থেসিয়া।

এই ইনজেকশান দেওয়ার ফলে রোগী কোনো ধরনের ব্যথা অনুভব করেন না। কিন্তু বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে নিচে নামা, স্বাভাবিকভাবে প্রসব হওয়া, এসব ক্ষেত্রে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয় না। এটা একটি লোকাল এ্যানেস্থেসিয়া। কোমরের ওই জায়গাটাতে লোক্যালি কাজ করবে। আর কিছুই না।

এই ইনজেকশন দেওয়ার পর রোগী স্বাভাবিক হাঁটা চলা করতে পারবেন। ওয়াশরুমে যেতে পারবেন। তিনি তার সন্তানের মুভমেন্ট বুঝতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সারাক্ষণ এই রোগীকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: পুরো প্রক্রিয়াটা আপনারা কীভাবে সম্পন্ন করেন?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: আমরা সেক্ষেত্রে যা করছি, আমি একজন কনসালটেন্ট, সঙ্গে আমার রেজিস্ট্রার, আমার মেডিক্যাল অফিসার, একজন নার্স এবং একজন এ্যানেস্থেলোজিস্ট, আমরা সবাই মিলে সর্বদা পেশেন্টকে মনিটর করি। বাচ্চার হার্টবিট, মায়ের জরায়ুর অবস্থা, জরায়ুর মুখ কেমন খুলে গেল ইত্যাদি দেখা হয়।

এছাড়া ইপিডুরাল দেওয়ার ফলে মায়ের ব্লাড প্রেসারসহ অন্যান্য সব দিকগুলো ঠিক আছে কি-না সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: স্বাভাবিক প্রসবে মা একটা ব্যাথা অনুভব করেন। ইপিডুরাল পদ্ধতিতে কী মা সেই ব্যথা অনুভব করেন?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: হ্যাঁ, এখানে দুটো ব্যাপার আছে। একটা হতে পারে, তার ( মায়ের) ব্যথাটা হয়তো বাসা থেকে শুরু হলো। ব্যথা উঠার পর মা এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলেন। এটা একটা ব্যাপার হতে পারে। আর ব্যথা উঠা মানেই কিন্তু প্রসব হয়ে যাওয়া না। অনেকের একটা ভুল ধারনা আছে। তারা ভাবেন, আমি উত্তরায় থাকি, নারায়নগঞ্জ থাকি। ব্যথা উঠলে আমি কীভাবে এতদূরে আসব? আমি যেটা বলি ব্যথা উঠার পরে যে ফেজটা তাকে আমরা দু`ভাগে ভাগ করি। একটা হলো ল্যাটেন্ট ফেজ, আরেকটা হলো এ্যাক্টিভ ফেজ।

এ্যাক্টিভ ফেজটা মোটামুটি ফিক্সড। ছয় থেকে সাত ঘন্টা। বাট ল্যাটেন্ট ফেজ কিন্তু ফিক্সড না। সেক্ষেত্রে মায়ের যখন ব্যথা উঠবে তখন সে মোটামুটি সাত আট ঘন্টা সময় পায় হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। কাজেই সে দূর থেকেও আমাদের এখানে আসতে পারে। এটা একটা দিক। আরেকটা দিক হতে পারে। তার ডেট অনুযায়ী সবকিছু ওকে। এরপরও ব্যথা উঠল না। আমরা সাত দিন অপেক্ষা করলাম। সেক্ষেত্রে আমরা তাকে হসপিটালে এ্যাডমিট করিয়ে মেডিসিনের মাধ্যমে ব্যথা উঠালাম। যখন সে ব্যথাটা ফিল করল, জরায়ুর মুখটা খুলতে থাকল তখন একটা পর্যায়ে এসে মা বলবে, না আমি আর ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। তখন আমরা তাকে ইপিডুরাল এ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে দিলাম।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ইপিডুরাল পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব হলে পরবর্তীতে কোন ধরণের পার্শ প্রক্রিক্রিয়া দেখা দেয় কি?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: এটা তো একটা লোকাল এ্যানেন্থেসিয়া। সমস্যা যতি কিছু হয়েই থাকে এ্যানেস্থেসিয়াকালে হতে পারে। হয়তো মায়ের ব্লাড প্রেসার ফল করতে পারে। বা এ্যানেন্থেসিয়া দেওয়ার পরও ৯০ ভাগ হয়তো ব্যথা মুক্ত হয়েও ১০ ভাগ ব্যথা করল। এরকম কিছু ব্যথা হতে পারে। তবে সেটা সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ম্যানেজ করে ফেলেন। এবং সত্যি কথা হচ্ছে এক্সপার্ট হ্যান্ডে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। প্রসবের পরে ডাক্তার শুধু এপিডুরাল টিউবটা বের করে নিয়ে আসেন। এরপর আর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ইপিডুরাল পদ্ধতিতে প্রসব কেমন ব্যায় সাপেক্ষ?

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: ইমপালস হাসপাতালে ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে সব মিলিয়ে ৪৫ - ৫০ হাজার টাকার মধ্যে খরচ পড়ে।

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি