ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রসবের পর ফুল বের না হলে কী করবেন: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৫, ৬ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১০:৫২, ৯ অক্টোবর ২০১৮

অন্তঃস্বত্ত্বা নারীর ডেলিভারি হয়ে গেলেই ঝুঁকি শেষ হয়ে যায় না। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা খুব সুন্দরভাকে ডেলিভারি হয়ে গেল। কিন্তু ফুলটা আর আসছে না। সেক্ষেত্রে আমাদের (ডাক্তার) হাতে সাধারণত কিছু মেথড থাকে যেগুলো দিয়ে আমরা চেষ্টা করি যাতে ফুলটা সহজে চলে আসে।

ফুল না আসার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে অন্ত:স্বত্ত্বার জরায়ুটা শিথিল থাকে। অর্থাৎ জরায়ুটা হার্ড না হওয়া। ফলে ফুলটা সেখান থেকে আলাদা হচ্ছে না। বেরও করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমরা কিছু মেডিসিন ব্যবহার করি জরায়ুটাকে হার্ড করার জন্য।

সেগুলো মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ওষুধ হচ্ছে অক্সিটোসিন। আমরা প্রসবের পরপরই ১০ ইউনিট অক্সিটোসিন ইনজেকশন মায়ের উরুতে দিয়ে দিই। এবং ফুলের সঙ্গে নাড়ীর যে অংশটা লেগে থাকে সেটাকে হালকা টেনে ধরে রাখি।

এভাবে ফুলটা ধরে রাখলে ধীরে ধীরে চলে আসে। তারপরও যদি ফুল না আসে তাহলে আমরা হাত দিয়ে টেনে ফুল বের করি।

তবে সাধারণত মায়েরা হাত দিয়ে বের করার জন্য আমাদেরকে অ্যালাউ করেনা। তখন আমাকে একজন এ্যানাস্থেটিকের সাহায্য নিতে হয়।

কিছুটা এ্যানাস্থেসিয়া করে মাকে ঘুম পাড়িয়ে হাত দিয়ে বের করে নিয়ে আসা যায় ফুলটা। যদি ডেলিভারিটা বাড়িতে হয় তাহলে এক্ষেত্রে অবশ্যই একটা ঝুঁকি থাকে। কারণ, এই অবস্থায় বাড়ি থেকে অন্ত:স্বত্ত্বাকে যদি হাসপাতাল পর্যন্ত আনা লাগে তাহলে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়। এর ফলে মা যখন হাসপাতালে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় তখন তার কোনো ব্লাড প্রেসার পাওয়া যায় না।

তার পালস্ পাওয়া যায় না। এটা একটা কন্ডিশন যেটাকে আমরা বলি `শক`। এই শক কন্ডিশনে যখন মা আসে তখন এটা মায়ের জন্য খুবই খারাপ অবস্থা। ওই অবস্থায় ফুল বের করার চেয়ে জরুরি হয় মাকে বাঁচানোর জন্য সঙ্গে সঙ্গে দু’তিন ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করা, রানিং স্যালাইন দেওয়া, অক্সিজেন দেওয়া।

`শক` এ চলে গেলে মায়ের কিডনি ডেমেজ হয়ে যায়। ফলে ইউরিন আউটপুট বন্ধ হয়ে যায়। তাই নল লাগিয়ে তাড়াতাড়ি ইউরিন আউটপুটের ব্যবস্থা করে আগে মাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেন চিকিৎসকরা। এর পরে যখন মা স্বাভাবিক হন, ব্লাড আমাদের হাতে আসে তখন আমরা এ্যানেস্থেসিস্টের হেল্প নিয়ে ফুল বের করি।

আসলে ফুল বের করা কঠিন কাজ না। আমাদের (ডাক্তার) জন্য এটা সহজ কাজ। তবে সেটা বাড়িতে প্রসব হলে বেশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে। হোম ডেলিভারিতে ফুল বের না হওয়া বিপজ্জনক!

যদিও আমাদের দেশে নারীরা অনেক সচেতন। কিন্তু গ্রামগঞ্জে অনেক নারী মনে করেন, প্র্যাগনেন্সির সময় ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা চেক আপের কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের দাদী- নানীদের যেভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে সেভাবেই হবে।

কিন্তু এই চিন্তা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন কেমন বা রক্তশূন্যতা আছে কি-না, সেগুলো নির্ণয় করা। যদি রক্তশুন্যতা থাকে তবে সন্তান ধারণের আট বা নয় মাসে সেটা পূরণ করে নিতে হবে। যদি সেটা পূরণ করতে না পারে, তাহলে প্রসবকালীন সময়ে বা প্রসবের পর পর যে ব্লিডিং সেই ব্লিডিংয়ে মাকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিতে নিতে মা মারাও যেতে পারেন। তাই পর্যাপ্ত খাবার দাবার, আয়রন ক্যাপসুল প্রয়োজনে ব্লাড দিয়ে মাকে আগেই রেড়ি করে রাখতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে মায়ের শরীরে কোন ব্লাডের ঘাটতি নাই। যাতে করে অন্তত কিছুটা ব্লিডিং সে সহ্য করতে পারে।

**লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার (এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস)। কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল। ও সহকারী অধ্যাপক, গাইনী, প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।

শ্রুতি লেখক: অালী অাদনান।

অা অা/ / এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি