ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অল্প বয়সের বিয়েতে জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে : ডা. কাজী ফয়েজা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৯, ২২ নভেম্বর ২০১৮

একসময় এদেশে বাল্যবিয়ে খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল। আজকের বাংলাদেশে `গৌরীদান` হয়তো নেই, কিন্তু কিশোরী মেয়ে বিয়ে হওয়ার সংখ্যা কম নয়। এদেশে গ্রামাঞ্চলে অনেক অসচেতন অভিভাবক আছেন, যারা মনে করেন মেয়ের পিরিয়ড হওয়া মানেই সে বিয়ের উপযুক্ত বা সন্তান ধারনের উপযুক্ত। আমাদের দেশে একটা জনগোষ্ঠী আছেন, যারা মেয়ের পিরিয়ড হলেই ভাবেন, মেয়ে বড় হয়ে গেছে। তাকে বিয়ে দিতে হবে।

এর পেছনে দুটো কারণ আছে। একটা হলো বাবা-মায়েরা ভাবেন মেয়ে শারীরিকভাবে স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা করতে প্রস্তুত। অন্য কারণটা হলো নিরাপত্তাহীণতা। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট এর জন্য দায়ী। ফলে বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাকে তারা সহজ উপায় মনে করেন।

আমাদের দেশে একটা মেয়ের বিয়ের বয়স হচ্ছে আঠারো বছর। আসলে এই আঠারো হচ্ছে সর্বনিম্ন অর্থাৎ কমপক্ষে আঠারো বছর বিয়ের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা, সন্তান গর্ভে ধারণ- এসবের জন্য প্রস্তুত হতে আঠারো থেকে বিশ বছর লেগে যায়। একটা মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন আসার পর এই সময়ের মধ্যে সে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারে। কিন্তু এর আগে বিয়ে হলে সে শারীরিক বা মানসিক কোনভাবেই প্রস্তুত থাকে না।

অল্প বয়সে বিয়ে হলে শ্বশুর বাড়িতে তার মতামতের কোন মূল্য থাকে না। ধরুন, চৌদ্দ-পনের বছর বয়সে একটা মেয়ের বিয়ে হলো। সে হয়তো প্রেগন্যান্সি চাচ্ছে না। তার এই মতামত শ্বশুর বাড়িতে জানানোর মতো বা স্বামীকে বলার মতো ব্যক্তিত্ব তখনো তার হয় না। আবার একটা জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সে নেওয়ার মতো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা তার থাকে না। ফলে সে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়।

আমরা যেটা দেখি, অল্প বয়সে যেসব মেয়েদের বিয়ে হয় বা যেসব মেয়েরা অল্প বয়সে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায় তাদের জরায়ু মুখে ক্যান্সার বেশি হয়। কারণ, অল্প বয়সে জরায়ুমুখের যে সেল সেগুলোর গঠন এমন থাকে, মেলামেশার ফলে সেগুলোতে পরিবর্তন আসে। এগুলো সহজে ক্যান্সারের দিকে রূপ নেয়।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে আঠারো বছরের আগে যদি সে মা হয়, আমরা যেটাকে `পেলভিস` বলি বা মায়ের জরায়ুটা হাড়ের যে কাঠামোর ভেতর থাকে এই হাড়ের গঠনগুলো তখন পর্যন্ত পরিপূর্ণ হয় না। ফলে আঠারোর নিচে একটা মেয়ে যখন কনসিভ করে তখন তার পেলভিস এতোটাই নাজুক থাকে, ফলে এদের ডেলিভারীতে অনেক বেশি সময় লাগে। আবার কারো কারো বাচ্চা ডেলিভারি প্রসেসে গিয়ে আটকে যায়। অর্থাৎ ডেলিভারিটা আর স্বাভাবিক ডেলিভারি হয় না। এসব মায়েদের সিজারে সময় বেশি লাগে। ডেলিভারির পর মায়ের ব্লিডিয়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। তখন মেয়েটা সবদিক থেকে আনফিট হয়।

এজন্য আমরা বলি, বিয়ের আগে মেয়ের বয়স খেয়াল করা উচিৎ। যে ছেলে বিয়ে করছে তারও মেয়ের বয়সটা দেখা উচিৎ। আমাদের দেশে এখনো অনেকে চৌদ্দ-পনের বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আইনের ভয়ে কাগজে কলমে দেখাচ্ছে মেয়ের বয়স আঠারো। একজন ডাক্তার হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত এমন অনেক রোগী পাচ্ছি।

লেখক: কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল।

আ আ// এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি