ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জরায়ু ক্যান্সার বুঝার উপায় ও এর সঠিক চিকিৎসা কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১৬, ২২ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১১:০৭, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

আমাদের দেশে প্রতিবছর ৯ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।বিশেষ করে গ্রামের নারীরা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা দেওয়া তো দূরের কথা অন্যের কাছে এবিষয় শেয়ারও করে না। অনেক নারী চিকিৎসা না নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।

গ্রামের দারিদ্র ও অপরিচ্ছন্নরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। জরায়ু ক্যান্সারের বিভিন্ন দিক দিয়ে সাক্ষাতকার দিয়েছেন ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।

একুশে টিভি অনলাইন: জরায়ু ক্যান্সার কি?

ডা. মো. হাবিবুল্লাহ : সাধারণত জরায়ুর নিচের সরু অংশ যা জরায়ুর মুখ বা সারভিক্স বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। যোনিপথের ওপরের অংশ থেকে শুরু করে জরায়ুর মাঝামাঝি পর্যন্ত এই অংশটি বিস্তৃত। জরায়ু-মুখের ক্যান্সার বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের নারীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের শতকরা ৩০ ভাগই হচ্ছেন জরায়ু মুখের ক্যান্সারের শিকার।

একুশে টিভি অনলাইন: কি কি কারণে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে?

ডা. মো. হাবিবুল্লাহ : বিভিন্ন কারণে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাইরাসের কারণ। ভাইরাসের নাম হলো এইচ ডব্লিউ পি। এই ভাইরাস আক্রান্ত হলেও সব কিন্তু ক্যান্সার না। অনেক ক্ষেত্রে এই ভাইরাস চিকিৎসা ছাড়া ভাল হয়ে যায়। তবে এমন ভাইরাস দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। না হলে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এছাড়া অন্যান্য কারণেও জারায়ু ক্যান্সার হতে পারে। যেমন:

# ২টি বয়সে বেশি দেখা যায়৷ ৩৫ বছরে এবং ৫০-৫৫ বছরে৷

# অল্প বয়সে বিয়ে হলে (১৮ বছরের নিচে) বা যৌন মিলন করে থাকলে।

# ২০ বছরের নিচে গর্ভধারণ ও মা হওয়া।

# অধিক ও ঘনঘন সন্তান প্রসব।

# বহুগামিতা।

# স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং জননাঙ্গের অপরিচ্ছন্ন অবস্থা।

অপুষ্টি নিয়ে যদি কেউ জন্মগ্রহণ করে। বিভিন্ন রোগ জীবাণু দ্বারা জরায়ু বার বার আক্রান্ত হলেও জরায়ু ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকে, যেমন - হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস এবং হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস।

একুশে টিভি অনলাইন: জরায়ুতে ক্যান্সার আক্রান্ত হলে কি কি লক্ষ দেখা দিতে পারে?

ডা. মো. হাবিবুল্লাহ: প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের লক্ষণ নাও থাকতে পারে।  তবে নিচের লক্ষণগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়- অনিয়মিত ঋতুস্রাব হওয়া। ঋতু সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১ বছর পরেও রক্তস্রাব দেখা যাওয়া।

যৌনসঙ্গমের পর রক্তস্রাব হওয়া। যোনিপথে বাদামি অথবা রক্তমিশ্রিত স্রাবের আধিক্য দেখা দেওয়া।

অনেক সময় স্বামী স্ত্রী যৌনসঙ্গমের কারণে ব্যাথা হয়। অনেক সময় দেখা যা কারণ ছাড়া ব্যাথা দেখা দেয়।

সাদা দুর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব হওয়া। একদিন বা একমাসে হঠাৎ করে জরায়ু-মুখে ক্যান্সার হয় না। জরায়ু মুখ আবরণীর কোষগুলোতে বিভিন্ন কারণে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে ক্যান্সারের রূপ নেয় এবং এই পরিবর্তন হতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। আমাদের দেশে জরায়ু-মুখ নিয়মিত পরীক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা এখনও গড়ে উঠেনি। এর ফলে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শতকরা ৮০ ভাগ রোগীরা আসেন শেষ পর্যায়ে এবং ইতিমধ্যে ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় এবং অপারেশন করা আর সম্ভব হয় না।

একুশে টিভি অনলাইন: এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে করণীয় কি?

ডা. মো. হাবিবুল্লাহ: রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধ অর্থাৎ রোগটা হতে না দেওয়া হলো বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও সকল রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সম্ভব হয় না, তবে জরায়ু-মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মী সহজেই জরায়ু-মুখ দেখতে এবং পরীক্ষা করতে পারেন। ক্যান্সারপূর্ব অবস্থাধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেবার প্রয়োজন হয় না এবং চিকিৎসার পরও সন্তান ধারণ সম্ভব। ভিজুয়াল ইন্সপেকশন অফ ছারভিক্স উইথ এছিটিক এসিড (VIA) এই পদ্ধতির জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব –ক্যান্সার হওয়ার আগে খালি চোখে জরায়ু মুখে কোনরকম ক্ষত বা চাকা দেখা যাবে না৷ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে পদ্ধতিতে জরায়ু মুখের ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা শনাক্ত করা হয় তাকে ভায়া বলে৷

একুশে টিভি অনলাইন: এ রোগের চিকিৎসা কি?

ডা. মো. হাবিবুল্লাহ: দ্রুত রোগ ধরা পড়লে অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু দেরি হয়ে গেলে রোগ ছড়িয়ে পরবে৷ কেমোথেরাপি এবং রেডিও থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যায়। যদি কেউ আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে আসে তাহলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নিলে শতাভাগ মুক্তি লাভ করা সম্ভব।

একুশে টিভি অনলাইন: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. মো. হাবিবুল্লাহ: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি